ইনসাইড থট

শুভ হোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর


প্রকাশ: 05/09/2022


Thumbnail

এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা আমরা তোমাদের ভুলবো না। হ্যা - সেই এক সাগর রক্তের মাঝে আছে ভারতের ৩০০০ নিহত ও ১২ হাজার আহত সৈনিক ও অফিসারের রক্ত। ১৯৭১ সালে আমরা পাকিস্তানিদের গণহত্যা , নিপীড়ন, নির্যাতন, লুন্ঠন, ধর্ষণ দেখেছি, যারা আমরা প্রতিদিন লড়াই করে বেঁচে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা করেছি সেই দুর্যোগের, মহাবিপদের সময় আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যারা ছিলেন তারা ওই ভারতীয় সৈনিক। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যখন আমরা পাগড়ি পরা শিখ সৈন্য দেখেছি তখন আমাদের বুকে গভীরে লুকিয়ে থাকা আত্মাটা প্রাণ ভোরে নিঃস্বাস নিয়েছিল। আমরা সেদিন বুঝেছিলাম স্বাধীনতা কি -যে স্বাধীনতার স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু আমাদেরকে দেখিয়েছিলেন।

আমাদের আজকের তরুণ প্রজন্ম সেই দৃশ্য যেমন দেখেনি তেমনি তারা জানে না যুদ্ধের ভয়াবহতা কি রকম। কিভাবে আমাদের যুবক -তরুণীরা পালিয়ে বাঁচতে চাইতেন সেটা তাদের অনেকের অজানা। সেদিন ৯০ লক্ষ সনাতনী বাঙালি ভারতের বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে এক মানবেতর জীবন যাপন করেছিল। সেদিন ভারত সরকার আমাদের পাশে ছিল। আমার ভায়ের রক্তে রাঙা একুশে ফেব্রুয়ারিকে যেমন আমি ভুলতে পারিনা তেমনি ১৯৭১ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী যেভাবে বাঙালির স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে ভারত সরকার ও সৈনিকদেরকে নিয়ে তা মানবতার ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় অধ্যায়।
  
১৯৭১ সালে আমাদের দেশ স্বাধীন হলো বটে কিন্তু নেই কোনো বৈদেশিক মুদ্রা। সেদিন ভারত সরকার বাংলাদেশকে দিয়েছিলো ২০ কোটি ডলার। আর পাকিস্তানিরা আত্মসাৎ করেছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালির সকল বৈদেশিক অর্জন।একদল পাকিস্তানী প্রেমিক ওই ১৯৭১ সালের বিভীষিকাময় দিনগুলোকে ভুলে অনেক অপপ্রচার করে বেড়াতো। ২৫ বছরের একটি শান্তি চুক্তি বঙ্গবন্ধু করেছিলেন। সেটাকে তারা বলতো গোলামীর চুক্তি।  

যুদ্ধ শেষের তিন মাসের মাথায় ভারতীয় সৈন্যরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে চলে গিয়েছিলো।এতো বড়ো একটা অবদানকে আমার ভুলে গিয়ে কিছু সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি আর পানি দেয়াকে নিয়ে অপরাজনীতি করতে আমাদের কেউ কেউ দ্বিধা করেননি।

আজ ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২ প্রায় ৩৫ মাস পরে জননেত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে যাচ্ছেন। দিল্লির কাছে আমাদের তেমন কিছু চাওয়ার নেই। আমরা চাই শান্তি। আমাদের সীমান্তের মানুষগুলো যেন কোনো প্রকার হয়রানি বা নিপীড়ণের শিকার না হয়, দেখলেই যেন গুলি চালানো না হয় সেই দাবি থাকবে। দুই দেশের মাঝে যেন সুসম্পর্ক থাকে সেটাই আমাদের সকলের কামনা। যেকোন বিপদে দুই দেশ যেন পরস্পরকে কাছে পায় সেটাই আমাদের প্রত্যাশা। 
 
আমরা চাই রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার দাবিতে ভারত বাংলাদেশের পাশে থাকবে। ভারত ১৯৭১ সালে ৯০ লক্ষ শরণার্থীকে নিয়ে কি বিপাকে পড়েছিল তারা তাদের অজানা নয়। এই বিপুল পরিমান শরণার্থীর দুর্ভোগের যন্ত্রনায় অস্ট্রেলিয়ার দার্শনিক পিটার সিঙ্গার অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়শোনা রেখে মানবতার সেবায় নিয়োজিত হয়েছিলেন। আজ রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়া।  বাংলাদেশ মানবিক কারণে তাদের প্রবেশ করতে দিয়েছিলো। বিশ্বশান্তি ও মানবাধিকার সংরক্ষণে উভয় দেশ একে অপরের সাথে থাকবে। আমাদের নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষায় পানির ন্যায্য হিস্সা দিতে ভারত কুন্ঠিত হবে না। ভারতকে বাংলাদেশ ট্রানজিট দিয়েছে জন দুর্ভোগ লাঘব করতে। বন্ধুত্বের এই প্রতিদান বাংলাদেশ চায়। ভারত যে বন্ধুত্বের দৃষ্টান্ত ১৯৭১ সালে সৃষ্টি করেছিল বাংলাদেশ তা ভুলে যায় নি। যুগ যুগ ধরে আমরা সেই সত্যকে আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানিয়ে যাবো। বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক চিরজিবি হোক সকল বাঙালির কামনা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই সফর এর মাধ্যমে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক আরও এক ধাপ উপরে যাবে বলে আমার ধারণা। শুভ হোক মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর।  


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭