ইনসাইড গ্রাউন্ড

শুধু কোচ দিয়ে হয় না

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 19/01/2018


Thumbnail

শ্রীলঙ্কা দলের তরী তখন প্রায় ডুবু ডুবু অবস্থা। মিরপুরের মাঠ তখন বিজয় উল্লাসের অপেক্ষায়। লঙ্কানদের নাক জাগিয়ে ভেসে থাকার লড়াইটা কতক্ষণ স্থায়ী হয় সেটাই দেখার অপেক্ষায় সবাই। এমন সময় টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়লেন লঙ্কান কোচ হাথুরুসিংহে। অনেকক্ষণ পর হালকা একটু শুষ্ক হাসি দিলেন হাথুরু। সেই হাঁসির ভাষাটা পড়তে একটুও আসুবিধা হওয়ার কথা নয় কারো। তখন বেশ অসহায়ের মতো লাগছিল তাঁকে।

আগের ম্যাচে ১২ রানে হারিয়ে যে চিতা সাজিয়েছিল জিম্বাবুয়ে, সেই চিতায় যেন শুক্রবার আগুন দিলেন টাইগাররা। আর সেই আগুনে ছাই হয়ে গেলো শ্রীলঙ্কা, পুড়লেন হাথুরু নিজেও। লিজেন্ড কোচ হিসেবে পরিচিত হাথুরু তাঁর প্রবল ভাবগাম্ভীর্য সমেত যেন ধূলিস্যাৎ হয়ে গেলেন।

হাথুরুসিংহেকে মেরী শেলীর ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন’হিসেবে কল্পনা করে এরই মধ্যে নানা রকম জল্পনা-কল্পনায় মেতে উঠেছিলো দুই দেশের সমর্থকরা। এই হাথুরুসিংহে বদলে দিবেন শ্রীলঙ্কাকে এমন ধারণা এখন অনেকটা আকাশ কুসুম কল্পনার মতো মনে হচ্ছে অনেকের কাছেই। বদলে যাওয়াতো দূরে থাক উল্টো অসহায় আত্মসমর্পন দেখা গেলো লঙ্কান ক্রিকেটারদের।

২২ গজের লড়াইয়ে শুধু ভালো গুরু থাকলেই চলেনা থাকতে হয় লড়াকু খেলোয়াড়ও। শুক্রবার বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ম্যাচের পর এই সত্যিটাই সামনে চলে এসেছে। গুরুর সাধনালব্ধ জ্ঞানের সঙ্গে শীষ্যদের অধ্যবসায় এবং লড়াকু মনোভাবের মেলবন্ধন ঘটলে তবেই উড়ে বিজয় কেতন। কিন্তু বর্তমান লঙ্কান দলে এই সমন্বয়ের বড্ড অভাব দেখা গেছে।  

হাথুরু যখন টাইগারদের দায়িত্ব নিয়েছিলো তখন এই দলটি আফগানিস্তানের কাছেও হেরেছিল। টানা পরাজয়ের স্বাদ পাওয়া সেই দলটি হাথুরুর অধীনে বিশ্বমানের এক দলে পরিণত হয়। কিন্তু এই বাংলাদেশ দলের ভিত হাথুরু গড়েন নি। বরং তিনি দায়িত্ব নেওয়ার সময়ে পেয়েছিলেন শক্তপোক্ত সম্ভাবনাময় এক দল। যে দলে ছিলেন সাকিব আল হাসানের মতো বিশ্বসেরা এক অলরাউন্ডার এবং মাশরাফির মতো বিশ্বমানের এক নেতা।

তামিম ইকবালের মতো বোলারদের মনে আতঙ্ক ছড়ানো ওপেনার পেয়েছিলেন। মুশফিক-মাহমুদুল্লাহর মতো প্রতিশ্রুতিশীল খেলোয়াড়দের সঙ্গে ছিলেন সাব্বির, সৌম্য, মুস্তাফিজদের মতো সম্ভাবনাময় খেলোয়াড়ের বিশাল সমারোহ। তারই ফলশ্রুতিতে টাইগারদের হুংকারে কেঁপে উঠেছে ক্রিকেট বিশ্ব। হাথুরুসিংহে হয়েছেন মহিমান্বিত।

কোচ হিসেবে হাথুরুর মেধা নিয়ে সন্দেহ নেই কারো মনে। কিন্তু তাঁর কাজটা সহজ করে দিয়েছিলেন টাইগাররা। তাছাড়া টাইগারদের কোচ হিসেবে অবাধ স্বাধীনতা পেয়েছিলেন হাথুরু। হাথুরুর মেধার সঙ্গে প্রতিভাবান টাইগারদের সমন্বয়ের ফলে বিশ্বমানের দলে পরিনত হয় বাংলাদেশ।

দায়িত্ব নেওয়ার পর হাথুরুর প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল শ্রীলঙ্কা দলকে দাঁড় করানো। কিন্তু সেই লক্ষ্যে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচেই বড় ধাক্কা খেলেন এই লঙ্কান কোচ। দায়িত্ব নিয়েই দলে বড় রদ বদল করেন হাথুরু। দলের নেতৃত্বে আবার ফিরিয়ে আনেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুসকে। ১৬ সদস্যের দলে ফিরিয়ে আনা হয় টেস্ট অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল, কুশল মেন্ডিস এবং লেগ-স্পিনার ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে। কিন্তু হাথুরুর হিসেবটা ক্রমেই জটিল করে ফেলেছেন তাঁর শীষ্যরা।

‘গুরু মারা বিদ্যা’ বলে বাংলায় একটা কথা প্রচলিত রয়েছে। আজ যেন মাশরাফিরা সেই বিদ্যার চর্চা করলেন হাথুরুর উপর। গুরুই যদি শেষ কথা হতো তাহলে যুগে যুগে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হতোনা। নতুন মহামানবের দেখা পেতনা ধরণী। ক্রিকেটে ভালো কোচের বিকল্প নেই একথা যেমন সত্য, তেমনি সত্য কোচের চিত্রনাট্যকে মাঠের লড়াইয়ে প্রাণের ছোঁয়া দেন খেলোয়াড়রা। কোচ ছাড়া খেলতে নেমে হাথুরুকে শুক্রবারের ম্যাচে এমন বার্তাই দিয়েছেন টাইগাররা।

 

বাংলা ইনসাইডার/আরকে

 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭