ইনসাইড পলিটিক্স

কাদের বনাম নানক


প্রকাশ: 09/09/2022


Thumbnail

আগামী ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কাউন্সিলকে ঘিরে আওয়ামী লীগ এখন কর্মচঞ্চলে  মুখর। শোকের মাস আগস্টে আওয়ামী লীগের জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কমিটিগুলোতে কোনো সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি। কিন্তু এখন সেপ্টেম্বর মাস আসার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে অনিষ্পন্ন কমিটিগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর এই সমস্ত সম্মেলনগুলো ছাপিয়ে মূল আলোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কে হবে? আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিয়ে বিভিন্ন রকম আলোচনা হচ্ছে, বিভিন্ন ব্যক্তির নাম বলা হচ্ছে। তবে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ পরিস্থিতিগুলো পর্যালোচনা করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এবারের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দৌড়ে দুইজন নেতার মধ্যে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে এবং এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা এখন দৃশ্যমান।

আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি তৃতীয়বারের মতো সাধারণ সম্পাদক হতে আগ্রহী। আর এ কারণেই তাকে এখন অনেক বেশি ব্যস্ত এবং লাইমলাইটে দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন বিষয়ে তিনি বিরোধী দলের কঠোর সমালোচনা করছেন এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তাকে বক্তব্য রাখতেও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপির সমালোচনা বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে তিনি যত মুখর দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তিনি ততটাই নীরব। অনেকেই ধারণা করছেন যে, দলের কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে তার ভূমিকা এখন আগের মত নেই। অনেকটাই শিথিল হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন যে, বিভিন্ন জেলায় কমিটিগুলো সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার তত্ত্বাবধানে হচ্ছে এবং সাংগঠনিক সম্পাদকরা সরাসরি আওয়ামী লীগ সভাপতির সাথে আলাপ-আলোচনা করেই দলের বিভিন্ন স্থানীয় পর্যায়ের কমিটিগুলো করছেন। এর অনেক ক্ষেত্রেই ওবায়দুল কাদের এসব ব্যাপারে জানেন না। এটি একটি ইঙ্গিত বহন করে বলে আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করছেন। তারা মনে করছেন যে, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাদেরের কর্তৃত্ব এখন অনেকটাই কমে গেছে।

কাদেরের কর্তৃত্ব যেখানে কমে গেছে সেখানেই আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক অনেক বেশি লাইমলাইটে এসেছেন। কাদের যেমন নিজেকে গণমাধ্যমের সামনে আক্রমণাত্মক ভূমিকায় উপস্থাপন করছেন, বিএনপির কঠোর সমালোচনা করছেন, জাহাঙ্গীর কবির নানক ঠিক তেমনি দলের সাংগঠনিক বিষয়ে মনোনিবেশ করছেন। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলছেন যে, এই মুহূর্তে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক দলের সভাপতির আস্থাভাজন ব্যক্তি। অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানকের ওপরেই আওয়ামী লীগ সভাপতি আস্থা রেখেছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে জেলা পরিষদ আইন। এই আইনটি যখন সংশোধন করা হয় তখন এখানে প্রশাসক নিয়োগের কথা বলা হয়েছিলো এবং প্রশাসক নিয়োগে আমলাদের বসানোরও একটি পরিকল্পনা করা হয়েছিলো। কিন্তু জাহাঙ্গীর কবির নানক প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে এখানে আমলাদের না বসিয়ে যারা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আছেন তাদেরকে প্রশাসক নিয়োগ করলে রাজনৈতিক কোন্দল এবং সংকট কমে যাবে। প্রধানমন্ত্রী তার এই প্রস্তাবটি গ্রহণ করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির দেওয়া অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ অ্যাসাইনমেন্ট জাহাঙ্গীর কবির নানক অত্যন্ত নিষ্ঠা এবং দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, সিলেটের হযরত শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংকট নিরসন। আর এই দায়িত্বগুলো পালন করে তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থা অর্জন করেছেন বলেই অনেকে মনে করেন। তৃণমূল থেকে ধাপে ধাপে উঠে আসা জাহাঙ্গীর কবির নানক একজন ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাও বটে। গত নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি কিন্তু মনোনয়ন না পাওয়াটাই তার জন্য শাপে-বর হয়েছে। এরপর থেকেই তিনি আওয়ামী লীগ সভাপতির আস্থাভাজন ঘনিষ্ঠ নেতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। দলের তৃণমূল পর্যন্ত সাংগঠনিক খোঁজ-খবর তিনি রাখেন, স্থানীয় পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে তার যোগাযোগ আছে এবং রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক দক্ষতার সমন্বয় রয়েছে তার মধ্যে। এ জন্যই এবার কাউন্সিলের আগে দলের নেতাকর্মীদের প্রথম পছন্দ জাহাঙ্গীর কবির নানক। কিন্তু আওয়ামী লীগের সমস্যা হলো যে, খুব কম ক্ষেত্রেই জনপ্রিয় নেতারা সাধারণ সম্পাদক হতে পারেন। কাজেই শেষ পর্যন্ত নানক-কাদেরের লড়াইয়ে কে জিতবেন, সেটি যেমন প্রশ্ন আবার এই দুইজনের বাইরে তৃতীয় কেউ যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হবেন না সেটিও নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারে না। কারণ, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি সব সময় একটি চমকের নাম।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭