কালার ইনসাইড

বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সেরা ওয়েব সিরিজ ‘কারাগার’?


প্রকাশ: 25/08/2022


Thumbnail

আকাশনগর সেন্ট্রাল জেলে কয়েদী সংখ্যা এক রাতে গণনা করে একজন বেশি পাওয়া যায়। এমনিতেই জেলার মোস্তাক সাহেব জেলে এক নারী ঢোকার স্ক্যান্ডালে উপরের চাপে আছেন, তার মধ্যে যুক্ত হয় ১৪৫ নাম্বার সেলের বোবা এক মিস্ট্রিম্যান। যে সেল গত পাঁচ দশক ধরে বন্ধ ছিল! সে কে, কোথা থেকে এলো, তার আগমন ও উপস্থিতি জানতে মোস্তাক সাহেব সাহায্য নেয় ডিবিতে থাকা বন্ধু আশফাকের। আবার আশফাক সাইন ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহারে মিস্ট্রিম্যানের সাথে যোগাযোগ করতে যুক্ত করে মাহাকে। এই জেলের ভেতর ও বাইরের চরিত্রগুলোকে কিভাবে মিস্ট্রিম্যান প্রভাবিত করছে সেটাই সিরিজের প্রথম পার্টের গল্প। সব চরিত্রের পেছনে একটি করে গল্প রেখেছেন পরিচালক।

দর্শকদের মতে বাংলাদেশের এখন পর্যন্ত সেরা ওয়েব সিরিজ কারাগার! ভাবছেন কি এমন আছে এতে? প্রথম দৃশ্য থেকে শেষ দৃশ্য অবধি একবারও মনে হবেনা এটা বাস্তবে ঘটছে না। আপনি যে একটি ওয়েব সিরিজ দেখছেন সেটা ভুলেই যাবেন। এর কারণ সিনেমাটোগ্রাফি, ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, সবার অভিনয়, সংলাপ, এক্সপ্রেশন, গল্প বর্ণনা সবকিছুই একেবারে ন্যাচারাল ছিল। কয়েদীদের জেলার বা পুলিশের সাথে ঠাট্টা মশকরা বা নতুন কয়েদীর আবির্ভাবে স্লেজিং করা, রাস্তায় বাইকের সামনে ভেড়া, গাড়ির সামনে বিড়াল এরকম ছোটখাটো অনেক ব্যাপারও পর্দায় এত সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যা সিরিজটিকে একেবারে জীবন্ত করে তুলেছে। পরিচালক বিড়াল থেকে শুরু করে সব অভিনেতা-অভিনেত্রীদের থেকে তাদের সেরা অভিনয়টা বের করে এনেছেন।



জেলার চরিত্রে ইন্তেখাব দিনার ছিলেন একেবারে পারফেক্ট। তিনি একই সাথে কর্তব্যপরায়ণ জেলার, বসের সামনে বদলীর ভয়ে ভীত, স্নেহপরায়ণ পিতা, সহকর্মীদের প্রতি দয়াশীল এবং নমনীয় স্বামীর ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করে গেছেন। তিনি যে একজন জাত অভিনেতা তা প্রমাণ করেছেন। 

আফজাল চৌধুরী তিনি সিরিজের শুরুটাকেই অন্যমাত্রায় নিয়ে গেছেন, এমনই সাবলীল ছিলেন অভিনয়ে।



তাসনিয়া ফারিনের অভিব্যক্তি সাবলীল থাকলেও কিছু জায়গায় আরও ভালো করতে পারতেন। প্রত্যাশা অনুযায়ী তার পারফর্ম্যান্স কিছুটা কম মনে হয়েছে সিরিজে। 

এফএস নাইম, তার চরিত্রে বিভিন্ন দিক রয়েছে, সাথে রয়েছে এক নতুন লুক। টিপিক্যাল ব্যর্থ অফিসার কিন্তু সিরিজে তার সেন্স অফ হিউমার  বেশ ভালো দেখানো হয়েছে।

বিজরী বরকতউল্লাহ মমতাময়ী মা চরিত্রে দারুণ অভিনয় করেছেন। এছাড়া সাপোর্টিং কাস্ট এ যারা যারা ছিল তাদের স্ক্রিন টাইম কম হলেও সবাই পুরো সিরিজটা টেনে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ভালো অভিনয় করেছেন। একে আজাদ সেতু চরিত্র অনুযায়ী অনেক ভালো করেছেন। 

যারা ট্রেইলার দেখেছেন সবাই জানেন ১৪৫ নাম্বার সেলের অমর নামের রহস্যময় কয়েদীটি বোবা এবং বধির। সিরিজে তার কোন কথা নেই, কিন্তু শুধুমাত্র এক্সপ্রেশন দিয়ে কিভাবে অভিনয় করে বাজিমাৎ করতে হয় সেটা চঞ্চল চৌধুরী প্রমাণ করে দিয়েছেন। তার অসামান্য অভিনয় প্রতিভা দিয়ে আরও একবার প্রমাণ করেছেন ওয়েব সিরিজেও তিনিই সেরা। প্রতিবন্ধী এক চরিত্রে তিনি অনবদ্য অঙ্গভঙ্গি ও এক্সপ্রেশন দিয়ে নিজের বিগত কাজগুলোকেও ছাড়িয়ে গেছেন। মার খাওয়ার পর নীরব রক্তাক্ত চোখের নিরীহ চাহনিই বুঝিয়ে দেয় ন্যাচারাল অভিনয় কাকে বলে!

একটি সিনে দেখা যায় তিনি আসলে বাকপ্রতিবন্ধী কিনা তার যাচাই করার জন্য এফএস নাইম তার কানের পাশ দিয়ে একটি চরম শব্দের আওয়াজ করে কিন্তু সেই সিনটাতে তার অভিনয় দেখলাম আপনি জাস্ট হতবাক হয়ে যাবেন।

তবে সিরিজটি নিয়ে আক্ষেপও রয়েছে দর্শকদের। ট্রেইলারে মূল আকর্ষণ ছিল ১৪৫ নং সেলের কয়েদী আসলে কে? ২৫০ বছর সে কিভাবে বেঁচে আছে? এ সকল প্রশ্নের উত্তর জানতেই সিরিজটি দেখা শুরু করবেন দর্শক। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর পাবেন নাকি আরও প্রশ্ন খুঁজে পাবেন সেটা জানতে সিরিজটি দেখতে হবে। প্রশ্নের উত্তর পাওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। কেউ কেউ একে অবাস্তব ও কাল্পনিক কাহিনীও বলেছেন। আবার অনেকেই পার্ট ২ তে সব ধোঁয়াশা কেটে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন। সকলের এখন একটাই কথা- পার্ট ২ কবে আসবে? 

জুটি হিসেবে সৈয়দ আহমেদ শাওকী এবং চঞ্চল চৌধুরী আবারও একটি সেরা কাজ উপহার দিয়েছেন। দর্শকদের উপহার দিয়েছেন দেশসেরা একটি নির্মাণ। কিছু বিষয় নিয়ে দর্শকদের হতাশা থাকলে সিরিজটির IMDb রেটিং ৯.৩। দেশীয় নির্মাণের জয়জয়কারে যুক্ত হল নতুন একটি সিরিজ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭