কালার ইনসাইড

ভক্তরা ভোলেনি, সালমানকে ভুলেছে এফডিসি


প্রকাশ: 06/09/2022


Thumbnail

কেয়ামত থেকে কেয়ামত ছবির মাধ্যমে এ দেশের সিনেমা জগতে আবির্ভাব ঘটেছিল এক উজ্জ্বল নক্ষত্রের। যিনি তার মনোমুগ্ধকর অভিনয় দেখিয়ে, অতি অল্পসময়ে বাংলা সিনেমাপ্রেমী দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নিতে সক্ষম হন। একের পর এক সুপার হিট সিনেমা উপহার দিয়ে তিনি সবাইকে তাক্ লাগিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি আর কেউ নন, কোটি ভক্তের নায়ক সালমান শাহ্। আজ ৬ সেপ্টেম্বর, এই প্রয়াত কিংবদন্তী নায়কের ২৬তম মৃত্যুবার্ষিকী । বাংলা ইনসাইডার  পরিবারের পক্ষ থেকে তার প্রতি শ্রদ্ধা।



সালমানের পারিবারিক নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমান বড়। ছোট ভাই শাহরান চৌধুরী ইভান। ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেটের দারিয়া পাড়ায় নানার বাড়িতে জন্মগ্রহন করেন এই নায়ক।

১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহানের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে ঢাকাই ছবিতে অভিষেক ঘটে দুই নতুন মুখের– সালমান শাহ ও মৌসুমী। ১৯৯৪ সালে সালমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে ‘অন্তরে অন্তরে’ ও ‘স্নেহ’ নামের দুটি ছবিতে অভিনয় করেন মৌসুমী। এই জুটির সর্বশেষ ছবি ‘দেনমোহর’ (১৯৯৫) ।

দু’দশক আগে সালমান অভিনীত সিনেমা দেখার জন্য, দেশের সিনেমা হল গুলোতে তরুণ-তরুণীরসহ সবশ্রেণির দর্শকদের ভিড় লেগেই থাকত। কিন্তু হঠাৎ করে কোথা থেকে এক কালো মেঘ এসে এই নক্ষত্রটিকে চিরদিনের জন্য আড়াল করে দেয়। বাংলা সিনেমার আধুনিক পুরুষ খ্যাত কালজয়ী এই মহানায়ক, সবাইকে শোকের সাগরে ভাঁসিয়ে দিয়ে অতি অকালে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর, নায়ক সালমান শাহ্’র অকাল মৃত্যুর খবর শুনে শোকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো পুরো বাংলাদেশের জনগণ।



বাংলা সিনেমাপ্রেমী দর্শক, ভক্তরা সালমানকে এতটাই ভালোবাসত যে, তার এমন অকাল মৃত্যুর শোক সহ্য করতে না পেরে সেই সময় অনেকভক্তই আত্মহত্যাও করেছিলেন। যা বিশ্ব চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বিরল এক ঘটনার জন্ম দিয়েছে।

বাংলাদেশের সিনেমা শিল্পে নায়ক সালমান শাহ্’র অবদান অসামান্য, অথচ সালমানের মৃত্যুর এতগুলো বছর পার হওয়ার পরও আজ পর্যন্ত এই মহায়নাকের স্মরণে কিছুই করা হয়নি।এডিসিতে মৃত চলচ্চিত্রকর্মীদের একটি নামফলক রয়েছে। সেই তালিকায় নেই সালমানের নাম। অনেক অভিনেতার নামে ফ্লোরের নামকরণ করা হয়েছে, এখানেও উপেক্ষিত সালমান। বেশ অনেক দিন ধরেই এই নায়কের ভক্তরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন তাদের প্রিয় নায়কের নামে একটি ফ্লোরের নামকরণ করার কথা। তবে তা আজ পর্যন্ত দৃশ্যমান হয়নি। 



ঢাকাই ছবিতে সফল জুটির শীর্ষে অবস্থান সালমান-শাবনূরের। প্রয়াত চলচ্চিত্র নির্মাতা জহিরুল হক দুই নবাগতকে নিয়ে নির্মাণ করেন ‘শুধু তুমি’ (১৯৯৪)। এটি সালমানের দ্বিতীয় ছবি। শাবনূর এর আগে সাব্বির, মেহেদী, অমিত হাসানের সঙ্গে কয়েকটি ফ্লপ ছবি করেছেন। সালমানের শেষ ছবিতেও নায়িকা ছিলেন শাবনূর।

‘সুজন সাথী’, ‘বিক্ষোভ’, ‘স্বপ্নের ঠিকানা’, ‘মহা মিলন’, ‘বিচার হবে’, ‘তোমাকে চাই’, ‘স্বপ্নের পৃথিবী’, ‘জীবন সংসার’, ‘চাওয়া থেকে পাওয়া’, ‘প্রেম পিয়াসী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আনন্দ অশ্রু’, ‘বুকের ভিতর আগুন’– মোট ১৩টি ছবিতে অভিনয় করেছেন এই জুটি।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক রায়হান মুজিবের জানান, সালমান নিঃসন্দেহে বাংলা সিনেমার এক প্রভাব বিস্তারকারী অভিনেতা ছিলেন। আধুনিক সিনেমার এক নতুন দিক উন্মোচন করেছিলেন তিন। যদিও তার সঙ্গে কাজ করা হয়ে ওঠেনি, এটাকে দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কি বলবো? কিন্তু ভেবে দেখুন ওর প্রভাব, অভিনয় গুণ এমনকি অর্থনৈতিক দিক থেকেও ছিলো ওই সময় শীর্ষে। এমন অভিনেতাকে সরকার বা এফডিসি মনে না রাখলেও সুখের কথা এই যে ভক্তরা তাকে ঠিকই মনে রেখেছেন।

কথা হয়েছিলো বিশিষ্ট চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ’র সঙ্গে। তিনি এ ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র প্রায় ধ্বংসের দিকে, সেখানে কারো নাম মনে রাখার মতো ভাবনা বিএফডিসির আছে বলে দেখছি না। এটা সালমানের মতো নায়ককে আমরা মনে রাখান জন্য কিছুই করতে পারছি না।’ শুধু যে সালমান তা নয়, বাংলা চলচ্চিত্রে আরো অনেক এমন শিল্পী ছিল যাদের মনে রাখার জন্য বিএফডিসিতে কিছুই করা হয়।



উল্লেখ্য, দীর্ঘ ২৬ বছর পার হলেও তুমুল জনপ্রিয় এই নায়কের মৃত্যুর রহস্য আজও উদঘাটন হয়নি। তিনি আত্মহত্যা করেছেন- এই মর্মে কয়েকবার তদন্ত সংস্থা তাদের প্রতিবেদনও দাখিল করেছে আদালতে। যদিও তার পরিবার অর্থাৎ মা নীলা চৌধুরী এখনো সালমানের মৃত্যুকে আত্মহত্যা মানতে নারাজ। তার মতে খুন হয়েছেন এ নায়ক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭