ইনসাইড এডুকেশন

একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষা কার্যক্রম কতটা জরুরি


প্রকাশ: 30/08/2022


Thumbnail

অনেক শিক্ষার্থীই আছেন যারা একডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকে। আর একজন আদর্শ শিক্ষার্থীর পড়াশোনা করার মূল উদ্দেশ্য শিক্ষা অর্জন করা হলেও মনন বিকাশ, মানশিক বিকাশ, যোগাযোগ বৃদ্ধি এবং নেতৃত্ব বিকাশের মত দক্ষতাগুলো অত্যন্ত জরুরি। এ ধরনের চর্চা একজন শিক্ষার্থীর উপর চাপ কমিয়ে আনে এবং মনযোগ বিকেন্দ্রীকরণে সহায়তা করে৷ তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সুস্থ বিনোদন ও মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য সহশিক্ষা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সহশিক্ষা বলতে আমরা সাধারণত যা বুঝি তা হলো- নাচ-গান, আঁকাআঁকি, বিতর্ক, আবৃত্তি, অভিনক্য ইত্যাদি। আর একজন শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশপাশি সেসকল কার্যক্রমেই অংশগ্রহণ করেন, যে কার্যক্রমে সে স্বাচ্ছন্দ অনুভব করে। শিক্ষাজীবনে সহশিক্ষা কার্যক্রম আপনাকে ক্যারিয়ার জীবন থেকে শুরু করে সকলক্ষেত্রে ভালোভাবে প্রস্তুত করে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। 

বাংলা ইনসাইডারের আজকের এ আয়োজনে এমন কয়েকটি শিক্ষা কার্যক্রম নিয়ে আপনাদের সাথে বিস্তারিত আলোচনা করবো। 

স্কাউটিং:
একজন শিক্ষার্থীর স্কুল বা কলেজ পর্যায় স্কাউটিং শুরু করা খুবই ভালো সিদ্ধান্ত। কারণ, স্কাউটিং পাঠ পর্যায়ের একটি দলগত কাজ৷  যার মধ্য দিয়ে একজন শিক্ষার্থী হাতে কলমে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবে, নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়ার শিখতে পারবে, একটা টিম কে লিড কিভাবে লিড করতে হয় সেটাও এই স্কাউটিং মধ্য দিয়ে শিখতে পারবে একজন শিক্ষার্থী, স্কাউটিংয়ের মাধ্যমে মৌলিক জীবন দক্ষতা সম্পর্কে শিক্ষা লাভ করা যায়।

একটি স্কাউট দলের একজন করে টিম লিডার থাকে, যাকে সিনিয়র পেট্রোল লিডার বলে। এই টিমকে আবার সার্বিকভাবে পরিচালনা করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের ক্রীড়াশিক্ষক। এভাবেই শৃঙ্খলা প্রশিক্ষণের মূল শিক্ষা স্কাউটাররা পেয়ে থাকে। একজন শিক্ষার্থী স্কাউটিং করলে বিদ্যালয় পর্যায়ে কার্যক্রমের পাশাপাশি উপজেলা, জেলা, আঞ্চলিক, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্কাউটিং করার সুযোগও থাকে।  আর স্কাউটিং করে নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারলে বিভিন্ন ব্যাজ অর্জনেরও সুযোগ থাকে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ে একজন স্কাউট প্রেসিডেন্ট স্কাউট ব্যাজও অর্জন করতে পারে। এসবের পাশাপাশি একজন স্কাউটার হাইকিং, তাঁবু জলসা, ক্যাম্প ফায়ার, ক্যাম্প ভিজিটের মতো মজার সব অভিজ্ঞতাও অর্জন করার সুযোগ থাকে।

বিশ্বজুড়ে প্রায় ১৭০টি দেশের পাঁচ কোটি স্কাউট সদস্য আছে। তাই এই বিশাল কমিউনিটির একজন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা একজন শিক্ষার্থীকে শুরু থেকেই কর্মক্ষেত্রে দক্ষ করে তোলার শিক্ষা প্রদান করবে স্কাউটিং। যে কারণে সহশিক্ষা কার্যক্রম হিসেবে স্কাউটিং করাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং ফলপ্রসূ।

বিতর্ক:
প্রাথমিক থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া অনেকেই বিতর্কেত সাথে সম্পৃক্ত থাকে। স্কাউটিংয়ের মতই 'বিতর্ক' সহশিক্ষা হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সহশিক্ষার অন্যতম কার্যক্রমগুলোর মধ্যে বিতর্ক একটি। বিতর্কের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী শিখতে পারে যে, কনো বিষয় নিয়ে তাকে কিভাবে, কোন আঙ্গিকে কথা বলতে হবে। তবে এই চিন্তাভাবনা গুলো তখনই পূর্ণতা পায়,  যখন আপনি যুক্তি দিয়ে বিষয়টা পরিষ্কার ও সুন্দরভাবে উপস্থাপন করতে পারবেন। তাই অন্যান্য সাধারণ মানুষের চিন্তাধারা থেকে নিজের চিন্তাধারাকে একটি গ্রহণযোগ্য মাত্রা দিতে বিতর্কের চেয়ে ভালো বিকল্প আর হয় না।

একজন শিক্ষার্থী বিতর্কের মাধ্যমে নিজেকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে শেখে। কোনো ধরনের আড়ষ্টতা ছাড়াই সবার সামনে, সব পরিস্থিতিতে সুন্দরভাবে গুছিয়ে এবং অবশ্যই যুক্তি দিয়ে কথা বলতে শেখায়। আবার যাদের কথা বলায় জড়তা আছে বিতর্ক করার মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে সেই জড়তাও কেটে যায়। মানে একজন শিক্ষার্থীকে বিতর্ক পঞ্চমুখী করে তোলে। 

তবে বিতর্কের মধ্য দিয়ে শুধু দক্ষতাই অর্জন হয় এমনটা নয়, এর মধ্য দিয়ে জ্ঞানের দিকটা সমৃদ্ধ করতেও বিতর্ক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ বিতর্ক সাধারণত সাহিত্য, রাজনীতি, আইন, নৈতিকতা, অর্থনীতি, সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে হয়ে থাকে। তাই একজন বিতার্কিককে এ সকল ব্যাপারে সবসময় জানাশোনা রাখতে হয় এবং প্রয়োজনে প্রচুর পড়াশোনা আর সাম্প্রতিক ঘটনাবলি নিয়ে নিয়মিত আপডেটেড ধারণা রাখতে হয় । জ্ঞানের বিকাশগত জায়গা থেকে বিতর্কের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

কুইজ প্রতিযোগিতা:
স্কুল-কলেজ পর্যায়ে স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আয়োজনে বিশেষ কুইজ প্রতিযোগিতা, কিংবা ইংরেজি স্কুলগুলিতে ডিসি, মার্ভেল বা পটারহেডদের জন্যে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন প্রায়ই আমাদের চোখে পড়ে। প্রচলিত কুইজ প্রতিযোগিতার আরেকটু আপগ্রেডেড প্রতিযোগিতা হচ্ছে আঞ্চলিক, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক পর্যায়ের অলিম্পিয়াডগুলো। 

এই প্রতিযোগিতাগুলো সাধারণত পাঠ্যবই বা তার বাইরের বিষয় থেকে হয়ে থাকে। তাই একজন কুইজারকে একসঙ্গে নানা বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। একাডেমিক পড়াশোনার মতো বাধ্য হয়ে কুইজের পড়াশোনা করতে হয় না বলে খানিকটা পড়ুয়াদের কাছে কুইজ অত্যন্ত আকর্ষণীয় একটি সহশিক্ষা কার্যক্রম। 

ল্যাংগুয়েজ ক্লাব: 
একজন শিক্ষার্থী বিভিন্ন ক্লাবের সাথে যুক্ত থেকে নিজের দক্ষতাকে আরও কয়েক ধাপ বাড়িয়ে নিতে পারে। যেমন কোনো ভাষা বা ল্যাঙ্গুয়েজ ক্লাব। বর্তমান সময়ে প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই ইংলিশ ক্লাব, লিটারেচার ক্লাব, ল্যাংগুয়েজ ক্লাব রয়েছে। ইংরেজি চর্চার ভালো সুযোগ তো পাবেই, পাশাপাশি বিভিন্ন উৎসব বা ফেস্টিভাল আয়োজন করতে গিয়ে যে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে, যে অভিজ্ঞতাটা অর্জন করবে সেটা পরে কর্মজীবনেও অনেক কাজে আসবে।

লেখালেখি:
অনেকই আছেন যারা উপরের উপরের সহশিক্ষা কার্যক্রম গুলির সাথে সম্পৃক্ত হতে চায় না। বিশেষ করে যারা খানিকটা লাজুক প্রকৃতির, তারা উপরের কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবেন না। তবে উপরের কার্যক্রমগুলোর সাথে যুক্ত না থাকতে চাইলেও লেখালেখির বিষয়টিতে তাদের খুব একটা অসুবিধে হয় না।

বর্তমান সময়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা কন্টেন্ট রাইটিংয়ের প্রতি বেশ আগ্রহ। তাই এ শিক্ষার্থীরা রচনা লেখা প্রতিযোগিতা বা ওয়াল ম্যাগাজিন, স্ক্রিপ্টবুক রাইটিংয়ের মতো কাজগুলোতে সময় দিতে পারেন। ফলে লেখার ধরনে যথেষ্ট ইতিবাচক পরিবর্তন আসে, নতুন নতুন আঙ্গিকে লেখা যায়। শিক্ষাজীবন থেকেই যারা এ ধরনের কাজের সাথে সম্পর্কিত থাকেন, পরবর্তী সময়ে রিপোর্ট রাইটিং বা ব্লগ রাইটিংয়ের মতো আনুষ্ঠানিক ক্ষেত্রগুলোতে তাদের কাজ যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন ও দক্ষ হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি নেতৃত্ব, বাগ্মিতা, দলীয় কাজের অভিজ্ঞতা, চমৎকার উপস্থাপনার মতো দক্ষতাগুলো তাই কর্মক্ষেত্রেও তাকে এগিয়ে রাখবে সবার আগে, আর সেজন্য চাই সহশিক্ষা কার্যক্রমের নিয়মিত চর্চা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭