ইনসাইড থট

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কালো দিবস- সবিনয়ে কিছু প্রশ্ন?


প্রকাশ: 23/08/2022


Thumbnail

২৩ আগস্ট ২০০৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিবাস থেকে সেনাবাহিনীর অফিসাররা শিক্ষকদেরকে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন চোখ বেঁধে। সেই থেকে বিগত ১৫ বছর দিনটি কালো দিবস হিসেবে পালন করে আসছে। এর আগে ২০ আগস্ট ২০০৭ বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে একটি বাকবিতন্ডা ও কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি জরুরি আইন জারির পরে সেনাবাহিনী সারা দেশে বিভিন্ন স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করে এবং দেশের রাজনৈতিক নৈরাজ্যের সুযোগ নিয়ে সেনাসদস্যরা কেউ কেউ শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে নিপীড়ন, নির্যাতন করতে থাকে। উচ্চ পর্যায়ের ব্যক্তিদের মাঝে সামরিক রাজনীতির আভাস ছাত্র-শিক্ষকরা দেখতে পায়।

শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো সারা দেশে। আজকের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মিথ্যা সব মামলা দিয়ে গ্রেফতার ও জেলে নেয়া হয়েছিল। সেই শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ থেকে মুক্তির উপায় খুঁজছিলো বাংলাদেশ। অস্বাভাবিক পরিস্থিতির উপস্থিতি সকলকে অনুপ্রাণিত করছিলো বোধহয়। সারা দেশবাসী চিরাচরিত ভাবে তাকিয়ে ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদের মুখের দিকে। একটা কিছু করো যদি সামরিক শাসনের অবসান চাও। তারা যেভাবে স্বাধীনতাকে শৃঙ্খলিত করেছে সেটা থেকে মুক্ত হও। ২০ আগস্ট এর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনাটি সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। মইন তার ক্ষমতা দখলের বাসনাকে দমিত করলেও শিক্ষকদের গ্রেফতারের করে নিজের শক্তি প্রদর্শনের চেষ্টা করেন। আরও শক্তভাবে তিনি দেশ চালাবার চেষ্টা করেন। কিন্তু স্বাধীনতা প্রিয় বাঙালি ব্রিটিশ, পাকিস্তানিদের তাড়িয়েছে। তারা জিয়া এরশাদকে বিতাড়ন করেছে। সেই জনগণকে সামরিক কায়দায় দমন করে ক্ষমতায় থাকার বাসনা চুরমার করে দেয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০ ও ২৩ আগস্টের ঘটনা। স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের বিজয় অর্জিত হয় ২৯ ডিসেম্বর ২০০৮ সুস্থ একটি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে।

নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার পর অনেকেরই আশা ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষার আমূল পরিবর্তন হবে এবার। গণতন্ত্রের উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের অবদানকে সরকার যথাযথভাবে মূল্যায়ন করবে। আমাদের সেই আশা কি পূরণ হয়েছে?

যদি আমরা ঢাকা সেনানিবাসে যাই তবে সেখানে আছে আরেক বাংলাদেশ। কেন সেখানে শৃঙ্খলা আছে আর আছে উন্নয়ন। আর কেন গণতন্ত্রের সূতিকাগার শতবর্ষেও অবহেলিত?

আমাদের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সন্তানেরা যায় সেনাবাহিনীর স্কুলে। কিন্তু কেন? আমাদের শিক্ষকরা স্বতন্ত্র পে স্কেল চেয়েছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নির্বাচন ঘোষণায় সেটা উল্লেখ ছিল। তবে কেন ২০১৫ সালের বেতন স্কেল এ শিক্ষকদেরকে দুই ধাপ নামিয়ে দেয়া হলো?

পত্রিকার পাতায় দেখি গণরুমের খবর। কেন আজও আমরা সকল ছাত্রের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করতে পারিনি? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন একটি বড় পাঠাগার বিগত ৪০ বছর নির্মিত হয়নি?

১৯৮২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে হলে সিট পাইনি। তখন হলদখল রাজনীতি ছিল। ফলে হলে সিট পেতাম না। বন্ধুরা ছাত্রদল এবং ছাত্র সমাজের খাতায় নাম লিখিয়ে সিট পেয়ে যেত। আমার প্রয়াত বন্ধু তার সিটে আমাকে থাকতে দিয়েছিলো। এভাবে কেটেছে তিন বছর। একদিন আমাদের হলের আবাসিক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক আসাদুজ্জামান স্যার আমার সিট নেই জেনে হলের অফিসে যেতে বললেন এবং তিনি তক্ষনি একটি সিট আমাকে দিলেন। ৪০ বছরে কেন আজ ছাত্রদেরকে গণরুমে থাকতে হবে?

সমাজবিজ্ঞানের আ ক ম অধ্যাপক জামাল উদ্দিন আমার রুমে সিট পেলো। কিন্তু ছাত্রদলের নেতা তাকে উঠতে দেবে না। আমাকে অনুরোধ করলো কিছু একটা করতে। আমার বিভাগের ছাত্র। আমার অনুরোধে সে জামালকে রুমে থাকতে দিলো। আমার প্রশ্ন আমাদের এতো এতো উন্নয়ন- কিন্তু আজও কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা গণরুমে থাকে এবং নিপীড়নের শিকার হয়?

সেদিন গিয়েছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে। সেখানে একটি ছোট্ট রুমে বঙ্গবন্ধু কর্নার করা হয়েছে। কেন আমরা একটি বিশাল লাইব্রেরি করতে পারিনি বঙ্গবন্ধুর নামে? আমাদের সমাজ র‍্যাংকিং নিয়ে ভাবে। সেটা খুবই আশার কথা। কিন্তু তারা কেন বলে না- গণরুম আর বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়নকে পাশের জাদুঘরে পাঠিয়ে দাও! তারা কেন বলে না- শিক্ষকদের মর্যাদা দাও স্কুলে-বিশ্ববিদ্যালয়ে যাতে ভালো শিক্ষক পাওয়া যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন ও পদ সচিবদের নিচের রেখে এবং স্কুল শিক্ষকদেরকে কেরানির বেতন ও পদ দিয়ে প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব নয়। গণরুম থেকে মুক্তি যেদিন হবে, যেদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা আবাসনের জন্য নিপীড়নের শিকার হবে না, যেদিন হলে একটি সিটের জন্য রাজনীতি করতে হবে না সেদিন বলা যাবে আমাদের প্রকৃত উন্নয়ন হয়েছে। সেদিন আমাদের প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জিত হবে যে স্বাধীনতার কথা বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন।

আমাদের অনেক সাফল্যও আছে। যেমন নিজেদের টাকায় আমাদের সরকার পদ্মা সেতু বানিয়েছে। ১৯৯০ সালে যেখানে ৬ টি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল এখন সেখানে ৫৪ টি। কিন্তু কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণতা অর্জন করতে পারেনি। তাই আমাদের সন্তানদেরকে গণরুমে নির্যাতিত হতে হয়। এই নির্যাতন শেষ হবে কি?বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হোক যাতে তারা সকলের জন্য আবাসন ব্যবস্থা করতে পারে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আশ্রায়ণ প্রকল্পে গৃহহীনদেরকে বাড়ি বানিয়ে দিচ্ছেন। বিনীতভাবে জানতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আপনি কি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জন্য পর্যাপ্ত হল বানিয়ে দিবেন কি? গণতন্ত্রের মুক্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ছাত্ররা যে মহান অবদান রেখেছে তার বিনিময়ে তারা হলে অন্তত: একটি সিট পেতে পারে কি? ছাত্রদের এই সামান্য দাবিটি কি জাতির কাছে খুবই ভারী? প্লিজ!


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭