ইনসাইড থট

শেখ রেহানার জন্মদিনে তাঁর জীবনাদর্শের সন্ধান


প্রকাশ: 13/09/2022


Thumbnail

গ্রিক নাট্যকার সফোক্লিসের আন্তিগোনে ট্র্যাজেডিতে ইডিপাসের কন্যা আন্তিগোনে রাজা ক্রিওনের নির্দেশের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজের ভাইয়ের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিল। রাজার আইনি হুকুম না মেনে আন্তিগোনে রাজশক্তির বিরুদ্ধে পারিবারিক ধর্মে প্রতিষ্ঠিত নৈতিকতার আদর্শ প্রতিষ্ঠা করার দুঃসাহসিকতা দেখিয়ে প্রতিবাদী নারী চরিত্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করে। সাহসী উচ্চারণে রাজা ক্রিওনের প্রশ্নের জবাবে নিজের ভাই পলিনিকেসের প্রতি শোক প্রকাশ ও তার শব সংরক্ষণ করার যুক্তি তুলে ধরেছিল। ওই পরিস্থিতিতে রাজত্বের স্বার্থ রক্ষা করে নিজেকে মহিমান্বিত করেনি সে। এজন্য আন্তিগোনে কালোত্তর এক  নৈতিকতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এক  প্রতিবাদের নাম, সাহসের নাম আন্তিগোনে। পরিপ্রেক্ষিত এক রকম  নয় কিন্তু আন্তিগোনের সাহস, স্বজনের জন্য আত্মত্যাগ এবং খুনি চক্রের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজে কষ্ট স্বীকার করার প্রত্যয় লক্ষণীয় শেখ রেহানার জীবনেও। আসলে খুনি ও পাকিস্তানপন্থীদের বিরুদ্ধে নৈতিক সংঘাতের কাহিনি রয়েছে শেখ রেহানার জীবনেও। আত্মসচেতন এই নারীর ঔদার্যের পরিচয়ও অনন্য। দেশ ও বাঙালি জাতির সামনে আত্মপরিচয় তৈরি করে স্বমহিমায় গৌরবান্বিত তিনি।

২.
১৩ সেপ্টেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের এই দিন তিনি টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৫৪ সালের ৩০ মে থেকে ১৯৫৫ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন। পুনরায় তিনি কারাগারে নিক্ষিপ্ত হন ১৯৫৮ সালের ১২ অক্টোবর। অর্থাৎ শেখ রেহানার জন্ম থেকে বেশ কয়েক বছর বঙ্গবন্ধুর মুক্ত জীবনে বিচরণের সুযোগ ঘটেছিল। যদিও তখন তিনি রাজনৈতিক কাজে পুরোমাত্রায় নিমজ্জিত। ১৯৫৫ সালের ৫ জুন তিনি গণপরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ১৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানের জনসভা থেকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন দাবি করা হয়। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের কার্যকরী পরিষদে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রদান করা না হলে দলীয় সদস্যরা আইনসভা থেকে পদত্যাগ করবেন। ২৫ আগস্ট পশ্চিম পাকিস্তানে এক ইউনিট প্রতিষ্ঠা বিষয়ক বিল সম্বন্ধে আলোচনাকালে তিনি পাকিস্তান গণপরিষদে একটি গুরুত্বপূর্ণ বক্তৃতা দেন। ‘পূর্ববাংলা’ নামটি বিসর্জন দিয়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামকরণে তিনি জোর আপত্তি করেন। একইসঙ্গে বাংলাভাষাকে রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা, যুক্ত নির্বাচন পদ্ধতি প্রবর্তন এবং প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত ঝুলিয়ে রাখা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ২১ অক্টোবর আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিল অধিবেশনে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শেখ মুজিব দলের নাম থেকে ‘মুসলিম’ শব্দটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব পেশ করলে আওয়ামী লীগ অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়। কাউন্সিল অধিবেশনে তিনি পুনরায় সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দেখা যাচ্ছে, ১৩ সেপ্টেম্বর শেখ রেহানার জন্ম হলেও শিশুকন্যাকে নিয়ে বঙ্গবন্ধু ব্যস্ত নন। তিনি তখন দলের কাজে নিবেদিতপ্রাণ নেতা। তবে বড় মেয়ের মতোই ছোট মেয়ের প্রতি ছিল তাঁর অপত্য স্নেহ ও মমত্ববোধ। তার প্রকাশ রয়েছে ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও  ‘কারাগারের রোজনামচা’য়। যেমন, একটি অংশ- ‘ছোট মেয়েটার (শেখ রেহানা) শুধু একটা আবদার। সে আমার কাছে থাকবে। আর কেমন করে কোথায় থাকি তা দেখবে। সে বলে, থেকে যেতে রাজি আছি।’ (১৫ই জুন ১৯৬৬, বুধবার, কারাগারের রোজনামচা)

১৯৭৫ সালে বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যদের হারানো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বাল্যকাল থেকেই পিতার রাজনৈতিক আদর্শে বেড়ে উঠেছেন। এজন্য তাঁদের ঔদার্য বিশাল। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অনেক ঘটনা দিয়ে এই উদার-হৃদয়ের মানুষদের আমরা চিনতে পারি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর শেখ রেহানা যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। ব্রিটিশ সরকার তার প্রার্থনা মঞ্জুর করেন। সেখানেই অদ্যাবধি অবস্থান করছেন তিনি। তবে প্রতিবছর বাংলাদেশে কিছুদিনের জন্য অবস্থান করেন। ২০০৭-২০০৮ সালে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে শেখ হাসিনাকে বন্দি করা হলে শেখ রেহানা তাঁর পক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হাল ধরেন।  নেত্রীর মুক্তির জন্য দেশ-বিদেশে আইনি লড়াই চালিয়ে যান। ২০০৯ সাল থেকে বড় বোনকে রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে সহযোগিতা করে আসছেন। তিন সন্তানের জননী শেখ রেহানার স্বামী শফিক আহমেদ সিদ্দিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং ও ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করছেন। আর দুই কন্যাÑ টিউলিপ সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিকও উচ্চ শিক্ষিত। টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা হিসেবে ব্রিটেনের সর্বশেষ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন আসনে টানা তৃতীয়বারের মতো এমপি হন। ২০২০ সালে তিনি ব্রিটেনের শিশুবিষয়ক ছায়ামন্ত্রী পদে পদোন্নতি পেয়েছেন। তিনি এতদিন শ্যাডো আর্লি ইয়ারস মিনিস্টার (প্রাক-প্রাথমিক ছায়ামন্ত্রী) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর প্রতিকূল পরিস্থিতি জয় করে শেখ রেহানা নিজের সন্তানদের সুশিক্ষিত ও রাজনীতি সচেতন করে গড়ে তুলেছেন।  শেখ রেহানার এই পরিস্থিতি মোকাবেলা করার শক্তি আন্তিগোনের সাহসের কথা মনে করিয়ে দেয়।আসলে আন্তিগোনে স্পর্ধা দেখিয়েছিল।রাজা ক্রিওনকেও সে বুঝিয়ে দিয়েছিল স্বৈরাচারের আইন অমান্য করে সে মৃত্যুকে বেছে নিয়েছে কেবল ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা থেকে। আপন  বোন ইসমেনি কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা থেকে বিরত ছিল।  

৩.
আন্তিগোনের মতোই বিরূপ বিশ্বের মাঝে বসবাস করেও শেখ রেহানা ঔদার্য দেখিয়েছেন জীবনের নানান ক্ষেত্রে। তবে শেখ হাসিনা আন্তিগোনের বোন ইসমেনি নন। বরং অভিভাবকের মতো ছায়া দিয়েছেন নিজের ছোট বোনকে। বিগত মহাজোট সরকারের সময় শেখ রেহানার নামে বরাদ্দকৃত বাড়িটি সরকারি কাজে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানার ঘটনাটি অধিকাংশ মানুষের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ মনে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭