ইনসাইড আর্টিকেল

কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ আজও কম, কিন্তু কেন?


প্রকাশ: 08/09/2022


Thumbnail

গত ঈদের ছুটিতে, এক সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাড়ি ভরতি মেহমান। আত্মীয়স্বজন অনেকেই এসেছেন বাসায় বেড়াতে ছুটি উপলক্ষে। যথারীতি, মন ভালো হয়ে গেল সকলকে দেখে। ব্যস্ত নগরীর ব্যস্ত জীবনে পারিবারিক আড্ডা, কিংবা একটা গেট টুগেদার, পুরাতন স্মৃতি চারণ মন ভালো করে দিতে পারে নিমিষেই। মন খারাপের ঘটনা ঘটলো দুপুর নাগাদ। কারণ পরিবারের একজন কথা তুলেছিল চাকরিতে যোগদানের কথা নিয়ে। সেই আড্ডায় থাকা সদ্য বিয়ে হয়ে আসা একজন নারী তখন জানালো তার চাকরি করার প্রতি অনীহার কথা। মোটা অংকের টাকা খরচ করে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে ভালো নম্বর এবং সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও তিনি কোনো রকম চাকরি কিংবা কাজে নিযুক্ত থাকতে চান না। সংসারে অতিরিক্ত টাকা প্রয়োজন নেই বলে বিয়ের পর তিনি এই সিদ্ধান্ত নিলেন৷ আমার মনে তখন প্রশ্ন, তাহলে এত পড়াশোনা করা কেন? দেশের প্রায় নারীদের প্রাতিষ্ঠানিক চাকরির প্রতি এমন অনীহা কেন? কিছুদুর ঘাটাঘাটি করে দেখতে পেলাম, বাংলাদেশ ভূখণ্ডে নারীদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সংখ্যা তুলনামূলক কম। কিন্তু কেন সেটা? আসুন জেনে নেই!

বাংলাদেশের ভূখণ্ডে সামাজিক কারণে বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন নারীরা দূর্বল কিংবা যেকোনো কাজ করার জন্য যথেষ্ট নয়। খুব কম শতাংশ মানুষ পুরোপুরি সমতার বিষয়টি আমলে নিতে পারেন। এমন সমাজে বড় এবং বেড়ে উঠার পরে কোথাও না কোথাও নারীদের মনেও এমন চিন্তাভাবনার বিকাশ হতে থাকে যে শিক্ষিত হওয়াটাই বড় স্বার্থকতা। কিন্তু সে শিক্ষাকে কাজে লাগানো টা শিক্ষার স্বার্থকতারই একটা অংশ হিসেবে যে বিশ্বব্যাপী পরিগণিত হয় তা খুব অল্প সংখ্যক নারী বিশ্বাস করতে পারে। নিজেদের কঠোর এবং কঠিন বাস্তবতা উপেক্ষা করার মতো শক্তি যে নিজেদের ভেতরই একেকজন লালন করেন তা অনেক নারী বিশ্বাস করে উঠতে পারেন না। আত্মবিশ্বাসের কমতি, সামাজিক পরিস্থিতি আমাদের যে গতানুগতিক মনোভাব তৈরি করে দিয়েছেন তার বাইরে ভাবতে অনেকে আরামবোধ করেন না বলে নিজের ইচ্ছাতেই এমন সিদ্ধান্ত বেছে নেন। 

নিজেদের সিদ্ধান্ত ছাড়া, অধিকাংশ ক্ষেত্রে সামাজিক এবং পারিবারিক প্রভাব মূখ্য ভুমিকা পালন করে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরপত্তাহীনতায় ভুগে বলে বেশির ভাগ নারী কর্মক্ষেত্রে অনিহা প্রকাশ করে। রাস্তাঘাটে কিংবা অফিস আদালতে অপ্রীতিকর ঘটনা হতে পারে এই আশঙ্কায় প্রায় ৮ শতাংশ নারী স্নাতক অর্জনের পরও ঘরে বসে কাজ কিংবা কর্মক্ষেত্রে যোগদানের প্রতি নানা ধরণের অনিহা প্রকাশ করে থাকেন। আবার অনেকের ক্ষেত্রে পরিবার হয়ে দাঁড়ায় বাঁধা। নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে কিংবা আদিম প্রবৃদ্ধির কারণে তৈরি ভাবনার উপর নির্ভর করে বারণ করে অভিভাবক অথবা পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা। 

তবে নারীদের এগিয়ে আসা এবং স্বাবলম্বী হওয়ার আগ যদি পর্যালোচনা করি, তখন দেখা যাচ্ছে, গত দশ বছরে এই হার তিনগুণ বেড়েছে। অর্থাৎ নারীরা নিজ উদ্যোগে নিজের পরিচয় তৈরির জন্য বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রে যোগ দিচ্ছেন। কাজ শিখছেন। আরো দেখা যায়, গার্মেন্টস,  ইটকল, তথা কায়েক শ্রম জনিত কাজে নারীদের অংশগ্রহণ ব্যাপক হারে হয় কিন্তু মেধাভিত্তিক কাজে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে নারীরা আজও পিছিয়ে। প্রতিবছর যেকোনো শিক্ষাবোর্ড কতৃত ফলাফলে আমরা দেখতে পাই,  পাশ হার নারীদের বেশি, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা, সংশোধনি পরীক্ষা ইত্যাদিতে নারীদের পাশের হার, অংশগ্রহণের হার বেশি থাকে। প্রশ্ন হচ্ছে এত সংখ্যক ভালো ফলাফল ধারী শিক্ষার্থীরা কি সব কয়জন কর্মক্ষেত্রে আসে? উত্তরটি হলো না! যতসংখ্যক নারী বিভিন্ন পরীক্ষায় অংশগ্রহণ বা ফলাফল ভালোর নিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে বের হলেও তারা নিজ অনিচ্ছা কিংবা বিভিন্ন আর্থসামাজিক চাপের মুখে পরে পিছিয়ে পড়ে। 

বিবিএসের সর্বশেষ ২০১৬-১৭ সালের শ্রমশক্তি জরিপ অনুযায়ী দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। তাদের মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ। আর আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণের হার ৩৮ শতাংশ।  গত ৮ মার্চ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের আলোচনা সভায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে চায় সরকার। এজন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ ৫০ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এই লক্ষ্য কেবল সরকারের প্রচেষ্টাতেই সম্ভব না, নারীদেরও নিজ উদ্যোগে,  কিছু করার তাগিদে এগিয়ে আসতে হবে বলে জানান তিনি। 

এই পর্যায়ে কাজী নজরুল ইসলামের বিখ্যাত সে কবিতার লাইন মনে পরে যায়, 
      “ বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর    
    অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। "

অর্থাৎ যেকোনো বিশাল এবং সুদৃঢ় উন্নয়ন গড়ে তোলার জন্য নারী ও পুরুষের সমান সমান অংশীদারীত্ব, দায়িত্ব, অংশগ্রহণ এবং সহযোগিতার প্রয়োজন। যেদিন বাকি ১২ শতাংশ নারী তাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য মনস্তাত্ত্বিক এবং আর্থ-সামাজিক সকল শেকল ভেঙে নিজ ইচ্ছায় এগিয়ে আসতে পারবে, সেদিন হবে সমান অংশগ্রহণ,  আর সেদিন জাতির বিপত্তি ঘুচবে বলে আশা রাখি।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭