ইনসাইড থট

বঙ্গবন্ধুর সহকর্মীদের শেষ বাতিটিও নিভে গেল


প্রকাশ: 12/09/2022


Thumbnail

আজ খুব ভোরবেলা যখন জানতে পারলাম যে, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আর নেই তখন বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। শুধুমাত্র আওয়ামী লীগ নয়, তিনি আমার সহধর্মিনীর ফুফাতো বোন এবং সেই কারণে বিয়ের পর থেকে তার সাথে আমাদেরে আলাদা একটা যোগাযোগ ছিল। সাজেদা আপাও সবসময় আমাদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। সম্প্রতিকালে এক বছরেরও বেশি হবে যখন আমি যেতাম তখন উনাকে বুঝিয়ে দিতে হত এবং উনি আমাকে তখন চিনতে পারতেন। সুতরাং আপা মাঝে মাঝেই বেশ অসুস্থ থাকেন, আল্লাহর রহমতে বলা চলে মোটামুটি পূর্ণ জীবন বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সাথে এবং পরবর্তী তার কন্যার আদর্শের সাথে এক সুতোর ওপর চললেও কোনো সময় এদিক-ওদিক হয়নি। এভাবেই তিনি পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। সবাইকে এক সাথে তুলনা করা ঠিক না কারণ একের জনের অবস্থান একের জায়গায়। তারপরও আওয়ামী লীগের প্রয়াত হোসেন জিল্লুর রহমান এবং তার সহধর্মিনী আইভি রহমানের মতো সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী আপাকেও প্রশানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা একটা সন্মান দিতেন। সেটা সকলেরই জানা। আমার জানা মতে বঙ্গবন্ধুর সাথে রাজনৈতিকভাবে এদের মধ্যে সবচেয়ে কাছে আসেন প্রথমে  সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। আমি যতদূর শুনেছি আমার সহধর্মিনীর কাছ থেকে তিনি যখন স্টুডেন্ট তখনই বঙ্গবন্ধু তাকে তার সততার জন্য সংগঠনে নেয় এবং সেখান থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কখনোই বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছেড়ে যাননি। 

আমি যতটুকু জানি সাজেদা চৌধুরী সবার সাথে মোটামুটি ভাবে যোগাযোগ করতেন। এমনকি ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আওয়ামী লীগের কঠিনতম সময়েও তিনি কাজ করেছেন। তিনি সারা জীবন এরপরে বঙ্গবন্ধুর জীবন শেষ হয়ে গেলে তার কন্যা আসার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগকে করে রেখেছেন। আবার বঙ্গবন্ধুর কন্যার হাতে যখন আওয়ামী লীগকে দেওয়া হয় তখনও তার সাথে তিনি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একই সঙ্গে ছিলেন। দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনাও তাকে ফুফু হিসেবেই মানতেন এবং শেষ দিন পর্যন্ত সেভাবেই সন্মান দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর সাথে প্রথম থেকে যারা রাজনীতি করতেন তার মধ্যে সাজেদা চৌধুরী ছিলেন অন্যতম এবং বঙ্গবন্ধুর শেষ বাতিঘর হিসেবে তিনি আজ চলে গেলেন। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগের যারা ইতিহাস গড়েছিলেন তাদের শেষ মেম্বার ছিলেন সাজেদা চৌধুরী।

সাজেদা চৌধুরীকে অনেকভাবেই হয়তো মূল্যায়ন করা যাবে। তাকে নিয়ে অনেকে অনেক কিছু লিখবেন যারা তাকে অনেক কাছে থেকে দেখেছেন। আমিও মোটামুটি কাছে থেকেই আপাকে দেখেছি। আমি আমার ব্যক্তিগত একটি ঘটনা উল্লেখ করতে চাই আর সেটা হলো, আমি যখন ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ হেরে যায় তখন কেয়ারটেকার গভমেন্টে এসেই আমাকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তখন আমি ডিজি ছিলাম। তখন আমি মামলা করি। বিভিন্ন কারণেই আমি মামলায় হেরে যাই। এমতাবস্থায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাতে আমার চাকরি হয়। যাওয়ার আগে আমার নেত্রী শেখ হাসিনাকে বলে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু নেত্রী যদি আমাকে না যেতে দেন তাহলে তো আমার আর যাওয়া হবে না। তখন আমি সাজেদা আপাকে গিয়ে জানাই যে আমি যেতে চাই এবং আমি যদি বাইরে থাকি তাহলে আমি এই কাজ করতে পারবো। তখন সাজেদা আপা আমাকে নিয়ে নেত্রীর কাছে গেলেন। নেত্রীকে বলার পর তিনি বলেন যে, আচ্ছা, ঠিক আছে।

নেত্রীর বিভিন্ন কঠিন সময় নিয়ে সাজেদা আপার সঙ্গে কথা বলতাম। সাজেদা আপা সবসময় সবকিছু ইতিবাচকভাবে দেখতেন এবং নিদের্শনা দিতেন। আমি বলব আওয়ামী লীগ হারিয়েছে একজন পরীক্ষিত ব্যক্তিত্ব, দেশ হারিয়েছে একজন নির্লোভ রাজনীতিবিদ, আর ব্যক্তিগতভাবে আমি হারিয়েছি আমার বড় বোনকে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭