কালার ইনসাইড

সরকারি অনুদানের টাকা নিয়ে প্রযোজকের নয়-ছয়


প্রকাশ: 24/08/2022


Thumbnail

সরকারি অনুদানের নির্মাতা মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের ‘আশীর্বাদ’ ছবিটি মুক্তির আগেই নানা কারণে উঠে এসেছে আলোচনায়। ছবিটির সহ-প্রযোজক নানা ধরণের অভিযোগ করেছিলেন ছবির নায়ক-নায়িকাকে নিয়ে। পাশাপাশি ছবির নির্মাতা, নায়ক-নায়িকাও সহ-প্রযোজকের নানা অনগতি নিয়েও নানা কথা বলেছেন। শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষই মামলা করবেন বলে জানিয়েছে। 

এদিকে মাহি মিথ্যা অভিযোগ ও মানহানীকর মন্তব্যের প্রতিবাদে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিতে সহ-প্রযোজকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে সহ-প্রযোজকও গতকাল ফের সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

‘আশীর্বাদ’ ছবির সহ-প্রযোজক জেনিফার ফেরদৌস অন্য প্রযোজকদের নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক আমার সর্বনাশ করেছেন। তাকে আমি এ পর্যন্ত ছবির বাইরে বোন হিসেবে তার বিয়েতে, মায়ের অপারেশনে, নানা সমস্যায় আমার ক্ষমতা অনুযায়ী প্রতি মাসে কম-বেশি টাকা দিয়েছে। পরিচালক যদি দু’মুখো সাপের কাজ করে তাহলে আমার কিছু ব্যক্ত করার নেই। নতুন প্রযোজক বলে কী আমাকে ছিঁড়ে খাবে? আমার কী কোনো ভাই ব্রাদার নেই। ব্যাকগ্রাউন্ড নেই।

তিনি বলেন, আমার যে ক্ষতি হয়েছে এজন্য দুদিন আগেই মামলা করতাম। তিনদিন আগে ৩০টার মতো হল ছবি মুক্তি দেওয়ার জন্য ফোন দিয়েছিল। এখন আমি ৯টা হলও পাচ্ছি না। এ ক্ষতিপূরণ পরিচালক, রোশন, মাহিকে দিতে হবে। আমি অবশ্যই মামলা করবো। এটা ব্যবসার টাকা নয়, এটা সরকারি অনুদানের ছবি। তারা এটা নিয়ে ফাজলামি করতে পারে না। তাদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

প্রকাশ্যে ইউটিউবারদের সহায়তায় অপ্রকাশযোগ্য ভাষায় শিল্পীদ্বয়কে অপদস্থ করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সেন্সরবোর্ডের সদস্য ও শক্তিমান অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস। তিনি বলেন, এটা খুবই বাজে বিষয়। ঘটনা যাই ঘটুক এটা নিজেদের মধ্যে বসে সমাধান করা যেতো কিন্তু প্রকাশ্যে একজন প্রযোজক এভাবে শিল্পীদের ব্যক্তিজীবন নিয়ে অপ্রীতিকর কথা বলতে পারেন না। এই অসম্মান সকল শিল্পীদের। মানুষ প্রযোজক নয় শিল্পী দেখেই রিয়েক্ট করেন, তাকে সম্মান না জানালে দর্শক কেন সম্মান করবে? 

অপরদিকে এ নিয়ে পরিচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহীন খানও বিব্রত। তিনি বলেন, দু-একদিনের মধ্যেই আশা করছি ঝামেলা মিটে যাবে।

এদিকে অনুসন্ধানে দেখা গেছে ৬০ লাখ টাকার অনুদানের সিনেমায় একমাত্র মাহি-রোশান ছাড়া তেমন কেউ পারিশ্রমিক পাননি। ছবিতে মাহি পারিশ্রমিক পাঁচ লাখ (পোশাক এক লাখ), রোশান এক লাখ, পরিচালকসহ অন্যান্য টেকনিশিয়ানস দুই লাখ। মোট ১৪ দিন শুটিং করা হয়েছে। এরমধ্যে ঢাকায় ছয়দিন (দুই লাখ), আটদিন আউট ডোর (৫০ হাজার হিসেবে চার লাখ), আবহ সংগীত, কালার, ভিএফএক্স, ডাবিং এবং গানে খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা। এরমধ্যে দুটি গানে একটিতে পারিশ্রমিক ৩০ হাজার দিলেও ইমন সাহাকে পারিশ্রমিক দেননি। এ সিনেমা শুটিংকালে প্রযোজক জেনিফার ও ইমন সাহার মধ্যে প্রেমের গুঞ্জন গণমাধ্যমে বহুল পঠিত। পাশাপাশি ছবির সংশ্লিষ্ট আরও অনেকেই বলছেন এই শ-প্রযোজক তাঁদের সম্মানিও দেয়নি। যা পরে নির্মাতার পকেট থেকে দেয়া হয়েছে। 

এছাড়া অভিযোগ উঠেছে অটিস্টিক স্কুল দেখাতে মোহাম্মদপুর বসিলায় অবস্থিত শিশু পুর্ণবাসন কেন্দ্র ব্যবহার করা হলেও সেখানে কোনো প্রকারে সম্মানি দেওয়া হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

এ নিয়ে ছবির প্রযোজক মোস্তাফিজুর রহমান মানিককে প্রশ্ন করা হলেও তিনি কিছু বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এদিকে চলচ্চিত্র পাড়ায় এই সহ-প্রযোজকে নিয়ে শোনা যাচ্ছে ভিন্ন কথা। মুক্তির আগেই বেশ মোটা অংকের টাকা ঘরে উঠিয়েছেন এই সহ-প্রযোজক। সিনেমাটি ঈগল, বসুন্ধরা এবং নবযাত্রা থেকে ৩৫ লাখ টাকা আয় করেছে। তাতে দেখা গেছে ৭৫ লাখ টাকার ওপর সিনেমাটি মুনাফা করেছে যা এককভাবে সিনেমাটির প্রযোজক জেনিফারের পকেটে।

এ নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার চাইলে যে কোনো সময় অডিট করা সাপেক্ষে হিসাব চাইতে পারে। শুধু ‘আর্শীবাদ’ নয়  আরও বেশ কয়েকটি সিনেমার ব্যাপারেও আমাদের কাছে অভিযোগ আছে। সময় মতো তাদের তলব করা হবে। 

এদিকে ছবিটি সহ-প্রযোজক জানিয়েছেন ছবিটি বেশ ভালো হয়েছে। তবে সেন্সর বোর্ড সূত্রে জানা গিয়েছে ছবিটি তেমন মান সম্মত হয়নি। কিন্তু বিভিন্ন কিছু বিষয় বিবেচনা করে ছাড় পত্র দেয়া হয়েছে। 

গতকাল নির্মাতা ও শিল্পীদের নিয়ে অনেক প্রযোজকের নোংরা মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন অনেকেই। অনেক নির্মাতা ও শিল্পী ফেসবুকে নানা পোষ্ট দিয়ে এর প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭