ইনসাইড পলিটিক্স

সম্রাটের জামিন: মহানগর আওয়ামী লীগের নতুন মেরুকরণ


প্রকাশ: 27/08/2022


Thumbnail

ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। যুবলীগ ঢাকা দক্ষিণ মহানগরের সাবেক সভাপতি এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন নেতা। তার মুক্তিতে আওয়ামী লীগের মধ্যে বিশেষ করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। তার মুক্তির পর গতকাল ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু ভবনে যে শোডাউন হয়েছে, তাতে আওয়ামী লীগের তৃণমূল উজ্জীবিত। সম্রাট যুবলীগের নেতা হলেও ঢাকা মহানগরীতে তার আলাদা একটি প্রভাব ছিল। অনেকেই মনে করেন, ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ মিলিয়ে অন্যতম জনপ্রিয় নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। তিনি ক্যাসিনো বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। তার মুক্তি চেয়েছিলেন আওয়ামী লীগের অনেক কেন্দ্রীয় নেতারাও। তারাও নীরবে বলতেন যে, একজন সত্যিকারের পরীক্ষিত কর্মী ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। আর সে কারণেই তার মুক্তির পর তৃণমূলের কর্মীদের মধ্যে চাঞ্চল্য দেখা গেছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, গত কয়েক মাসে আওয়ামী লীগের যে কয়েকটি শোডাউন হয়েছে তার মধ্যে গতকালের শোডাউনটি ছিল সবচেয়ে বেশি। কয়েক হাজার নেতাকর্মী নিয়ে সম্রাট ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং ১৫ই আগস্টের স্মৃতির প্রতি শোক প্রকাশ করেন।

সম্রাট এখন রাজনীতিতে পুরোপুরি সক্রিয় হবেন নাকি অসুস্থতার কারণে বাসায় থেকেই চিকিৎসা গ্রহণ করবেন, সেটি একটি বড় প্রশ্ন। কিন্তু সম্রাটের মুক্তিতে আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে যারা দুঃসময়ে তৃণমূলে কাজ করেছেন, যারা আওয়ামী লীগ ১৩ বছরের বেশি সময় ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েও তেমন কোনো সুযোগ-সুবিধা পাননি, তারা এই ঘটনায় উল্লসিত। ঢাকা মহানগরের তৃণমূলের কর্মীরা বলছেন যে, সামনে বিএনপি-জামায়াত জোট বড় ধরনের আন্দোলন করবে। সেই আন্দোলন মোকাবিলার মতো শক্তি এখনকার আওয়ামী লীগের নেই। আর এ কারণেই সম্রাটের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্রাটের বিশাল কর্মী বাহিনী রয়েছে। যারা কঠিন সময়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেছে। সেই সমস্ত নেতাকর্মীরা মনে করছেন যে, সম্রাটের মুক্তি আওয়ামী লীগের জন্য একটি বড় ধরনের ইতিবাচক পদক্ষেপ। তারা এটাও বলছেন যে, সামনে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা করার জন্য সম্রাটের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু এই নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যেও নানা রকম মেরুকরণ হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বলছেন যে, নির্বাচনের আগে আগে সম্রাটের প্রভাব ঢাকা মহানগরীতে নতুন পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। বিশেষ করে ঢাকা উত্তর এবং দক্ষিণ মহানগরীতে যে বর্তমান নেতৃত্বে রয়েছে, তাদের তুলনায় সম্রাট অনেক বেশি জনপ্রিয়। এর ফলে দলের মধ্যে এক ধরনের বিভক্তি তৈরি হবে।

তবে এই মতামতকে নাকচ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন যে, সম্রাট কখনোই নেতৃত্ব চায় না। সম্রাট আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত নেতা এবং শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত সৈনিক। তার যদি কোনো অপরাধ হয়ে থাকে সেটার জন্য আইন আছে, বিচার আছে। কিন্তু এখন নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করার জন্য এবং কর্মীদেরকে উৎসাহ উদ্দীপনা দেওয়ার জন্য সম্রাটের বিকল্প নেই। আর এ কারণেই সম্রাটের জামিন আওয়ামী লীগকে চাঙ্গা করেছে বলে তারা মনে করেন। তারা মনে করছেন যে, সম্রাট যদি এখন রাজনীতিতে সক্রিয় নাও হন, তার কর্মীদের তিনি যেভাবে নির্দেশ দিবেন সেভাবে কর্মীরা কাজ করবে। ফলে বিরোধী দলের আন্দোলন মোকাবিলা করা এবং রাজপথে থাকার বিষয়টি আওয়ামী লীগের জন্য অনেকটাই স্বস্তিদায়ক হলো। সামনে বিরোধী দল যে আন্দোলনই করুক না কেন, তাদের মাথায় সম্রাটের চিন্তা থাকবে। তবে সম্রাটের ফিরে আসা এবং তার রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়া আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য একটি নতুন মেরুকরণ হবে। কেউ কেউ বলছেন যে, এটি ভুল বার্তা দেবে। সম্রাটের যে সমালোচনা, সেই সমালোচনাগুলোকে পুঁজি করে বিরোধী দল রাজনীতির মাঠ গরম করতে চাইবে। তবে এসব নাকচ করে দিয়ে বলছেন যে, সম্রাট জনপ্রিয় নেতা এবং তার জনপ্রিয়তার কারণে কর্মীরা মাঠে থাকবে। এটি হবে আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় প্লাস পয়েন্ট।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭