প্রকাশ: 01/09/2022
বাঁচামরার
লড়াইয়ে হারলেই বাদ। শ্বাসরুদ্ধকর সেই
ম্যাচ একবার হেলে পড়ছিল বাংলাদেশের
দিকে, তো অন্যবার শ্রীলঙ্কার
দিকে।
সেই
টানটান উত্তেজনার ম্যাচ গড়ালো শেষ ওভার পর্যন্ত।
সর্বাত্মক চেষ্টা করলেও শেষে স্বপ্নভঙ্গ হলো
বাংলাদেশের। ৪ বল ও
২ উইকেটে থাকতে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে এশিয়া
কাপ থেকে বিদায় হয়ে
গেছে টাইগাররা।
বোর্ডে
১৮৩ রানের বড় সংগ্রহ নিয়ে
দারুণ সুযোগ ছিল লঙ্কানদের চেপে
ধরার। বল হাতে ইনিংসের
দ্বিতীয় ওভারেই সুযোগ তৈরি করেছিলেন তাসকিন
আহমেদ।
তাসকিনের
ওভারের শেষ বলে কুশল
মেন্ডিস ড্রাইভ করলে বল চলে
যায় উইকেটের পেছনে। ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ক্যাচটা গ্লাভসে
পেয়েছিলেন মুশফিক। কিন্তু ধরে রাখতে পারেননি।
২ রানে জীবন পেয়ে
ভয়ংকর হয়ে উঠেন কুশল।
পঞ্চম ওভারে সাকিবকে দুই ছক্কা আর
একটি বাউন্ডারি হাঁকান। ৫ ওভারেই বিনা
উইকেটে ৪৪ রান তুলে
ফেলে শ্রীলঙ্কা।
ষষ্ঠ
ওভারে অভিষিক্ত এবাদত হোসেনকে বোলিংয়ে আনেন সাকিব। নিজের
তৃতীয় বলেই দলকে সাফল্য
এনে দেন ডানহাতি এই
পেসার। তার শর্ট বল
পুল করতে গিয়ে পাথুম
নিশাঙ্কা মিডউইকেটে ক্যাচ দেন মোস্তাফিজকে।
তিন
বল পর আরও এক
উইকেট। এবার চারিথ আসালাঙ্কাকে
(১) মিডঅফে ক্যাচ বানান অভিষিক্ত এবাদত। বিনা উইকেটে ৪৫
থেকে ২ উইকেটে ৪৮
রানে পরিণত হয় শ্রীলঙ্কা।
সপ্তম
ওভারে কুশল আরেকবার জীবন
পান। শেখ মেহেদির বলে
উইকেটরক্ষক মুশফিক ক্যাচ নিলে সাজঘরে ফিরছিলেন
লঙ্কান এই ব্যাটার। কিন্তু
আম্পায়ার তাকে দাঁড়াতে বলেন।
‘নো’ বল চেক করে
দেখা যায়, ওভারস্টেপিং করেছেন
মেহেদি।
পরের
ওভারে আবারও এবাদতের আঘাত। এবার গুনাথিলাকা (১১)
পুল করলে ফাইন লেগ
থেকে প্রায় ২০ মিটার দৌড়ে
এসে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নেন
তাসকিন।
দুই
বল পর তৃতীয়বারের মতো
জীবন পান কুশল। এবার
তিনি এবাদতকে পুল করলে লেগ
দিয়ে বল চলে গিয়েছিল
উইকেটরক্ষক মুশফিকের হাতে। আবেদনও হয়েছিল।
কিন্তু
আম্পায়ার সে আবেদন নাকচ
করে দেন। বাংলাদেশি ফিল্ডাররাও
বুঝতে পারেননি বল ব্যাটে স্পর্শ
লেগেছে কিনা। পরে স্নিকোমিটারে দেখা
যায়, বল ব্যাটে লেগেই
গেছে মুশফিকের হাতে।
নবম
ওভারে তাসকিন এসে আউট করেন
ভানুকা রাজাপাকসেকে। টাইগার পেসারের শর্ট বল তুলে
মারতে গিয়ে থার্ডম্যানে বদলি
ফিল্ডার নাইম শেখের ক্যাচ
হন রাজাপাকসে (২)।
তাসকিনের
করা একাদশতম ওভারে চতুর্থবারের মতো জীবন পান
কুশল মেন্ডিস। ননস্ট্রাইকের এন্ডে তিনি অনেকটা বেরিয়ে
গেলে থ্রো করেন সাব্বির
রহমান। একটুর জন্য স্টাম্প ভাঙেনি।
এতবার
জীবন পেয়ে ৩১ বলে
ফিফটি তুলে নেন কুশল।
পঞ্চম উইকেটে দাসুন শানাকার সঙ্গে ৩৫ বলে ৫৪
রানের জুটিতে ম্যাচ অনেকটাই নিজেদের দিকে নিয়ে আসেন
এই ব্যাটার।
অবশেষে
১৫তম ওভারে মোস্তাফিজুর রহমান ফেরান কুশলকে। তার স্লোয়ার অফকাটার
থার্ডম্যানে তুলে দেন এই
ব্যাটার, তাসকিন নেন আরেকটি দুর্দান্ত
ক্যাচ। ৩৭ বলে ৪
বাউন্ডারি আর ৩ ছক্কায়
কুশলের ইনিংসটি ছিল ৬০ রানের।
পরের
ওভারে তাসকিনের আঘাত। ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা (২) জায়গা করে
কভারের ওপর দিয়ে মারতে
যান, হন শেখ মেহেদির
ক্যাচ। ৮ রানের ব্যবধানে
২ উইকেট হারিয়ে ফের চাপে পড়ে
শ্রীলঙ্কা।
কাঁটা
হয়ে ছিলেন কেবল দাসুন শাকা।
লঙ্কান অধিনায়ক খেলছিলেনও মারমুখী। অবশেষে শেখ মেহেদির করা
১৮তম ওভারে লংঅনে তুলে মারতে গিয়ে
আউট হন শানাকা (৩৩
বলে ৪৫)। বাংলাদেশও
বাঁচে হাঁফ ছেড়ে। ঐ
ওভারেই ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে আউট করেন তাসকিন।
শেষদিকে
করুনারত্নের ছোট ক্যামিও পর
আশিতার ৩ বলে ১০
রানে ভর করে ২
উইকেটের জয় নিয়ে মাঠ
ছাড়ে লঙ্কানরা। ফলে এশিয়া কাপ থেকে ছিটকে
গেলো টাইগাররা। এদিন দলের হয়ে
এবাদত নেন ৩ উইকেট,
তাসকিনের শিকার ২ উইকেট। মাহেদি
এবং মুস্তাফিজ ১ করে উইকেট
লাভ করেন।
এর আগে সংযুক্ত আরব
আমিরাতের মাটিতে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। নির্ধারিত
২০ ওভারে ৭ উইকেটে ১৮৩
রান তোলে সাকিব আল
হাসানের দল।
ওপেনিংটা
ক্লিক করছে না। বাংলাদেশ
তাই আজ বাঁচামরার ম্যাচে
একসঙ্গে দুই ওপেনার বদলে
ফেলেছে। নাইম শেখ আর
এনামুল বিজয়ের বদলে ওপেনিংয়ে নামেন
মেহেদি হাসান মিরাজ আর সাব্বির রহমান।
কেমন
হলো ওপেনিং জুটি? দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে
নেমে শুরুটা খুব খারাপ ছিল
না। তবে ১৯ রানেই
ভেঙে গেছে সাব্বির-মিরাজের
জুটি।
দীর্ঘদিন
পর দলে ফিরেছেন সাব্বির
রহমান। ক্যারিয়ারে প্রথমবার ওপেনিং খেলতে নেমেছিলেন। তবে সুবিধা করতে
পারেননি।
৬ বলে ৫ রান
করে আসিথা ফার্নান্ডোকে পুল করতে গিয়ে
উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন সাব্বির।
ওয়ানডেতে
এর আগেও ওপেন করে
সফল হয়েছেন মিরাজ। তবে টি-টোয়েন্টিতে
আজই প্রথম। অফস্পিনিং এই অলরাউন্ডারকে নিয়ে
টিম ম্যানেজম্যান্টের বাজি এবারও কাজে
দিলো।
পাওয়ার
প্লেতে যে উড়ন্ত সূচনার
জন্য হাহাকার ছিল বাংলাদেশের, মিরাজ
ওপেন করতে এসেই সেই
আক্ষেপ দূর করে দিলেন।
এই অলরাউন্ডারের ঝড়ো ব্যাটে চড়েই
আজ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ১
উইকেটে ৫৫ রান তোলে
বাংলাদেশ।
তবে
পাওয়ার প্লের পরের ওভারেই মারকুটে
এই ওপেনারকে সাজঘরে ফিরিয়েছেন হাসারাঙ্গা। লঙ্কান এই লেগির বলে
একবার এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে বেঁচে গেলেও দুই বল পরই
বোল্ড হন মিরাজ। ২৬
বলে ২টি করে চার-ছক্কায় মিরাজের ব্যাট থেকে আসে ৩৮
রান।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা যেন মুশফিকুর রহিমের
সঙ্গে একেবারেই মানানসই নয়। টেস্ট, ওয়ানডেতে
দলের বড় ভরসা হলেও
এই ফরম্যাটে তার রেকর্ড তেমন
ভালো নয়।
আগের
ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে করেছিলেন ১ রান। আরও
একবার ব্যর্থতার পরিচয় দিলেন মুশফিক। এবার আউট হলেন
৫ বলে ৪ করে।
চামিকা
করুনারত্নের ব্যাক অব দ্য লেন্থ
ডেলিভারি ব্যাকফুটে ডিফেন্ড করতে গিয়ে উইকেটরক্ষককে
ক্যাচ দিয়েছেন অভিজ্ঞ এই ব্যাটার। এ
নিয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বশেষ
ছয় ইনিংসে পাঁচবারই দশের নিচে আউট
হলেন মুশফিক।
সাকিব
আল হাসান খেলছিলেন বেশ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে।
ভালোভাবেই এগোচ্ছিল দল। হঠাৎ সাকিব
স্টাম্প ছেড়ে মারতে গেলেন,
থিকসানার বলটি লাইন মিস
করে হলেন বোল্ড।
দুই
ওভার আগেই মুশফিক ফিরেছেন।
২২ বলে ৩ বাউন্ডারিতে
২৪ রান করা সাকিবকেও
অল্প সময়ের ব্যবধানে হারিয়ে কিছুটা চাপে পড়ে যায়
বাংলাদেশ।
৮৭ রানে পড়েছিল ৪
উইকেট। সেখান থেকে দুর্দান্ত এক
জুটি গড়েন আফিফ হোসেন
ধ্রুব আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
১৩তম ওভারেই শতরান ছোঁয় বাংলাদেশ। হাসারাঙ্গাকে
ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে দারুণ
এক ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে ১০০ পার
করে দেন আফিফ।
মাহমুদউল্লাহও
খেলেছেন দারুণ। তাদের জুটিতে ৩৭ বলে আসে
৫৭ রান। অবশেষে ইনিংসের
১৭তম ওভারে আউট হন আফিফ।
বাঁহাতি পেসার মধুশঙ্কাকে তুলে মারতে গিয়ে
কাউ কর্নারে ক্যাচ হন এই অলরাউন্ডার।
২২ বলে আফিফের ৩৯
রানের ঝড়ো ইনিংসে ছিল
৪টি বাউন্ডারি আর ২টি ছক্কার
মার।
সঙ্গী
হারিয়ে যেন ধৈর্যও হারিয়ে
ফেলেন মাহমুদউল্লাহ। আফিফ আউট হওয়ার
পরের ওভারেই হাসারাঙ্গাকে সুইপ করে ডিপমিডউইকেটে
ক্যাচ দেন ২২ বলে
২৭ করা অভিজ্ঞ এই
ব্যাটার।
এরপর
শেখ মেহেদি হাসান ১ রানেই সাজঘরে
ফিরে যান। তবে শেষদিকে
মোসাদ্দেক হোসেন আর তাসকিন আহমেদের
ব্যাটে ১৮৩ রানের বড়
সংগ্রহ গড়ে বাংলাদেশ। মোসাদ্দেক
৯ বলে ৪ বাউন্ডারিতে
২৪ আর তাসকিন ৬
বলে ১ ছক্কায় ১১
রানে অপরাজিত থাকেন।
লঙ্কান বোলারদের মধ্যে দুটি করে উইকেট নেন ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা আর চামিকা করুনারত্নে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭