ইনসাইড থট

ছাত্র রাজনীতি নিয়ে ভাববার সময় নেই


প্রকাশ: 09/09/2022


Thumbnail

আমি এখন নিজেকে নিয়ে ভাবি। সুতরাং, ছাত্র রাজনীতি নিয়ে আমার ভাববার সময় নেই। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় আমার কর্মস্থল। আমার বেগম সাহেবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। আমি ভাবি কিভাবে আমি কর্মস্থলে মনের প্রফুল্লতা নিয়ে পৌছাবো! বাটা সিগন্যাল থেকে সিটি কলেজ যেতে আমাদের সময় লাগে ২০ মিনিট। আর জাহাঙ্গীরনগর যেতে সময় লাগে ২ থেকে আড়াই ঘন্টা।  ফিরতেও অনুরূপ বিড়ম্বনা! এভাবে কি চাকরি করা যায়?

আমাদের VIP ছাত্ররা বাপের অফিসের গাড়ি কিংবা নিজেদের গাড়িতে করে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে যান। তাদের জন্য এই বিড়ম্বনা। বলতে বলতে যখন আমরা ক্লান্ত তখন উত্তরের মেয়র স্কুল বাসের সম্ভাব্যতা নিয়ে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছেন। সেখানে অভিভাবকদের দাবি - নিরাপত্তা দিতে হবে। তাহলেই তাদের VIP সন্তানেরা বাসে করে স্কুলে যাবেন!

এরই মাঝে ফেসবুকের কল্যাণে দেখলাম প্রচন্ড প্রতিবাদ। মেয়র সাহেবের সমালোচনায় মুখর অনেকেই। কিছুদিন আগে একটি অনলাইন পত্রিকার সম্পাদক মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী দিপু মনিকে প্রেস ক্লাবের এক অনুষ্ঠানে বলছিলেন যানজট ও VIP ছাত্রদের কার বিলাসিতার কথা। তিনি তিন ঘন্টা ব্যয়ে মিরপুর থেকে প্রেস ক্লাব এসেছেন। আর আমাদের প্রিয় বোরহান কবির ভাইতো সোনারগাঁও থেকে ফিরে গেছেন।

আমরা সকলেই বুঝি। যানজটের কথা বলে এখন আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে কোথায় যেতে দেখিনা। কিছুদিন আগে মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব আবদুল মান্নান যানজটকে দেরিতে আসার কারণ চিন্নিহিত করলেন। তিনি নাকি প্রতিদিন ওই যানজট ঠেলে অফিসে যান। আমার পরিচিত একজন সচিব খুব ভোরে অফিসে চলে আসতেন। এবং অফিস এসে ঘুমাতেন।

এভাবে আমাদের দিনের পর দিন VIP দের চাপে পিষ্ট হয়ে বেঁচে থাকছি পঙ্গু হয়ে। আমাদের আয়ু কমে যাচ্ছে। আমাদের মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছে।  কিন্তু VIP দের গাড়ি কেনা ও গাড়ি চড়া কমছে না।

অনেকেই বলেন মেট্রো রেল আর উড়াল সড়ক হয়ে গেলে সমস্যা থাকবে না। আমি সেটা বিশ্বাস করতে পারি না। ৯/১১ এর আগে বিদেশ গিয়েছিলাম। ৯/১১ পর ওদের মন বদলে যায়। বিদেশ যাবার আগে মনে হতো কত সুখ বিদেশে! গিয়ে না বুঝলাম। ৯/১১ পর রূপটা যখন দেখলাম তখন পণ করলাম দেশেই ফিরে যাব। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়বো। বিদেশে যারা আগে থেকেই আছেন তাদের সকলকে বলতাম আমরা এমন সোনার বাংলা গড়বো তখন আপনারা দেশে ফিরে আসবেন। আমার সেই স্বপ্ন মিথ্যে হয়ে গেছে ! আমি তাদের সামনে এখন মাথা নিচু করে থাকি। আমি আমার নিজের সমস্যার সমাধান করতে পারি না  আর দেশ গড়বো!

কয়েক দিন আগে একটি সংবাদ দেখছিলাম - হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। কেন যাচ্ছে ? কারণ ওই VIP! এখন আর কারও বিশ্বাস নেই যে দেশটা সকলের জন্য বসবাস উপযোগী হবে। যারা ক্ষমতায় তাদের চোখে টাকার নেশা। টাকা বানাও বিদেশ পাচার করো এখান থেকে ভাগো! নিরেট সত্যি কথাটি মানতে হয়তো মন চাইবে না।  কিন্তু এটাই সত্য তথা মহাসত্য।

কে করবে ভালো? রোগ রন্দ্রে রন্দ্রে! মাননীয় প্রধানমন্ত্রীতো প্রায় বলেন - সকলকে কেনা যায়। তিনি একা সৎ হয়ে কি করবেন? ছাত্র রাজনীতির প্রয়োজন আছে আবার নেই। যে রাজনীতি হলের সিট দখল করে, যে রাজনীতি ছাত্রদেরকে দাসে পরিণিত করে সেই রাজনীতির প্ৰয়োজন নেই।

এই লেখা লিখবার আগে বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়িতে গিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য সাবেক সচিব জনাব নজরুল ইসলাম খানের সঙ্গে দেখা করা। আমার চাচা জনাব আলম এলাকায় কলেজ করতে চেয়েছিলেন। ঘরও তুলেছিলেন। নাম দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়। রাতের অন্ধকারে সেই ঘর ভেঙে ফেলা হয়। সে জায়গায় মাটি ভরাট করে বাণ্যিজিক প্লট করেছেন জমির দাবিকৃত মালিক। কিন্তু আদালতে বিষয়টি গড়ানোর ফলে এখন থমকে আছে। আমাকে এলাকার লোক মনে করে অনেক ক্ষমতাবান। তাই বারবার আমাকে একটু দেখতে বলে। আমি বিগত ৭ বছর ঘুরছি নামের অনুমোদনের জন্য। কবে হবে জানিনা। গুরুজনের অনুরোধ মানতে হয় তাই যাই। যদি বিড়ালের কপালে কিছু ঘটে!

সকাল থেকেই ভাবছিলাম কি নিয়ে লিখবো। এরই মাঝে রানীর তিরোধান। জুম্মার নামাজ পড়ে ফেরার পথে পাশের বাড়ির বারান্দায় চোখ আটকে গেলো। ও আল্লাহ ডাবল গ্রিল! আমাদের CNG তে গ্রিল, বাস চালক গ্রিলের ভেতর। VIP রাও ওই নিরাপত্তা হীনতার কথা বলেন ! আমিও নিরাপদ নই - এইতো সেদিন আণবিক শক্তি কমিশন এর মেধাবী অফিসাররা মারা গেলেন। ওই তো উত্তরা জসীমউদ্দীনের মোড়ে গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেলেন। ওইবার আমাদের এক ছাত্র উপর থেকে রড পড়ে মারা গেলো!

গত কাল শ্যালো টিউবওয়েল এর ছাউনির নিচের আশ্রয় নিয়ে ৮ জন মারা গেলো! একদল লোক মাটির নিচের পানি বিনা করে সুন্দর ব্যবসা করছে। কেউ বালু চুরি করছে, কেউ কলমের খোঁচায় চুরি করছে। একজনতো বলে ফেললেন - ক্ষমতায় যিনি তার কথাই আইন।  একজন বিচারক সেটাকেই সমর্থন করলেন।

চারিদিকে এতো অনাচার এতো অবিচার! ১৭ বছর আমরা ঘুরছি মাত্র ৬ শতাংশ জমির মালিকানা পেতে। কত বিচারক আসলেন গেলেন আমাদের অপেক্ষা শেষ হয় না। সম্প্রতি কিছু ঘটনার কথা শুনে বন্ধুরা বলেন মামলা করে দেন। আমি বলি - আমি এখনো পাগল হয়নি। সরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করব আমি আর মজা লুটবেন উকিল সাহেবরা। ফতুর হবে সরকার আর আমি। চীনে নির্বাচিত সরকার নেই , কিন্তু আদালত আছে জনগণের পাশে।  কিন্তু আমার দেশে আদালতে জিততে টাকা লাগে।

বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার পেতে লেগেছে ৩৫ বছর। রেজা কিবরিয়া পথে পথে ঘুরছেন পিতার বিচার চেয়ে। কিছুদিন আগে এক শিশু কাঁদতে কাঁদতে বলছে - বাবাকে ফিরে পেলে বাবার হাত ধরে স্কুলে যাবো।  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকের কন্যা কত বছর পর বিচার পেয়েছে সেটা আমাদের জানা।  কত বছর পর বিসিএস চাকরি পেয়েছে সেই মহিলা সেটাও আমাদের জানা।

আমি ছাত্র রাজনীতি চাই না - কারও মায়ের বুক খালি হোক আমি চাই না। আমি ছাত্র রাজনীতি চাই - যাতে আয়ুব খান, জিয়া, এরশাদ যেন বাংলার মসনদে না বসে।  এখনও হলে র্যাগিং হয়।  এখনও হলে নির্যাতন হয় ছাত্র রাজনীতির নামে। ওই ছাত্র রাজনীতি আমি চাই না।

আমি আমার কথা ভাবি। আমার সমস্যা যানজট। আমার সমস্যা নিরাপদ সড়ক। আমি আমার কথা ভাবি। আমি আমার ন্যায্য পাওনাটা চাই। আমি অনেক রাজনীতি করেছি। একদিন বিপদে সকলকে মেসেজ দিয়েছি। কাউকে পাইনি। কেউ পারেনি আমার সমস্যার সমাধান করে দিতে। বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করি অথচ বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সরকার ক্ষমতায় থাকতে নিপীড়ত বঞ্চিত হই- আর যারা বঙ্গবন্ধুকে অমর্যাদা করতে পারে তারাই প্রজেক্ট পায়, নিয়োগ পায়! আমি বঙ্গবন্ধুর ছবি উঠাই আর যারা নামায় তারা খুব ভালো থাকে সব আমলে। সেগুলো আবার আমাদের বঙ্গবন্ধুর সৈনিকেরাই দেয়। প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা এবার ভেবে দেখো ছাত্র রাজনীতি চাও কি চাও না? মন দিয়ে পড়াশোনা করো সব পাবে। রাজনীতি করলে বঞ্চনার শিকার হবে? কবি আবু বকর সিদ্দিকী ১৯৭৪ সালে কবিতালাপ গোষ্ঠীর অনুষ্ঠান শেষে আমাকে অটোগ্রাফ দিয়ে লিখেছিলেন - "বঞ্চনার জীবন যেন না আসে।" তোমরা সিদ্ধান্ত নেবে কবির ওই কথাটি ভেবে। তরুণ যুবকেরা নিজেকে নিয়ে ভাবো -নিজেকে নিয়ে ভাবা ভালো।রাজনীতি তোমাকে রিক্ত করে দেবে-তুমি কি চাও?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭