ইনসাইড আর্টিকেল

সাহিত্য অবলম্বনে সিনেমা তৈরির নানা দিক


প্রকাশ: 09/09/2022


Thumbnail

আজকাল সময় সল্পতা, পড়ালেখার চাপ কিংবা ধৈর্য্যের অভাব জনিত কারণে ভালো ভাবে বই পড়া হয় না। প্রতিদিন একবার করে চেষ্টা করি,  পরে দুই তিন পাতা পড়ে মনোযোগ ধরে রাখা যায় না। মানসিক ক্লান্তি বা ধৈর্য্য কমে যাওয়াটাই ইদানীং এই অবস্থার জন্য বিশেষ ভাবে দায়ী বলে মনে হচ্ছে৷ খবর নিয়ে জানতে পারলাম আমি একা না। আশপাশের অনেকেই এই অবস্থার শিকার। কিন্তু একটা সময় ছিল মানুষ অবসর বিনোদনের জন্য বই পড়তো বেশি। এখন সিনেমা, খেলাধুলা এসব বিষয় যা সহজেই দেখে শেষ করা যায় বা বুঝা যায় তাতে মানুষের আগ্রহ ধরছে বেশি। বিষয়টা কিছুটা এমন, একটা বই পড়তে যদি সময় লাগে চারদিন সেক্ষেত্রে, একটা সিনেমা দেখে কোনো গল্প জানতে সময় লাগছে ১ ঘন্টা সর্বোচ্চ ২ ঘন্টা। অধিক ব্যস্ততার এই যুগে তাই মানুষ সিনেমা সিরিজেই বেশি মনোযোগী।  আবার কেউ কেউ বই পড়তে গিয়ে, ব্যাপার টা বা গল্প স্লো যাচ্ছে মনে করেন, কখনো ভিউজুয়ালি ইমাজেশন করতে কারো কারো হচ্ছে সমস্যা। তাহলে করণীয়? বিশাল বই এই ভান্ডারের কত শত কালজয়ী উপন্যাস বা সাহিত্যের গল্পই জানা হবে না কত মানুষের এই বই এর থেকে বিমুখতা কিংবা নগরসভ্যতার কারণে তৈরি ক্লান্তি আর সময়হীনতার কবলে পরে। তবে, যদি উপন্যাসের গল্পের আদলে তৈরি হয়ে যায় সিনেমা? তাহলে ব্যাপারটা কেমন হয়? 

না, ব্যাপারটা মোটেও নতুন না! তবে বাঙালি চলচিত্রের ক্ষেত্রে এই ধরণের সিনেমা তৈরির দৃষ্টান্ত খুব একটা বেশি না। কয়েক বছর পিছনে গেলেই দেখতে পাবো অস্কারজয়ী সিনেমা পরিচালক সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত সিনেমা পথের পাঁচালি।  এই সিনেমা বিভূতিভূষণ বন্দোপ্যাধায়ের উপন্যাস  পথের পাঁচালির অবলম্বনে বানানো। এই বই যখন লিখা হয়েছিল, কতজন ভেবেছিল এই উপন্যাসের উপর একটা কালজয়ী সিনেমা তৈরি হতে পারে? তবে হয়ে গেল তো! আর এমন ভাবে তা সমাদৃত হলো যে বাঙালি যতদিন টিকে থাকে এই সিনেমা একটা বাঙালি ফিল্মমেকিং এবং ক্রিয়েটিভ কালচারের ট্রেডমার্ক হয়ে থাকবে। সুতরাং অদূর ভবিষ্যতে ডিজিটাইলেশনে যদি পিডিএফ ভার্সনেই এই বই পড়ার মতো কারো সময় বা সুযোগ না থাকে তাহলে সে সিমেমা দেখেই জেনে নিতে পারবেন অসাধারণ এই গল্প। 

কিন্তু বাংলাদেশে চলচিত্রের ক্ষেত্রে কর্মাশিয়াল কিংবা আর্টফিল্ম জনরার বাইরে পরিচালকরা বায়োগ্রাফি বা উপন্যাস ভিত্তিক সিনেমা তৈরিতে তেমন আগ্রহ প্রকাশ করেন না বলে ধারণা হয় না। অথচ বাঙ্গালি সংস্কৃতি সাহিত্য ভান্ডারে যে বিপুল পরিমাণ সমৃদ্ধ উপন্যাস গল্পের যোগান মজুদ আছে, তা দিয়ে একটা শতাব্দীর চিত্রনাট্য অনায়াসে তৈরি করা যায় যদি তা সঠিক ভাবে তৈরি করার মতো করা যায়। অনেক সময় ভালো গল্প অবলম্বনে সিনেমা বানানো হলেও সে সিনেমা অতটা সমাদৃত হয় না। এর পিছনের কারণ তৈরি করার ক্ষেত্রে অপূর্ণতা। কিন্তু সঠিকভাবে যদি নতুন গল্পের উপর মনোনিবেশের আগে সাহিত্যে তৈরি সব গল্পকে সঠিকভাবে কাজে লাগানো যায় তাহলে অনেক ভালো সিনেমা যেমন তৈরি হতে পারে তেমন গল্প প্রেমিদেরও গল্প জানার এবং দেখার দুই স্বাদই পূরণ হতো।  

অনেকে আবার গল্প অবলম্বনে নানা জনরার সিনেমা চাইলে তৈরি করতে পারে এসব গল্প অবলম্বনে৷ গত এক দশকে সাহিত্যের উপর নির্ভর করে তৈরি সিনেমার হার মাত্র ৬ শতাংশ। এই থেকেই আমরা বুঝতে পারি সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে এই দিকের অংশগ্রহণ বা এই ভাগ নিয়ে কাজ করার প্রবণতা কমই। পরিচালকদের মতে, অনেক সময় বড় সাহিত্য বা উপন্যাসের সঠিক ভিউজুয়াল রিপ্রেজেনটেশনের জন্য সঠিক দক্ষতা দরকার, অনেক কাজের ব্যাপার আছে সূক্ষ্ম যা সাধারণত সকলের দ্বারা সম্ভব হয় না। গতানুগতিক সিনেমার প্রোডাকশন এর তুলনায় সাহিত্য ভিত্তিক সিনেমার প্রোডাকশন এর কাজে বেশি চাপ থাকে৷ আর এই চাপ সম্পূর্ণ ডেডিকেশন ছাড়া খুব কম মানুষের মধ্যে দেখতে পাওয়া যায়।

বর্তমান জেনারেশনের অনেকেই টেকনোলজি নির্ভরতার কারণে, এবং অন্যান্য আর্থ-সামাজিক চাপ এবং অবসরের চাহিদা বিবর্তনের কারণে এসব সাহিত্যের রুপ, রস গ্রহণ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তবে দেশীয় পরিচালকরা নিজ উদ্যোগে বিশাল এই সাহিত্য ভান্ডারকে যদি সিনেমার জগতে এনে নিয়মিত কাজ করতে পারেন, তাহলে মানুষের সাহিত্য এবং এই অপূর্ব সৃষ্টি গল্পগুলো থেকে দূরত্ব কিছুদূর কমে আসে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭