ইনসাইড পলিটিক্স

ছাত্রদলের নতুন কমিটি: তারেকের ১০০ কোটি টাকার বাণিজ্য


প্রকাশ: 13/09/2022


Thumbnail

অবশেষে ছাত্রদলের ৩০২ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। গত ১১ সেপ্টেম্বর রোববার এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণার প্রায় পাঁচ মাস পর এই কমিটি ঘোষণা করা হলো। যে কমিটিতে ২২ জনকে সহ-সভাপতি করা হয়েছে, ৮২ জনকে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। ২২ জন সহ-সভাপতি করার জন্য প্রত্যেকের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। আর ৮২ জন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রত্যেকে ১০ লাখ টাকা করে দিয়েছে। অন্যান্য সদস্যদের জন্য পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে। প্রায় ১০০ কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করে তবেই কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। আর এই পুরো টাকা গেছে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার কাছে। উল্লেখ্য যে, গত ১৭ এপ্রিল ছাত্রদলের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। ওই আংশিক কমিটিতে কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণকে সভাপতি এবং সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছিলো। এছাড়াও কেন্দ্রীয় সংসদে পাঁচ সদস্যের নামও ঘোষণা করা হয়েছিলো। তারপর দীর্ঘ পাঁচ মাস পেরিয়ে যাওয়ার পর নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলো।

ছাত্রদলের কমিটিতে যারা জায়গা পায়নি এরকম একাধিক নেতা বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছেন যে, কমিটি বাণিজ্য হয়েছে, টাকা চাওয়া হয়েছে, যারা টাকা দিতে পেরেছে তাদেরকেই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই পুরো টাকা লেনদেন হয়েছে একটা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বলেও বিক্ষুব্ধরা জানিয়েছে। গত দুইদিন ধরে বিক্ষুব্ধ ছাত্রদলের কর্মীরা এ নিয়ে প্রতিবাদ করছে। তারা দাবি করেছে বিবাহিত, বয়স্ক এবং রাজনীতি থেকে প্রায় নির্বাসিত ব্যক্তিদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে টাকার বিনিময়। উল্লেখ যে, এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরি করেছেন লন্ডনের পলাতক বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। তাকে সহযোগিতা করেছে ঢাকায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আরও ২ জন নেতা। মূলত এদের মাধ্যমে টাকা-পয়সার লেনদেন হয়েছে এবং সমস্ত টাকা বুঝে পাওয়ার পরপরই তারেক জিয়া কমিটি ঘোষণা করার অনুমোদন দিয়েছেন।

জানা গেছে যে, প্রথমে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি করার কথা ছিল ২০ জনকে। মজার ব্যাপার হলো, ছাত্রদল এমন একটি সংগঠন যেটির কোনো গঠনতন্ত্র নাই। কারা এই সংগঠনের সদস্য হতে পারবে, কত বয়স পর্যন্ত সদস্য হতে পারবেন কিংবা কেন তারা সদস্য হতে পারবেন এই সমস্ত কিছুই নেই। কত সদস্যের কমিটি হবে সে সম্পর্কেও কোনো সুনির্দিষ্ট ধারণা নেই। ২০ জনের কমিটির কথা বলা হলেও ২০ লাখ টাকা করে দিয়েছেন ২২ জন। ফলে কমিটির পরিধি বেড়েছে। অন্যদিকে, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করার কথা ছিল ৫০ জনকে, সেখানে ৮২ জনকে করা হয়েছে। এটিও টাকা বেশি দেয়ার কারণে যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে সহ- সাধারণ সম্পাদক করা হচ্ছে ৬২ জনকে, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে ৪৮ জনকে এবং সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে ৭৩ জনকে, সাধারণ সদস্য করা হয়েছে ১৯ জনকে। টাকা যে যেভাবে দিয়েছে সেভাবেই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত একজন নেতা বাংলা ইনসাইডারকে জানিয়েছেন যে, তিনি ৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। তাকে বলা হয়েছিল ২০ লাখ টাকা দিতে পারলে তিনি সহ সভাপতি হবেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি ওই টাকা যোগাড় করতে পারেনি। ওই নেতা বলেন, এমনিতেই এখন আমরা বিরোধী দলে। ব্যবসা-বাণিজ্য নেই। কিন্তু যেহেতু একটা পরিচয় থাকা দরকার সেজন্যই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হলাম। তিনি জানান যে, ধার করে এই টাকা তিনি জোগাড় করেছেন। ছাত্রদলের কমিটিতে যাদেরকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে তাদের ৯০ ভাগই বিভিন্ন ঠিকাদারি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত এবং তারা কেউই এখন আর ছাত্র নেই। এরকম অবস্থায় তারা ছাত্রদলের নেতা হয়ে কি করবেন, এই প্রশ্নটি উঠেছে। ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর শুধু ঢাকা শহরে নয়, সারাদেশে বিক্ষোভ এবং হতাশা চলছে। বিভিন্নভাবে বলা হচ্ছে যে, টাকা দিয়ে কমিটি গঠনের এই প্রবণতা সংগঠনটিকে ধ্বংস করে দেবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭