ইনসাইড বাংলাদেশ

ভিসা পেলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগও কি পাবেন?


প্রকাশ: 26/08/2022


Thumbnail

বাংলাদেশের পুলিশ প্রধান বেনজীর আহমেদ একটি ঝুঁকি নিয়েছিলেন। আগামী ৩১ এবং ১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর পুলিশ প্রধানদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের যোগ দেওয়ার কথা। কিন্তু বেনজীর আহমেদের উপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ওই প্রতিনিধি দলে তাকে রাখা হবে কি হবে না এ নিয়ে এক ধরনের দোদুল্যমানতা ছিল। কিন্তু বেনজীর আহমেদ একজন সাহসী মানুষ। এ কারণেই তিনি এই তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত হন। অনেকেই দ্বিধান্বিত থাকতেন, অনেকেই বলতেন যে, যেহেতু যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি শেষ পর্যন্ত ভিসা না দেয় তাহলে সেটা তার জন্য অবমাননাকর হতে পারে, বিব্রতকরও হতে পারে। কিন্তু বেনজীর আহমেদ সেই চিন্তা করেননি। বরং তিনি জানতেন যে, যে কারণে তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সেই কারণটি অযৌক্তিক এবং তিনি কোনোভাবেই সেই অপরাধে অপরাধী নন। তাছাড়া র‍্যাবের উপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, সেই র‍্যাবের প্রধানও তিনি যখন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয় তখন ছিলেন না। এরকম বাস্তবতার বেনজীর আহমেদ সাহসিকতার সাথে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে সম্মত হন এবং এই নামের তালিকা পাঠানো হয় জাতিসংঘে।

বেনজীরকে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে দেওয়া হবে কি হবে না এ নিয়ে দোদুল্যমানতা ছিল, অনিশ্চিয়তা ছিল। এমনকি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও এই বিষয়টি নিয়ে নানা রকম কথাবার্তা বলেছে। কখনো বলেছে যে, এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপার, আমরা যোগাযোগ করছি ইত্যাদি। কিন্তু গতকাল বেনজীর আহমেদ ভিসা পেয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জাতিসংঘের সদর দপ্তর অবস্থিত। অতীতেও দেখা গেছে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তাকে জাতিসংঘে যেতে বাধা দেওয়া হয়নি। কারণ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র যদি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিকে প্রতিনিধি নিযুক্ত করে তাহলে তাকে বাধা দেওয়া জাতিসংঘের সনদের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর আগেও কিউবার অবিসংবাদিত নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছিল। শেষ পর্যন্ত তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে পেরেছিলেন। দেখা যায় যে, বিভিন্ন সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন ব্যক্তিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বটে, কিন্তু জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দেয়ার ক্ষেত্রে সেটা বাধা হয়নি। সম্ভবত বেনজীর আহমেদ সেই বিষয়টি জানতেন এবং সেই বিবেচনা থেকেই তিনি ভিসার জন্য আবেদন করেছিলেন। গতকাল তার ভিসা অনুমোদন হওয়ার মধ্য দিয়ে তার নৈতিক বিজয় হয়েছে। প্রথমত, তার সাহস এখন প্রশংসিত হচ্ছে। দ্বিতীয়ত এর মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করলেন যে, যে অভিযোগ তার বিরুদ্ধে রয়েছে সেই অভিযোগের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই এবং তিনি নিজের দিক থেকে পরিষ্কার। এটি পরবর্তীতে তার জন্য অনেক ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

বেনজীর আহমেদ যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাচ্ছেন, তখন তার চাকরির মেয়াদও শেষ হওয়ার পথে। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বেনজীর আহমেদের চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। নতুন পুলিশ প্রধান কে হবেন এ নিয়ে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে সরকারের ভেতরে। অনেকেই বলছেন যে, বেনজীর আহমেদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হতে পারে। পুলিশ প্রধানের পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অতীতে নজির নেই। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কাজেই এখন যেহেতু সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, এইজন্য বেনজীর আহমেদকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়ার ব্যাপারে অনেকেই আগ্রহী। কিন্তু মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এবং নানা বাস্তবতার কারণে কেউ কেউ এ বিষয়ে একটু সংকুচিত অবস্থায় ছিল। কিন্তু এখন যখন তিনি ভিসা পেলেন তখন বোঝা গেল যে মার্কিন নিষেধাজ্ঞাটা অতটা ভয়ঙ্কর কিছু না এবং এই নিষেধাজ্ঞার কারণে কাউকে পুলিশ প্রধান করা যাবে না বা পুলিশ প্রধানকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া যাবে না এরকম ধারণাটাও অমূলক। তাই অনেকেই মনে করছেন যে, এই ভিসা পাওয়াটা বেনজীরের যেমন এক নৈতিক বিজয়, ঠিক তেমনি এই ভিসা প্রাপ্তির মাধ্যমে তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাওয়ার ক্ষেত্রেও যোগ্যতা অর্জন করলেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭