ইনসাইড বাংলাদেশ

সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় এগিয়ে যাচ্ছে কুড়িগ্রামের মৎস্য খাত


প্রকাশ: 04/09/2022


Thumbnail

সরকারের বর্তমান মেয়াদে দেশের সকল সেক্টরে ধারাবাহিক উন্নয়নের অংশ হিসেবে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এই সেক্টরেও অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। মানুষের দেহের ভিটামিন, আমিষ এবং পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য মাছ মাংসের উৎপাদন যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে পাশাপাশি মৎস্য ও পশুপালনের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে একদিকে বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে।  অন্যদিকে, বিভিন্ন ধরনের দেশীয় এবং হাইব্রিড মাছের চাষ বৃদ্ধি, রেণু পোনা উৎপাদনের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এই অগ্রযাত্রায় পিছিয়ে নেই কুড়িগ্রাম জেলার মৎস্য চাষী, জেলে এবং উদ্যোক্তারা।

গত ২০১৯ সালে কুড়িগ্রাম জেলার মৎস্য কর্মকর্তা হিসেবে কালীপদ রায় যোগদানের পর নিজ উদ্যোগে কুড়িগ্রাম জেলা সদরসহ তার আওতাধীন নয়টি উপজেলায় মাঠ পর্যায়ে গিয়ে সরাসরি প্রান্তিক পর্যায়ের মাছ চাষী, জেলে এবং উদ্যোক্তাদের কাছে তাদের বিভিন্ন সমস্যা এবং সম্ভাবনার কথা শুনে তাদেরকে কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ, পরামর্শ সহ সার্বক্ষণিক বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছেন।

জেলার বিভিন্ন স্থান ঘুরে মৎস্য চাষী, জেলে এবং বিভিন্ন উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে জানা যায়, বিগত দিনে তাদের অনেক সমস্যা ছিলো যেগুলো প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, পরামর্শ এবং দিকনির্দেশনার অভাবে তারা মাছ চাষ করে সেভাবে লাভবান হতে পারিনি। কিন্তু গত তিনবছর যাবত কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালীপদ রায় আসার পর থেকে তারা অনেক সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি যেকোনো প্রয়োজনে তার সঙ্গে দেখা বা ফোনে কথা বলে সমস্যার সমাধান করতে পারছে। মাছ উৎপাদন বৃদ্ধিসহ এলাকার বিভিন্ন খাল খনন, জলাশয় এবং নদী ও বিলের সংস্কারসহ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে দিনরাত কাজ করে চলছেন।

এদিকে জেলা মৎস্য অফিস থেকে জানা যায়, গত তিন অর্থবছরে জেলা মৎস্য অফিস কর্তৃক নেয়া বিভিন্ন প্রকল্প অনুযায়ী জেলা এবং  বিভিন্ন উপজেলায় খাল বিল ও পুকুর খনন এবং সংস্কার হয়েছে প্রায় শতাধিক, বিভিন্ন জলাশয় এবং পরিত্যক্ত জলাভূমি সংস্কার করা হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। এছাড়াও বিলুপ্ত প্রজাতির দেশীয় মাছের রেণু পোনা উৎপাদন, কুড়িগ্রাম জেলার পানিতে গলদা চিংড়ি মাছ চাষের সম্ভাবনা কে কাজে লাগিয়ে গলদা চিংড়ি চাষ প্রকল্প, প্রশিক্ষণ প্রদান এবং বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রেখেছেন জেলার মৎস্য কর্মকর্তা। এছাড়াও দেশীয় মাছ রক্ষার্থে বিভিন্ন সময় মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল, চায়না চায়, রিং জাল সহ বিভিন্ন অবৈধ মাছ ধরার সরঞ্জামাদি জব্দ এবং জরিমানা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন। এর পাশাপাশি মৎস্য চাষীদের প্রয়োজনীয় ডাটাবেজ তৈরি, প্রশিক্ষণ প্রদান, সরকারি সহায়তা প্রদানসহ বন্যা এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে এবং মাছ চাষীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান, মাছের খাদ্য সহায়তা সহ সরকারের নেয়া বিভিন্ন কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে চলেছেন।

এদিকে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালীপদ রায়ের কাছে তার বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা জানতে চাইলে তিনি জানান, কুড়িগ্রাম যোগদানের পর থেকে আমি চেষ্টা করছি কুড়িগ্রাম জেলার স্থানীয় মৎস্য চাষ উৎপাদন বৃদ্ধি, দেশীয় মাছ চাষে উদ্বুদ্ধকরণ, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি সহ বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচি সততার সহিত সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করে এই জেলাকে মাছের পরিপূর্ণ অভয়াশ্রমে পরিণত করা এবং এই জেলার কিছু বিলুপ্ত প্রজাতির দেশীয় মাছ কে পুনরায় ফিরিয়ে এনে মাছের বংশবৃদ্ধি নিশ্চিত করা।

কালীপদ রায় বলেন, কুড়িগ্রাম জেলা নদ-নদীময় একটি জেলা। এখানে নদ-নদীর পাশাপাশি বিভিন্ন খাল-বিল, জলাশয় রয়েছে যেগুলো সঠিক পরিচর্যা এবং পুনঃখননের মাধ্যমে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি জেলার মাছ চাষে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে। আমরা ইতিমধ্যে যেসব নার্সারি পুকুর খনন, জলাশয় সংস্কার, বরোপিট সহ যেসকল প্রকল্প গ্রহণ করেছি তার সুফল ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছে স্থানীয় জনগণ এবং মৎস্য চাষী।

তিনি আরও বলেন, গত ২২ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই দেশব্যাপী পালিত হয়েছে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ। আমাদের এবারের প্রতিপাদ্য ছিল- “নিরাপদ মাছে ভরব দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ”। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমান মৎস্য বান্ধব সরকারের গৃহীত বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আমরা জেলা এবং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি প্রান্তিক পর্যায়ে জেলেদের জীবনমান উন্নয়নসহ আগামী দিনে সোনার বাংলা বিনির্মাণে সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশ তথা কুড়িগ্রাম জেলাকে মৎস্য উন্নয়নে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে একযোগে কাজ করতে হবে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় জেলে, মৎস্য চাষী, উদ্যোক্তাসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং গণমাধ্যমের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।

গত তিন বছরে কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য অফিস কর্তৃক বাস্তবায়িত প্রকল্প গুলোর তুলনামূলক উন্নয়ন কর্মসূচি প্রদান করলে সেখানে দেখা যায়, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ১০০ হেক্টর জলাশয়ে মৎস্য পোনা উৎপাদন এবং সংস্কার করা হয়েছে। এরমধ্যে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে উৎপাদন দেখানো হয়েছে ৩৯ হাজার ১৯৪ মেট্রিক টন এবং ২০২১-২২ অর্থবছরে সেটি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৬ হাজার ১১২ মেট্রিক টনে। এদিকে জলাশয় সংস্কার এবং খাল খননের পরিমাণ ছিল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ২৫ দশমিক ৮৮ হেক্টর, যা ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩২ দশমিক ০৪ হেক্টর। অর্থাৎ সার্বিকভাবে বিগত দিনের চেয়ে কাজের অগ্রগতি সন্তোষজনক বলে মনে করছেন অনেকেই। এছাড়াও উক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়নে কর্মসংস্থান এবং এর আওতায় উপকারভোগী সব মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার ব্যক্তি সুবিধা ভোগ করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭