ইনসাইড এডুকেশন

উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের খুঁটিনাটি


প্রকাশ: 06/09/2022


Thumbnail

আপনি একজন শিক্ষার্থী, এবং আপনি অনেক দিন ধরেই কী ভাবছেন দেশের বাইরে যাওয়ার কথা? পরিকল্পনা করছেন বাইরে যাওয়া নিয়ে কিন্তু পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছেন না তথ্যের ঘাটতির জন্য, কিংবা দোটানায় ভুগছেন কিভাবে কী করবেন সেই ভেবে? তাহলে আজকের এই লিখা আপনার জন্যই। 

শিক্ষা জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের এমন মনোভাব তৈরি হয় যে দেশের বাইরে যাবে, উচ্চশিক্ষার জন্য। স্কলারশিপে কিংবা নিজেদের ব্যবস্থাপনায়। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনার। আসুন সবার আগে জেনে নেই কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ স্কলারশিপ দিয়ে থাকে কিংবা আপনি স্কলারশিপের জন্য এপ্লাই করতে পারবেন। 

যে যে বিশ্ববিদ্যালয় সমূহ স্কলারশিপ দিয়ে থাকে- 

উচ্চশিক্ষার জন্য বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রথম পাঁচটি পছন্দের দেশ এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, মালেয়শিয়া, অস্ট্রেলিয়া,জার্মানি এবং কানাডা সর্বপ্রথমে। 

অনেক দেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে বৃত্তি প্রদান করে থাকে। হাংগেরি, চায়না, জাপান কিংবা কমনওয়েলথ। এ ধরণের  স্কলারশিপের মতো বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় বৃত্তিগুলো বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর মাধ্যমে আবেদন করা হয় এবং স্কলারশিপের জন্য মূলত এই দেশ গুলোর জন্যই চাহিদা বেশি। স্কলারশিপ নিয়ে বাইরে পড়াশোনা করতে আগ্রহী এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাংলাদেশে দিনদিন বাড়লেও, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় তা অনেক কম। অর্থাৎ সে সব দেশে যদি স্কলারশিপ এর জন্য এপ্লাই করতে চান, তবে অবশ্যই যে বিশ্ববিদ্যালয়ে এপ্লাই করবেন সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের রিকোয়ারমেন্ট সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে। তাতে করে সুযোগ সুবিধা জেনে আবেদন করা যাবে৷ পাশাপাশি কোনো জটিল পরিস্থিতি সম্মুখীন হতে হবে না। 

বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদনের জন্য নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা:

একেক  বিশ্ববিদ্যালয়ের একেক শিক্ষাগত চাহিদা রয়েছে। আপনি কোন অবস্থানে আবেদন করতে চাচ্ছেন সেটাও বিবেচনার মুখ্য বিষয় সমূহের একটি। সাধারণত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ওয়েবসাইটে কোন স্কলারশিপের জন্য নূন্যতম কতটুকু যোগ্যতা প্রয়োজন সে সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়ে থাকে। সেটুকু ঘাটাঘাটি করেও নিজের কাঙ্ক্ষিত স্কলারশিপ সম্পর্কে সব ধরণের তথ্য পাওয়া সম্ভব। যেমন, আপনি যদি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়ে আন্ডারগ্রেডের জন্য যেতে চান তাহলে এক ধরণের স্কলারশিপ আবার কেউ যদি গ্র্যাজুয়েটের জন্য চায় সেক্ষেত্রে অন্য ব্যবস্থা। এছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় এর মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে তথ্য পাওয়া যায়। প্রত্যেকটি স্কলারশিপের জন্যই আবেদন করার জন্য একটি নির্দিষ্ট ডেডলাইন থাকে। তাই আগে থেকেই আপনার প্রয়োজনের কাগজপত্র প্রস্তুত থাকাটা বাঞ্ছনীয়। এতে করে আপনার নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই আবেদন সম্পন্ন করতে সুবিধা হবে। 

স্কলারশিপ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয়:

আপনি কোন দেশে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করছেন তার উপর সেই দেশের রিকোয়ারমেন্ট ভ্যারি করে। ধরুন,  যদি আপনি ফ্রান্স বা জার্মানিতে এপ্লাই করে থাকেন তাহলে সে দেশের ভাষার প্রতি আপনার দক্ষতা থাকলে সে বিষয়টিকে ইতিবাচক বলে ধরা হবে এবং স্কলারশিপ পেতে সুবিধা  হবে। বিশেষ ভাষার দক্ষতা থাকা প্রয়োজন এমন দেশগুলোতে।  তাছাড়া IELTS,  GRE, TOEFL এই ধরণের পরীক্ষা সমূহে ভালো নাম্বার অর্জন করলেও স্কলারশিপ নিশ্চিতে সাহায্য হয়।

এর বাইরে, আপনি যদি বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী হন তাহলে সিজিপিএ কিছুটা অবদান রাখে স্কলারশিপ পেতে। যত ভালো সিজিপিএ থাকবে স্কলারশিপ এর সুবিধা তত বৃদ্ধি পাবে। 

প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

 সাধারণত মেয়াদসম্পন্ন পাসপোর্ট, সকল পরীক্ষার সনদ, ভাষাগত দক্ষতার সনদ অনেক দেশেই এসব কাগজের নোটারি পেপার চায়। আবার যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে বা যুক্তরাজ্যের ক্ষেত্রে নোটারি করার প্রয়োজন নেই। 

বিশেষ দক্ষতা কিংবা অভিজ্ঞতা:

শিক্ষাগত যোগ্যতার পাশাপাশি যদি কোনো সংস্থা, সংগঠনের সাথে যুক্ত থাকার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে, নেতৃত্বের গুণাবলি থাকে তাহলে ইতিবাচক দিক হিসেবে সাধারণত ধরা হয়৷ অনেক ব্যাপার স্কলারশিপ এর ক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয়। সেটা হতে পারে নিজের পড়াশোনার বাইরে এক্সট্রা-কারিকুলার একটিভিটিজ।

খেলাধুলা, অলিম্পিয়াডে অংশগ্রহণ, বিভিন্ন সেবামুলক সংগঠনে কাজ করা, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদি। পড়াশোনার পাশাপাশি কোনো গঠনমূলক কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করাটাও খুব গুরত্বপুর্ন একটা ব্যাপার। বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পুঁথিগত বিদ্যায় বিশ্বাসী না। আপনার ওভার অল পারফর্মেন্স তারা দেখবে। এসব ব্যাপার তাদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো পাবলিকেশন, রিসার্চ ওয়ার্ক থাকে তাহলে সেসব যোগ করাও প্রয়োজনীয়।  

রিকমেন্ডেশন লেটার:

অনেক বিশ্ববিদ্যালয়েই স্কলারশিপের জনহ আগের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের রিকমেন্ডেশন লেটারের দরকার হয়। এই লেটারের ভাষা যদি আট দশজন আবেদনকারীর মতোই হয়, তবে বৃত্তি পাবার সম্ভাবনা কমে যাবে। তাই আপনি যেই শিক্ষকের অধীনে পড়াশোনা করেছেন, তাকে যথেষ্ট সময় দিয়ে একটি রিকমেন্ডেশন লেটার লিখে নিন। 

স্টেটমেন্ট অফ পার্পাস (SOP):

বেশিরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রেই বৃত্তি পাবার জন্য স্টেটমেন্ট অব পারপার(SOP) অর্থাৎ কেন আপনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে চান সেটা সম্পর্কে সুন্দর একটা কনসেপ্ট পেতে চাইবে।আপনার লেখার মাধ্যমে আপনাকে তুলে ধরতে হবে, কেন আপনি তাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে যেতে চান। আপনার প্ল্যান কি? আপনাকে কেন স্কলারশিপ দেয়া উচিত। আপনার স্পেশালিটি কি? এই ব্যাপারগুলো তুলে ধরবেন। অর্থাৎ এটা একরকমের চিঠি বলতে পারেন। এই চিঠির মাধ্যমেই ওনাদেরকে কনভিন্স করতে হবে যে, আপনি তাদের স্কলারশিপের জন্য রাইটফিট! যারা ইতোমধ্যে বিভিন্ন স্কলারশিপ পেয়েছেন, তারা SOP লেখার ক্ষেত্রে ক্রিয়েটিভ বা সৃজনশীল হবার জন্য বলেছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এই লেটার

কিভাবে আবেদন করা হয়:

কাগজপত্র সব তৈরি থাকলে সাধারণত বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ওয়েবসাইটে স্কলারশিপ এর সার্কুলার দিলেই আবেদন করার সুযোগ হয়। সেখানে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, সার্টিফিকেট,  কোনো অ্যাচিভমেন্ট এর স্বীকৃতি ইত্যাদি যোগে আবেদন করতে হয়।  এর ভাইরে কখনো কখনো পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ বা তথ্য মাফিক দেওয়া আবেদনের নিয়মে আবেদন করতে হয়। সেক্ষেত্রে সাবধানতার সাথে সব কাজ করতে হয় এবং কাগজপত্র গুছাতে হয়। তা না হলে স্কলারশিপ বাতিল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে কিংবা স্কলারশিপের জন্য সিলেক্ট না হতেও পারেন। তাই কাগজপত্রের জমা দেওয়ার মধ্য দিয়ে আবেদনের প্রাথমিক এবং গুরুত্বপূর্ণ ধাপ সাবধানতার সাথে পার করতে হয়।

স্বপ্ন যত বড়ই হোক, কখনো দুষ্প্রাপ্য না যদি সঠিক পরিকল্পনার সাথে আগানো হয়। কৃতীদের সাহায্য নিন প্রয়োজনে, পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে এগিয়ে যান আপনার লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে। কাগজপত্র গুছানো, বৃত্তির জন্য আগানো, সিলেকশন, ভিসা এসব কিছুই লম্বা প্রক্রিয়ার কাজ সেক্ষেত্রে রাখতে হবে ধৈর্য এবং হাল না ছাড়ার মনোভাব। তবেই স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে বিনা অর্থ ব্যয়ে পড়ার স্বপ্ন সত্যি হয়ে উঠবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭