তখন ভোর পৌনে ৫ টা। কিছুক্ষণের মধ্যেই ঢাকা ছাড়বেন আসরাফুল। চুয়াডাঙ্গা থেকে ফুল কপি নিয়ে এসেছিলেন তিনি। বিক্রি শেষ হয়েছে অনেক আগেই। লেনদেনের ঝামেলা শেষ করতে একটু সময় লাগালো যা। জানালেন প্রতি পিস ফুল কপি ১৫ টাকা দামে বিক্রি করেছেন।
কথা শেষ করে একটু ভিতরে ঢুকতেই চোখে পড়লো কয়েকটি মাঝারি আকারের ট্রাক। প্রতিটিই ফুল কপি দিয়ে ভরা। কেউ ট্রাক থেকে ফুল কপি নামিয়ে পাতা পরিষ্কার করেছেন, কেউ চিল্লাছেন ১৫ টাকা পিস বলে। দাম জিজ্ঞাসা করতে প্রশ্ন কতোগুলো কিনবেন। জানালেন প্রতি পিস ১৫ টাকা দরে বিক্রি করছেন তারা।
বলছি রাজধানীতে কাচাঁবাজারের আড়ত কারওয়ান বাজারের কথা। জানা যায় রাত ১২ টার পরপরই আড়তে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে সবজিবাহী ট্রাকগুলো আসতে শুরু করে। বেচাকেনা চলে সকাল অবদি। পুরো বাজার ঘুরে দেখা যায় সবাই পাল্লা হিসেবে পাইকারি দামে সবজি বিক্রি করছেন। কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় খুচরা বিক্রি করা হচ্ছে।
টমেটো প্রতি পাল্লা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকা থেকে ৪০০ টাকার মধ্যে। সে হিসেবে প্রতি কেজি দাম হয় ৭৬ টাকা থেকে ৮০ টাকা। কাচাঁ মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকা দরে, কেজি প্রতি দাম আসে ৬৪ টাকা। শসা ৩৫০ টাকা। প্রতি কেজি ৭০ টাকা, বেগুন ২২০ টাকা। যা প্রতি কেজিতে হয় ৪৪ টাকা। কচু ১৪০ যা কেজিতে আসে ২৮ টাকা। পেপেঁ ৫০ টাকা। প্রতি কেজিতে দাম আসে ১০ টাকা। বরবটি প্রতি কেজি ৫০ টাকা। আলু প্রতি পাচঁ কেজি ১২০ টাকা। সীম প্রতি কেজি ১০০ টাকা, করলা প্রতি পাচঁ কেজি ২২০ টাকা, তাহলে প্রতি কেজি হয় ৪৪ টাকা। লাল শাঁক প্রতি আটি ৪ টাকা থেকে ৬ টাকা। পুঁইশাক প্রতি আটি ১৫ টাকা।
এসব সবজি আড়ত থেকে মাত্র এক হাত বদলি হয়ে রাজধানীর বাজারগুলোতে বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। বৃহস্পতিবার (২৫ আগস্ট) রাজধানীর শান্তিনগর বাজার, মালিবাগ এবং মতিঝিল কলোনী বাজার ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারে যে টমেটো প্রতি কেজি ৭৬ টাকা থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি হয় সে একই টমেটো এসমস্ত বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে ১২০ টাকা থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত। একইভাবে অন্যান্য সবজি যেমন- কারওয়ান বাজারে শসা ৬৪ টাকা কেজি অন্যবাজারে সেটা ৯০ টাকা কেজি। ১০ টাকা দামের পেপেঁর কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা, ৫০ টাকা কেজির বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। যে ফুল কপি কারওয়ান বাজারে প্রতি পিস ১৫ টাকা হাত বদলে একই ফুল কপি প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা পিস। প্রায় প্রতিটি সবজির ক্ষেত্রেই দামের এই অস্বাভাবিক চিত্র পাওয়া গেছে।
এ নিয়ে শান্তিনগর বাজারের সবজি বিক্রিতা সাঈদ আলমের সঙ্গে কথা হয়। দামে এই তারতম্যের কারণ জানতে চাইলে তিনি বাংলা ইনসাইডারকে বলেন হিডেন কস্টের কথা। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজার থেকে বের হওয়ার পথেই এই হিডেন কস্ট ব্যয় করতে চায়। সেটা কত জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। লেবার খরচ এবং মাল কিনে রাখার জন্যও জায়গা কিনার কথা জানান তিনি।
কারওয়ান বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা দেলোয়ার হোসেন বলেন, পাইকারি বাজারে সবজির দাম উঠা-নামা করে। আমরা পাইকারি বাজার থেকে সবজি কিনে পরিবহন খচরসহ হিসাব করে কিছু লাভে খুচরা বাজারে বিক্রি করি।