ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপির দশ পাপ


প্রকাশ: 01/09/2022


Thumbnail

আজ বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে সেনা পৃষ্ঠপোষকতায় সেনা ছাউনিতে ক্ষমতার গর্ভে জন্ম নিয়েছিল এই রাজনৈতিক দলটি। কিন্তু গত প্রায় ১৫ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে এই রাজনৈতিক দলটি। ক্ষমতার বাইরে থাকার পর  এখন বিএনপির ধুঁকছে। অস্তিত্বের সংকট যেমন তেমনি আদর্শের সংকট বিএনপিতে রয়েছে নেতৃত্বের সংকটও। আজকে বিএনপির যে হতশ্রী অবস্থা তাতে এই দলটি টিকে থাকাই এখন একটি বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির আত্মপ্রকাশ ছিল আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করা। মূলত বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি ভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগ বিরোধী। এই আওয়ামী লীগ বিরোধীদেরকে জোটবদ্ধ করেছিলেন জিয়াউর রহমান। আর একারণেই জামায়াত, জাসদ সবাইকে এক ঘাটে জল খাইয়েছিলেন সাবেক স্বৈরাচার একনায়ক। কিন্তু জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর এই দলটির ধুঁকতে থাকে। বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব গ্রহণ করে। বিএনপিকে নতুন করে পুনর্গঠন করেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার নানা রকম ভুল এবং বিএনপির রাজনীতির নানা রকম ঘাত-প্রতিঘাতে দলটি এখন অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে। 

আওয়ামী লীগ বিরোধিতা করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি দল টিকে থাকতে পারতো, তার জনপ্রিয়তাও থাকতো। কারণ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিরোধীদের সংখ্যা ৩০ থেকে ৪০ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু বিএনপি না পারছে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে, না পারছে একটি সত্যিকার বিরোধী দল হিসেবে নিজেদেরকে তৈরি করতে। কেন এই অবস্থা? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জন্মের পর থেকে বিএনপির নানা রকম পাপের কারণে বিএনপি আজ কক্ষচ্যুত, অস্তিত্বের সংকটে ভুগছে এবং ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু হয়ে উঠছে। বিএনপির দশটি পাপ চিহ্নিত করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই পাপগুলোর মধ্যে রয়েছে- 

১. ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ: খন্দকার মোশতাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেছিল। ৭ নভেম্বর তথাকথিত সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতা দখল করে তিনি ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করেননি বরং এটিকে আইনি বৈধতা দিয়েছেন। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ আইনে পরিণত হয়েছিল। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের কোনো উদ্যোগই নেননি বরং এই বিচার বন্ধের জন্যই তিনি সার্বক্ষণিক কাজ করেছেন। এটি বিএনপির একটি বড় পাপ। 

২. রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্বিচারে হত্যা: ইতিহাস বড় নির্মম-নিষ্ঠুর। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কর্নেল তাহেরসহ হাজার হাজার শ্রমিককে হত্যা করেছিলেন। নির্বিচারে রাজনৈতিক কর্মীদের উপর নিপীড়িন চালিয়েছিলেন, হত্যা করেছিলেন। সেই রাজনীতির ইতিহাস অন্বেষণ করলে দেখা যায় যে, প্রতিপক্ষকে দমন করার এমন নিষ্ঠুরতা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অতীতে কখনো হয়নি। ভবিষ্যতেও কখনো হবে বলে কেউ মনে করেন না। সেই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হত্যা করা ছিল বিএনপির আরেকটি বড় পাপ।

 ৩. বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কূটনীতিক চাকরি: জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন। তাদের কূটনীতিক চাকরি দিয়েছিলেন। এটি একটি বিএনপির জন্য একটি বড় পাপ। যা তাকে এখনো বহন করে বেড়াতে হচ্ছে। 

৪. ভোট কারচুপি ফিরিয়ে আনা: ১৯৯০ সালের স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বিজয়ী হয় বাংলাদেশের জনগণ। দুই নেত্রীর সংগ্রাম বাংলাদেশকে গণতন্ত্রের একটি নতুন মাহেন্দ্রক্ষণের দাঁড় করায়। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে মাগুরা নির্বাচনে অনাকাঙ্ক্ষিত কারচুপি করে। এই ভোট কারচুপি ফিরিয়ে আনা একটি বড় পাপ।

৫. যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন করা: ছিয়ান্নবই সালে দীর্ঘ ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি ক্ষমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে যায়। তখন তারা জোট বাঁধে যুদ্ধাপরাধের সাথে। গঠিত হয় চারদলীয় জোট। 
যাতে জামায়াত হলো অন্যতম অংশীদার। জামায়াতের সঙ্গে এই জোট বিএনপিকে একটি মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলের কাতারে নিয়ে যায়। এটি বিএনপির একটি বড় পাপ। বিএনপি ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতা বিরোধী রাজাকার আলবদরদের গাড়িতে পতাকা তুলে দেয়। তাদেরকে মন্ত্রী মানায়। এই পাপ থেকে বিএনপি কখনোই নিষ্কৃতি পাবে না।

৬. রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতি: ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তৈরি করা হয় হাওয়া ভবন। তারেক জিয়ার নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতির এক মহোৎসব চালানো হয়। হাওয়া ভবনের মাধ্যমে বিএনপি কবর খুঁড়েছিল বলে অনেকেই মনে করেন। 

৭.রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস: প্রতিপক্ষকে নির্মূল করার জন্য বিএনপির রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস ব্যবহার করে। রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করে ২১ আগস্ট ২০০৪ সালে গ্রেনেট হামলার ঘটনা হয়। এটি ছিল বিএনপির জন্য একটি বড় অপরাধ। যে অপরাধ বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিভক্ত করেছে এবং যে পাপ বয়ে বেড়াতে হবে বিএনপি যতদিন টিকে থাকবে ততদিন। 

৮. তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা: বিএনপির সবচেয়ে বড় অপরাধগুলোর একটি হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা। ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে বিএনপি ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করতে চায়। আর সেজন্যই বিএনপি শুরু করে নানা রকম কৌশল। প্রধান বিচারপতির বয়স বাড়িয়ে তাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার করার ব্যাপারে নিশ্চিত করতে  সংবিধান সংশোধন করা হয়। কে এম হাসান যেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হতে পারে তার জন্য বিএনপি এই অপকৌশল গ্রহণ করে। ইয়াজউদ্দিনকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করে বিএনপি কার্যত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেয়। 

৯. ইতিহাস বিকৃতি: বিএনপির রাজনীতির একটি বড় সমস্যা হলো ইতিহাস বিকৃতি। জিয়াউর রহমান কখনোই নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেননি। কিন্তু বিএনপি ক্ষমতায় এসে নিজেকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করেন। খালেদা জিয়ার ১৫ আগস্টের জন্মদিন বিএনপির আরেকটি পাপ। এই সমস্ত ইতিহাস বিকৃতি বিএনপিকে আজকে অস্তিত্বের চ্যালেঞ্জের মুখে দাঁড় করিয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।

১০. সন্ত্রাস বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ-পৃষ্ঠপোষকতায: বিএনপির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে একটি বড় অভিযোগ হলো বিএনপি সন্ত্রাসবাদী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দেয়, তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করে। এই পৃষ্ঠপোষকতার প্রমাণ পাওয়া যায় বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনায়।

এই পাপগুলো ছাড়াও বিএনপির আরও ভুল রাজনীতি, ভুল পথযাত্রা আজকে বিএনপিকে খাদের কিনারে দাঁড় করিয়েছে বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭