ইনসাইড আর্টিকেল

বর্তমান করোনা পরিস্থিতিই কি নিউ নর্মাল?


প্রকাশ: 05/09/2022


Thumbnail

গত বৃহস্পতিবার ধানমন্ডি এলাকায় বসবাসরত আশিক সাহেব তার রুটিনমাফিক অফিসে গিয়েছিলেন। যথারীতি কাজ করছিলেন তিনি, কিন্তু ঘন্টাখানেক পরেই ঘটলো সে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা! "জ্বর"। বেশ কয়েকটা হাঁচি কাশি দিয়ে একাকার অবস্থা। গায়ে ১০০ মতন জ্বর তাপ থেকে অনুভব হয়। অফিসের অন্যান্য সহকর্মীরা যথাসাধ্য সাহায্য করলে তিনি সন্ধ্যা নাগাদ বাড়ি ফেরেন। পরদিন সকালে কিছু মনে সন্দেহ নিয়েই করোনা পরীক্ষা করাতে গেলেন! স্বাভাবিকভাবেই তার করোনা রিপোর্ট এলো পজেটিভ৷ তার কর্মক্ষেত্রে এই খবর জানানো মাত্র কেউ তেমন অবাক হলেন না। যারা গত সন্ধ্যায় তাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে সাহায্য করলো তাদের মধ্যেও দেখা গেল না ভয়ের চিহ্নমাত্র। তখন আশিক সাহেব ভাবতে থাকেন, ঠিক আজ থেকে এক বছর আগেও করোনা মানে ছিল মানুষের মনের আতংকের অন্য নাম।মানুষ শিউরে উঠতো যে নামে, এখন তেমন প্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায় না কিংবা বেশ হাতেগোনা। এক বছরে এমন আমূল পরিবর্তনের মানে কি আসলেই দেশের মানুষ এই করোনা পরিস্থিতির সাথে অভ্যস্ত হয়ে গেছে?

উত্তরটা যদি আমাদের কাছে চাওয়া হয়, তাহলে হয়ত আমরা সবাই একবাক্যে বলে উঠবো হ্যাঁ। ২০২০ সাল আর আজকের পরিস্থিতি যদি আমরা পর্যালোচনা করতে চাই তাহলেই তফাত টা আমাদের সামনে ভেসে উঠবে।  প্রথম করোনার সূচনা লগ্ন থেকে টানা একবছর বাংলাদেশে মানুষের মধ্যে এক ধরণের আতংক কাজ করতো।  বাসা থেকে বের হতেই ভয় পেত লোকজন। সেক্ষেত্রে চাকুরীজীবী রা চাকরিতে নিয়মিত যাতায়াতের জন্য ব্যবহার করতেন অধিক সুরক্ষার। এন নাইটি ফাইভের মুখোশে মানুষ যেন পরিচিত মুখগুলোই ভুলতে বসেছিল। বিভিন্ন কর্মশালা, চিকিৎসাকেন্দ্রেও ছিল অধিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। থার্মাল দিয়ে মাপা হতো শরীরের টেম্পারেচার, ৯৯ এর বেশি নির্ধারণ হলে কারো তার জন্য গ্রহণ করা হতো বিশেষ ব্যবস্থা। ডাক্তারদের ইউনিফর্মে পরিণত হয়েছে পিপিটি। আর এখন সেই সুরক্ষার কড়া পাহারাদারী অনেকাংশে নেই বললেই চলে৷ যারা কিছুটা স্বাস্থ্য সচেতন তারা কিছু সুরক্ষা সম্বলিত নিয়মাবলী যেমন, মাস্ক পরা কিংবা হাত স্যানিটাইজের ব্যবহার গুলো এখনো মেনে চলে৷ তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই চর্চা এখন শূন্যের পর্যায়ে। অফিস আদালতেও মাস্ক, স্যানিটাইজার এসবের ব্যবহার কমে এসেছে। অনেকে করোনা হলেও তা আমলে নিচ্ছেন না। একসাথে বসে কাজ করছে,  সামাজিক সকল মেলামেশা করে থাকছেন।

কিন্তু এই আমূল পরিবর্তন এর নেপথ্য গল্প কি তা নিয়ে বিস্তারিত হয়ত কেউ আলোচনা না করলেও সকলেই মনে মনে বিশ্বাস করেন করোনা ভীতি মানুষের মধ্য থেকে বেশখানিক লোপ পেয়ে গেছে। তাহলে শুরুর দিকে এত ভয়ের কারণ কি ছিল?

ব্যাপার টা বুঝা খুবই সহজ, শুরুর দিকে প্রতিষেধক বিহীন  মহামারি রোগে সংক্রমিত হয়ে প্রতিদিন যেহেতু হাজার হাজার মানুষ  প্রাণ হারাচ্ছিলেন সেখানে ভয় কাজ করা টা খুব স্বাভাবিক কেননা, মানুষের সহজাত প্রবৃদ্ধি মৃত্যু ভীতি। সেই থেকে ওই সময় নিজের এবং আশপাশের মানুষের জীবনের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অধিক সুরক্ষা গ্রহণ করার উদ্যোগ মানুষের মধ্যে দেখা যায় । তবে পরবর্তীতে যখন টিকা বাজারে আসে এবং মৃত্যুহার কমে আসে তখন মানুষ সাহস পেতে থাকে আবার মুখোশ বিহীন পৃথিবী ফিরে পাওয়ার আশায়। সেই আশায় এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রায় দুইবছর লকডাউনে বন্দী থেকে মুখোশের আড়ালে জমানো অভিব্যক্তিগুলো যেন এখন সকলে উজাড় করে জানাতে চায় একে অপরকে। টিকা নেওয়ার পর থেকে মানুষের মধ্যে সাহস বেড়েছে রোগ মোকাবিলা করার, কমেছে মৃত্যু ভয়, তৈরি হয়েছে নতুন উদ্যমে কিছু করার আগ্রহ।  মৃত্যু হারের কমে আসাটাই যেন এখন মানুষের কাছে স্বস্তি।

এর উপর ভিত্তি করেই মানুষ এখন অধিক সুরক্ষার জঞ্জালে হয়ত নিজেদের আর আবদ্ধ রাখতে চায় না৷ তাই অনেক ক্ষেত্রেই এই ভীতি মানুষের মধ্যে কাজ করছে না, ভয় কেটে যাওয়া মানেই অধিক সুরক্ষা জনিত কাজের প্রয়োগেরও অপসরণ হওয়া। তাই আজকাল আর অফিস আদালত কোথাও তেমন কঠোর সুরক্ষা ব্যবস্থা চোখে পরে না। করোনাকালীন সময়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আর শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভয় কাজ করছিল সকলের মধ্যে তুলনামূলক বেশি৷ কিন্তু শিক্ষার্থীদের জন্যও টিকার ব্যবস্থা করার পর এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে এই ভীতিও কিছুদূর কমেছে বলে দেখা যাচ্ছে।

তাই বলে কি করোনা সংক্রমণ হচ্ছে না? মানুষ করোনা দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে না? অবশ্যই হচ্ছে। চিহ্নিত হচ্ছে, চিকিৎসা নিচ্ছে,  তবে মৃত্যু হার কমে যাওয়ার ফলেই এখন আক্রান্ত ব্যক্তিরাও ভেঙে পড়ছে না৷ বরং সাধারণ সর্দি জ্বরের মতো পথ্য নিয়ে স্বাভাবিক জীবনের প্রাত্যহিক কাজগুলো চালিয়ে যাচ্ছে৷ এখন গড়ে প্রতিদিন দুই হাজারের অধিক নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং শনাক্ত ব্যক্তি চিহ্নিত এর সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে প্রায় ১৫৫ জনের মতো। আর মৃত্যু সংখ্যা প্রায় একজন। এই সংখ্যা যদি ২০২০ এর করোনা পরিস্থিতির সাথে মিলাতে যাই তাহলে প্রায় দ্বিগুণের বেশি সংখ্যা দাঁড়াবে।

এখন বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে টিকা নিয়ে। ব্যাপারটা বিস্তারিত বলতে গেলে দাঁড়ায় কিছুটা এমন যে একপক্ষ মানুষ এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী যে করোনার টিকা ছয়মাসের মতন কার্যকারিতা মেয়াদ আছে,  আবার আরেকদল মানুষ বিশ্বাস করেন একবার ইমিউনিটি ফর্ম হয়ে গেলে সেটা সারাজীবনের জন্য তৈরি হয়ে থাকে। চায়না, রাশিয়া সহ বিভিন্ন দেশ যারা এই পর্যন্ত টিকা আবিষ্কার এবং রপ্তানি করেছে তাদের বিভিন্ন গবেষণা ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহে এখনো এই বিতর্কের মূল বক্তব্য তুলে আনার জন্য কাজ চলছে৷

তবে বিতর্ক চলুক কিংবা না চলুক, এই টুকু বিগত এক বছরের জরিপ থেকে অনুমান করা সম্ভব করোনা ভীতি মানুষের ভেতর থেকে কমেছে। এমনি আশিক সাহেবের কর্মক্ষেত্রের অন্যান্য সদস্যদের মতো নির্ভয় দৃষ্টান্ত এখন প্রায় জনসংখ্যার অর্ধেক মানুষের মধ্যেই দেখা যায় এখনো করোনা পুরোপুরি চলে না যাওয়া সত্ত্বেও৷ বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই মানুষ করোনাকে সাধারণ ফ্লু এর মতোই বিবেচনা করা শুরু করেছে। যেটুকু ভীতি মানুষের মধ্যে অবশিষ্ট তাও অল্প সময়ের ভেতর নির্মূল হয়ে যাবে এবং এই পরিস্থিতি হবে মানুষের জন্য "নিউ নর্মাল।" এই পরিস্থিতির সাথে সহনশীল হয়ে জীবন স্বাভাবিক করে তোলার নামই নিউ নর্মাল কিংবা নতুন স্বাভাবিকত্ব।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭