টেক ইনসাইড

পেপারলেস বাংলাদেশ কি আদৌ সম্ভব?


প্রকাশ: 07/09/2022


Thumbnail

ভাবুন তো! যদি এক সকালবেলা উঠে আপনি দেখতে পান, দেশে কাগজের ব্যবহার একেবারে নাই হয়ে গেল! শূন্যের কোঠায়। অফিসে গিয়ে দেখলেন সকল প্রাতিষ্ঠানিক কাজ করা হচ্ছে অনলাইন ফোরামে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে বাচ্চাদের ডিজিটাল অ্যানিমেশন এর মাধ্যমে টপিক অ্যানালাইসিস করে বুঝানো হচ্ছে৷ সকাল বেলা চায়ের দোকানে খবরের কাগজ নিয়ে কোনো বয়স্ক আলোচনা করছেন না, বরং নিজের ফোন থেকে জেনে নিচ্ছেন দেশ বিদেশের খবর। সব ধরণের হিসাব,  ফর্ম, বই, দলিল, কাগজপত্র সব কিছু সফট কপি না অনলাইন পেপারে হাতে থাকা ল্যাপটপ,  মোবাইল কিংবা কম্পিউটার ডিভাইসে সুরক্ষিত, তাহলে ব্যাপার টা কেমন হবে? চমৎকার তাই না? অত্যাধুনিক জীবন কিংবা ঝঞ্জাটবিহীন জীবনের জন্য এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রয়োজনীয়। ভাবতে আরামদায়ক এই কল্পনা সত্য হলে কতই না ভালো হতো!

এমন  দেশের স্বপ্নই দেখছেন আমার বা আপনার মতো অনেকে যারা চায় জীবন মানের উন্নয়ন। আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হওয়ার জন্য পরিকল্পিত ধাপ অনুসারে এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। ব্যবসা ক্ষেত্রে টেকনোলজিক্যালি রিচ হওয়া সেক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।  কেননা, যত উন্নতির দিকে ধাবিত হতে থাকবে তত সহজ এবং দ্রুততার সাথে কাজ সম্পন্ন করা কিংবা সুষ্ঠুভাবে গুছিয়ে নেওয়ার জন্য তখন মানুষের আর কষ্ট করতে হবে। একটা ক্লিকের মাধ্যমেই সব সঠিক ভাবে করা সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। এখনো দেশে এমন টেকনোলজির ব্যবহার এর চর্চা দেখা যায়। যেমন, বাসায় বসে বাজার করা, অনলাইন ফর্ম পূরণ করা, ওষুধ কিনা, টিকিট কাটার মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় নানা ধরণের কাজ। কিন্তু এখনো সকল প্রতিষ্ঠান কিংবা সোর্স বা সব শ্রেণীর মানুষ তুলনামূলক ভাবে কম অভ্যস্ত পেপারবিহীন কাজকর্মে। যেমন, পেপারলেস বলতে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজেশন বুঝানো হচ্ছে, সেখানে বই পত্রও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বয়ে নিয়ে যাওয়ার আর প্রয়োজন হবে না। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অফিস আদালতে বয়ে নেওয়ার কষ্ট করতে হবে না, ডেস্কটপ কিংবা হাতে থাকা যেকোনো ইলেকট্রনিক ডিভাইসেই রেখে দেওয়া যাবে সকল কাগজপত্র সুরক্ষিত ভাবে। আবার নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ থেকে শুরু করে বড় কোনো অফিশিয়াল,  ফর্মাল কাজও করা হবে সব অনলাইনে কিংবা ডিভাইস টেকনোলজির মাধ্যমে।

ভাবতেই রোমাঞ্চকর অনুভূতি হয়। বিভিন্ন উন্নত দেশ সমূহে এইভাবেই বেশিরভাগ কার্যকলাপ হয়ে থাকে।  কিছুদিন আগে এক জরিপে দেখা গেছে,  উন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রায় ৬৬ শতাংশ কাজ টেকনোলজি, অনলাইন ভিত্তিক। সেসকল দেশের নাগরিদের মতে কাগজ ছাড়া এসব কাজ করতে তাদের বরং সহজ লাগে।  তাদের ক্ষেত্রে কাগজ বয়ে নেওয়া কিংবা সেসব প্রিন্ট করানোটাই বাড়তি কাজ বলে মনে হয়। গবেষকদের মতে, যেসকল দেশে জনশক্তির মোট অংশের মোটা একটা অংশ জনসম্পদে পরিণত হতে পেরেছে তাদেরই এমন চর্চা দেখতে পাওয়া যায়।

দেশে ইতোমধ্যে অনেক কর্মক্ষেত্রে পেপারলেস ওয়ার্ক করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছেন৷ অটোমেটেড এবং পেপারলেস প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার প্রচেষ্টা করছে ডিএনসিসি। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেছেন, প্রতিনিয়ত অটোমেশনের পরিধি বাড়ছে। সেই ধারাবাহিকতায় ডিএনসিসি একটি পেপারলেস প্রতিষ্ঠানে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে। পেপারলেস বাংলাদেশ হওয়ার সুযোগ সুবিধাও তুলে ধরা হচ্ছে প্রতিনিয়ত।  এখন প্রশ্ন হচ্ছে, পেপারলেস বা জিরো কাগজ ব্যবহারে কি ধরণের উপকার হতে পারে মানব জীবনে বা দেশে?

সাধারণত,  যদি এমন সময়ের শুরু হয় যেখানে আসলে আর কাগজের ব্যবহার হচ্ছে না, তবে মানুষ ঘরে বসেই কাজ করতে পারবে। অর্থ উপার্জন, বিল পরিশোধের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেকে শুরু করে সকল ধরণের কাজ মানুষ ঘরে বসে যেমন করতে পারবে তেমনি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও কেউ গিয়ে এই কাজ করতে চাইলে তাকে লাইনে দাঁড়িয়ে কিংবা প্রচুর কাগজ বয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না৷ হ্যাসেল ফ্রি এবং দ্রুত কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। মানুষের জীবনে প্রোডাক্টিভ কাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। কোনো দেশের জনসংখ্যার মূল জনসম্পদে রূপান্তর হওয়ার মধ্য দিয়েই যেহেতু সে দেশের উন্নয়ন নির্ভরশীল এক্ষেত্রে টেকনোলজিক্যালি ব্যারিয়ার কমে গিয়ে প্রোডাক্টিভিটির মান বৃদ্ধি পেলেই মান উন্নয়ন সুসম্পন্ন হয়।

এখনো অবধি বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানেন না সঠিকভাবে। এইজন্য সচেতনতা প্রচার করতে হবে যেন মানুষ অনলাইন ভিত্তিক কাজ শিক্ষার আগ্রহ পায়, এগিয়ে আসে। তাহলেই পেপারলেস বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ হওয়া সম্ভব।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭