ইনসাইড টক

‘শিল্পীরা সব সময় অভিমানী’


প্রকাশ: 02/09/2022


Thumbnail

বড় পর্দার অভিনেত্রী এলিনা শাম্মী। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করে বেশ আলোচিত হয়েছেন। অভিনয় করেছেন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবরের বায়োপিকেও। সম্প্রতি ‘মাসুদ রানা: ধ্বংসপাহাড়’ উপন্যাস অবলম্বনে যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত হচ্ছে সিনেমা এমআর-নাইন। সিনেমায় যুক্ত হয়েছেন দেশের অভিনেত্রী এলিনা শাম্মী। পাশাপাশি কাজ করছেন ওটিটি মাধ্যমেও। এদিকে শুক্রবার মুক্তি পেল তার নতুন ছবি। সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সাথে কথা হলো এলিনা শাম্মীর।

বাংলা ইনসাইডার: আপনার নতুন ছবি মুক্তি পাচ্ছে ছবিটি নিয়ে কতটা আশাবাদী?

এলিনা শাম্মী: আগামীকাল আসলে ‘ভাইয়ারে’ ছবিটা রিলিজ হচ্ছে। প্রত্যেকটা আর্টিস্টের জন্যই আসলে নতুন ছবি রিলিজ হলে সেটা আনন্দের বিষয়, আমার জন্যও ঠিক তাই। ‘ভাইয়ারে’ রিলিজ হওয়া নিয়ে সবাই যেমন এক্সাইটেড, ‘ভাইয়ারে’র আর্টিস্ট হয়ে আমিও এক্সাইটেড। ‘ভাইয়ারে’র আলাদা দর্শক কাছে, হলে যাবে। প্রচার-প্রচারণার নতুন কিছু সিস্টেম তারা ফলো করেছে। সবকিছু মিলিয়ে ‘ভাইয়ারে’ যেভাবে উদ্যোগ নিয়ে এগোচ্ছে রাসেল ভাই এবং তার টিমের জন্য শুভকামনা রয়েছে। যদিও কাজ গুলোর কারণে তাদের আমি অংশ নিতে পারিনি। শুভকামনা তো অবশ্যই আছে যেহেতু আমি কাজ করেছি। তাদের জন্য সবসময় আমি দোয়া করছি যেন ‘ভাইয়ারে’র পুরো টিম যে আশা করে মুভিটি তৈরি করা শুরু করেছিলেন সেই আশা যেন পূর্ণ হয়, হলমুখো যেন হয় দর্শক সে প্রত্যাশা থাকবে। স্বাভাবিকভাবে আমার তো আলাদা একটা ভালোলাগা আছেই।

বাংলা ইনসাইডার: চলচ্চিত্রে অনেক দিন পর ভালো সময় যাচ্ছে। এরমাঝে ভাইয়ারে কতটা দর্শকের মন জয় করতে পারবে বলে আপনি মনে করেন?

এলিনা শাম্মী: প্রত্যেকটা মুভিরই আলাদা আলাদা দর্শক আছে। দর্শকভেদে মুভির চাহিদা, ভালোলাগা-মন্দলাগা কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন হয়। আমি আশা করবো যে ‘ভাইয়ারে’র দর্শক হলে যাবেন এবং হলে যেইয়ে মুভিটা দেখবেন। দর্শকের যে স্বতঃস্ফূর্ত সাড়া আমি দেখেছি বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণায় তাতে এমন মনে হচ্ছে যে, টিম যেভাবে এগোচ্ছে তাদের প্রত্যাশা পূরণ হবে। যেহেতু চলচ্চিত্রের একটি জোয়ার তৈরি হয়েছে ‘পরাণ’, ‘হাওয়া’, ‘দিন: দ্য ডে’ চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে, ভাইয়ারে’ও সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখবে।

বাংলা ইনসাইডার: চলচ্চিত্রের পাশাপাশি নাটক, ওটিটিতে কাজ করছেন। নতুন কোন কাজে সামনে দর্শক আপনাকে ওটিটিতে দেখতে পারবে?

এলিনা শাম্মী:  ইতোমধ্যে বেশকিছু ওটিটির জন্য কাজ করেছি, সামনে আরও কয়েকটার কাজ করবো। দুই-তিনটা কাজের জন্য কথা হচ্ছে। সম্পূর্ণ ফাইনাল না বলে আসলে ওই ভাবে আমি জানাতেও চাচ্ছি না। ফাইনাল হলেই  খুব শীঘ্রই জানাবো ইনশা-আল্লাহ। ভালো কাজ হবে আশা করছি। আমারতো আসলে ভালো ডিরেক্টরদের সাথে কাজ করার আলাদা একটা আগ্রহ রয়েছে। সেই জায়গা থেকে আসলে অপেক্ষা করে করে হলেও ভালো কাজগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট থাকতে চাই। সেই ধারাবাহিকতায় দুই একটা ভালো ওয়েব ফিল্মের সাথে জড়িত হচ্ছি আবারো। অল্পদিনেই আমি বিস্তারিত জানাবো।

বাংলা ইনসাইডার: অনুদানের সিনেমা নিয়ে অনেক অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। একজন অভিনেত্রী হিসেবে বিষয়টি আপনি কিভাবে দেখছেন?

এলিনা শাম্মী: অনুদানের সিনেমা যারা স্বপ্নবাজ ডিরেক্টর আছেন তাদের জন্য স্বপ্নের মত। তাদের কাছে এই সুযোগটা স্বপ্নের মত আসে এবং  বর্তমান আমাদের সরকার আছে, এই সরকার কিন্তু এই বিষয়গুলো খুব যত্নসহকারে দেখছেন। যারা স্বপ্নবাজ এবং রুচিশীল এবং অনেক বেশি প্রগতিশীল সৃজনশীল ডিরেক্টররা যে সুযোগগুলো পাচ্ছে সেই সুযোগগুলো যাতে ঠিকঠাক মতো কাজে লাগানো যায় সেজন্য তাদের একটা সঠিক প্ল্যানিং যদি থাকে তাহলে মনে হয় যে খুব ভালো ভালো কাজ অনুদানের ছবি থেকে যেরকম সাড়া আমরা আমরা পেয়ে থাকি এর পরবর্তী সময়ে তার ব্যতিক্রম হবে না। অনুদানের ছবির প্রতি রুচিশীল দর্শকদের একটা আলাদা ভালোলাগা এবং একটা প্রত্যাশা থাকে এবং অপেক্ষায়ও থাকেন। অনুদানের ছবি থেকে ভালো কিছু গল্প পাবে, ভালো কিছু দেখতে পারবে। সেখানে আমি মনে করি যে, বর্তমান সময়ে যে একটা টান তৈরি হয়েছে আর্টিস্টদের মধ্যে, প্রডিউসারদের মধ্যে। দুটোর মধ্যে একটু মন কষাকষি, একটু মনোমালিন্য। এই বিষয়গুলো থেকে বের হয়ে এসে পুরো কাজটা যেন ভালো হয় সেজন্য আসলে সবাইকে সমবেতভাবে কাজ করা উচিত এবং  যার যার জায়গা থেকে সামান্য স্যাক্রিফাইস করে হলেও যেন ভালো একটা গল্প তৈরি হয়, ভালো একটা গল্প বের হয়ে আসে, দশক পর্যন্ত পৌঁছায় এই বিষয়টা জন্য সবার মাথায় থাকে। সে আর্টিস্টিক হোক বা ডিরেক্টর হোক বা প্রোডিউসার হোক। যেই হোক না কেন কারণ চলচ্চিত্রের এই জোয়ার সময়ে কোনো কিছুতেই যেন এই জোয়ার বাধাগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টি আমাদের সবার খেয়াল রাখতে হবে।

বাংলা ইনসাইডার: ক্যারিয়ারে আপনার কোন চরিত্রটি করার বেশ ইচ্ছে আছে?

এলিনা শাম্মী: আসলে কোনো চরিত্রের প্রতি আমি বেশি আগ্রহী বা কোনো চরিত্রটি করতে আগ্রহী সেটা আসলে নির্দিষ্ট করে আমার বলা সম্ভব না। এটাই শুধু বলবো যে প্রত্যাশিত চরিত্র অনেক আছে। এক জীবনে আসলে ওই সাধ্য মেটার নয়। একটা চরিত্র যদি করে ফেলি মনে ওই চরিত্রটি যদি করতে পারি। একজন আর্টিস্টের আসলে আমৃত্যু সেই সাধটা থেকেই যায় যে অমুক চরিত্রটা যদি করতে পারতাম। সে আক্ষেপ কখনো শেষ হয় না। সেভাবে বলার কিছু নেই যেকোনো ভালো চরিত্র বা যেখানে চ্যালেঞ্জিং কিছু কাজ করার আছে, অভিনয়ের জায়গা আছে, নিজেকে তুলে ধরার জায়গা আছে, সেরকম চরিত্র হলেই আমি আগ্রহী এবং আমিও আসলে যে চরিত্রটির পাই না কেন আমার সবোর্চ্চ দিয়ে চেষ্টা করি সে চরিত্রটাকে একেবারে প্রাণবন্ত করে উপস্থাপন করার জন্য এবং আমি কখনোই আমি এলিনা সামনে থাকতে চাইনা যখন একটা চরিত্রের মধ্যে আমি বাস করি। তখন ঐ চরিত্রটাকেই ধারণ করি। তখন আসলে আমি আর আমি থাকি না আমি তখনই চরিত্রটি হয়ে যাই। তাই প্রত্যেকটি চরিত্রই আসলে আমার প্রত্যাশিত চরিত্র।

বাংলা ইনসাইডার: নাটকের সিন্ডিকেটের কথা প্রায়ই শোনা যায়। অভিনেত্রী হিসেবে আপনার ভাষ্য কি?

এলিনা শাম্মী: নাটক যে অদৃশ্য একটা সিন্ডিকেট, আবার দৃশ্যমানও বলা যায়। এটা অস্বীকার করার তো কিছু নেই। হয়তোবা যারা এই সিন্ডিকেটের সাথে বা যারা সিন্ডিকেট করে কাজ করছেন তাদের কাজের স্টাইলটা হয়তো এমনই। কিন্তু একটা কথা প্রায়শই শোনা যায় যে, আর্টিস্টের অনেক অভাব। এ কথাটা মাঝে মাঝে খুব হাস্যকর মনে হয়। আমাদের টেলিভিশন অভিনয় শিল্পী সংঘের ৭০০ শিল্পী আছেন যারা অনেক আগে থেকেই এই সংঘের সদস্য। এখন আমি যতটা জানি, প্রাথমিক সদস্য হিসেবে আরো ৪০০ সদস্য আছে। তো এতজন অভিনয় শিল্পীর মধ্যে কাজ করছে খুব সামান্য সংখ্যক। যখন বলা হয় যে, অভিনয়শিল্পীর অভাব তখন খুবই হাস্যকর মনে হয়। ঘুরেফিরে কিছু চেনা মুখ এবং যারা কাজ করছেন তারাই ঘুরে ফিরে আসছেন স্ক্রিনে। নতুনদেরকে নিয়ে কাজ করার চেষ্টা চ্যানেলগুলোর খুবই কম আছে। চ্যানেলের কম আছে বলেই পরিচালকরা সাহস করতে পারছেন না। নতুন অনেক ভালো শিল্পী আছে, অভিনয় শিল্পী সংঘের অনেক শিল্পী আছেন যারা বেকার এবং যারা কাজের জন্য সবসময়ই মুখিয়ে থাকেন। কিন্তু শিল্পীরা সবসময়ই অভিমানী, একটু আত্মমর্যাদাসম্পন্ন। যে কারণে তারা তাদের নিজেদের চাহিদাকে ওইভাবে প্রদর্শন করতে পারেনা পরিচালকদের কাছে। প্রদর্শন যদি করেও পরিচালকদের সেটা গ্রহণ করার মতো সাহস কিংবা সুযোগ নেই। এটা খুব দুঃখজনক। এই ব্যারিয়ার ভেঙ্গে ফেলে সব শিল্পীরা যেন কাজের সুযোগ পায়, কাজের সুযোগ তৈরি হয়। একজন শিল্পী হিসেবে আমি সব পরিচালকদের কাছে, চ্যানেলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের কাছে আকুল আবেদন করছি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭