জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান নাছিমা বেগম বলেছেন, মানবাধিকার বলতে শুধু গুম-খুন নয়। এটি আরও বিস্তৃত বিষয়। দেশে মানবাধিকার নিয়ে আমরা যে সমস্ত কাজ করছি সেগুলো সম্পর্কে আমরা জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে অবহিত করেছি। আমাদের সাথে যেদিন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে বৈঠক হয়েছিল তার আগের দিন তিনি কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাস্প ঘুরে এসেছেন। সেজন্য আমরা উনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে উনি কি ধরনের ভূমিকা রাখতে পারেন সে ব্যাপারে আমরা সুস্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত পাইনি।
সম্প্রতি জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। সফরে এসে তিনি বৈঠক করেছিলেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সঙ্গেও। এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় নাছিমা বেগম এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য নাছিমা বেগম এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব প্রতিবেদক শান্ত সিংহ।
নাছিমা বেগম বলেন, সফর শেষে ফিরে যাওয়ার আগে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংক্রান্ত হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে কোনো কথাই বলেননি। যেটা আমরা উনার কাছ থেকে আশা করেছিলাম। রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের তো একটা দায়িত্ব আছে। রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রেও তো মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হয়েছে। তারা নিজ দেশে যেতে পারছেন না।
মিশেল ব্যাচেলেটের মতে, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নানা অভিযোগ তদন্তে একটি স্বাধীন কমিশন গঠন করা প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো অভিযোগগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো গুরুত্ব দিয়ে অনুসন্ধান করা প্রয়োজন। আমাদের কাছে যে সমস্ত অভিযোগগুলো আসে আমরা কিন্তু দেশের আইন অনুসারে সেগুলো যাচাই বাচাই করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন চাই। সরকারের প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট না হলে আমরা আমাদের কমিশনের সুপারিশ দেই। সে বিবেচনায় আলাদা তদন্ত কমিশন গঠনের যে সুপারিশ মিশেল ব্যাচেলেট করেছেন তার জন্য নতুন করে আলাদা কোনো কমিশন গঠন করা প্রয়োজন নেই বলে আমি মনে করি। এখন যে কমিশন আছে সে কমিশনকেই আরও বেশি শক্তিশালী করা যেতে পারে। যেমন এখন আমরা সরকারের কাছে প্রতিবেদন চাই। আমরা যদি সরাসরি তদন্ত করার এখতিয়ার পাই তাহলে কমিশন আরও অনেক বেশি শক্তিশালী হবে। তাহলে কমিশন অনেক বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে।
দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগের ব্যাপারে তিনি বলেন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পুরো কার্যক্রম সম্পর্কে না জানার কারণে কমিশনের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে। যদি তারা জানতো তাহলে হয়তো এ ধরনের অভিযোগ করতো না। আমাদের কাছে যে সমস্ত অভিযোগ আসে আমরা সেগুলোর যথার্থ সমাধান করে থাকি। সরকারের প্রতিবেদনে আমরা সন্তুষ্ট না হলে ভিকটিমকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।