ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার দেশপ্রেম, দূরদর্শী ও ক্যরিশম্যটিক নেতৃত্বই বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও বানিজ্য সফলতার চাবিকাঠি


প্রকাশ: 15/09/2022


Thumbnail

একটি দেশের আর্থসামাজিক উন্নয়ন নির্ভর করে প্রতিবেশী দেশসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উপর। কিন্তু এই সম্পর্কের মাপকাঠি কখনো দেওয়া-নেওয়ার হিসাবে হয় না। দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পারস্পরিক আস্থা, বিশ্বাস ও সহযোগীতা গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ভারতের সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে আমাদের মুক্তিবাহিনী দেশ স্বাধীন করেছিল। 

স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ভারত সফরকালে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে অনুরোধ করেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরের পূর্বেই ১৫ মার্চ ১৯৭২ ভারতীয় সেনাবাহিনী ফেরত নেওয়া শেষ হয়েছিল।

রাষ্ট্রপ্রধানরা বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, বিবাদমান সমস্যা সমাধান, বানিজ্যিক সুবিধা আদায়ের জন্য বিদেশ সফর করেন। সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে নতুন ৭টি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং সমঝোতা স্মারক হস্তান্তর শেষে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, রূপসা রেলসেতুসহ পাঁচটি বিশেষ উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন করেন দুই দেশের  প্রধানমন্ত্রী।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই সফরকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হায়দারাবাদ হাউসে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে, ১৯৭১ সালের আদর্শে সম্মিলিতভাবে মৌলবাদ ও সন্ত্রাসবাদী শক্তিকে মোকাবেলা করার ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের স্থীতিশীল সমৃদ্ধ ও প্রগতিশীল বাংলাদেশের রূপকল্প বাস্তবায়নে ভারত বাংলাদেশের সাথে কদমে কদমে এগিয়ে যাবে‘। 

শেখ হাসিনার এই সফর সম্পর্কে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের বিদায়ী হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরারস্বামী বলেছেন, ‘ সফরটা ছিল অত্যন্ত ফলপ্রসূ। বাংলাদেশ ও ভারতের চমৎকার সম্পর্ক করোনা অতিমারীকালেও ম্লান হয়নি, বরং তা আরও দৃঢ় হয়েছে‘।

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ভারত সফর শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারত সফরের মাধ্যমে ভারত বাংলাদেশ এক সাথে নতুনভাবে এগিয়ে চলার গতি সঞ্চার হয়েছে। কুশিয়ারা নদী থেকে বাংলাদেশ কর্তৃক ১৫৩ কিউসেক পানি প্রত্যাহার বিষয়ে সমঝোতা হয়েছে‘। 

এই সফরে রূপসা রেলসেতু উদ্ধোধন করার পাশাপাশি রেলওয়ে সেবার মান বাড়াতে আইটি সল্যুশন বিনিময় করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ভুটানের সাথে রেল যোগাযোগ ও আন্তঃসীমান্ত রেল সংযোগে ভারতীয় বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত হয়েছে‘।

প্রায়ই ভারত সরকার সেদেশের চাহিদা মেটানোর দোহাই দিয়ে আমদানি রফতানি বাণিজ্যে বিধিমালা জারি করে। ফলে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের দ্রব্যাদি যথাসময়ে আমদানি করতে না পারায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। শেখ হাসিনার এই সফরে সেই কৃত্রিম সংকট নিরসনে চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুনের মত নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য দ্রব্য রপ্তানি বন্ধ করার আগে বাংলাদেশকে আগাম বার্তা দেওয়ার অঙ্গীকার করেছে ভারত সরকার।
শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় এসে সীমান্ত হত্যা ও তিস্তার পানি বণ্টন ছাড়া  ভারত-বাংলাদেশের মধ্যকার বিরাজমান সমস্যা সমূহ  যেমন, গঙ্গার পানি বন্টন, স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন, বিচ্ছিন্নতাবাদী দমন, সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, অভিন্ন নদীর পানির হিস্যা নির্ধারণ, ইত্যাদি বিষয়সমূহ নিষ্পত্তি করেন। 

এরপরও ভারত সফর প্রসঙ্গে ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সফর ব্যর্থ হয়েছে। উনারা যখন দেশ পরিচালনা করেছেন তখন উনাদের নেতা জিয়াউর রহমান ভারত সফর করে কি এনেছেন? 

১৯৮০ সালের ২১ জানুয়ারি ইউনিডো সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত সফর করেন জিয়াউর রহমান। বাংলাদেশের তৎকালীন সরকারের পররাষ্ট্র দপ্তর শত চেষ্টা করেও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সাথে সৌজন্য সাক্ষাতও করাতে পারে নাই। একই বছর ৩ সেপ্টেম্বর কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে ভারত সফরকালে একটি ফটোসেশনে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সাথে দেখা হলেও গঙ্গার পানি বন্টন বা সীমান্ত হত্যা বন্ধে জিয়াউর রহমান টু শব্দ করেননি।

বেগম খালেদা জিয়া সরকার ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে ভারত সফরে গিয়েছিলেন। ফিরে এসে ভারত সফর নিয়ে বিমানবন্দরে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, গঙ্গার পানি চুক্তি হয়েছে কিনা? প্রত্তুতরে তিনি বলেছেন, ‘আমি তো এ বিষয়টি ভুলেই গিয়েছিলাম‘। 

২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচন সম্পর্কে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা কর্তৃক আদালতে দেওয়া ভাষ্যমতে, ঐ নির্বাচনে বিএনপির পক্ষে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে এক বিরল ঐক্য স্থাপিত হয়। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে নগদ অর্থ দিয়ে সাহায্য করেছিল। কিন্তু তৎকালীন বিএনপি সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারেনি। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভয়ারণ্য তৈরী করা হয়েছিল। তৎকালীন বিএনপি সরকারের সহায়তায় ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সামরিক সরঞ্জাম ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ একজন দেশপ্রেমিক পুলিশ কর্মকর্তার সচেতনতার কারনে ১০ ট্রাক অস্ত্রের একটি চালান ধরা পরেছে।

২০০৬ সালের মার্চ মাসে রাষ্ট্রীয় সফরে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং এর সাথে জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বৈঠক এতই তিক্ততাপূর্ন হয়েছিল কোন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়া দূরে থাক, এই দুই প্রতিবেশী দেশ একটি যৌথ ইশতেহারও প্রকাশ করেনি।

শুধু তাই নয়, ভারতের প্রভাবশালী সাময়িকী ‘ফ্রন্টলাইন‘ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ভারতের টাটা কোম্পানি বাংলাদেশে জ্বালানি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহী হলে, চুক্তি সম্পাদন প্রাক্কালে, তৎকালীন বিএনপি সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ও তার বন্ধু ‘টাটা কোম্পানি‘র কাছে বিপুল পরিমাণ টাকা দাবী করলে সেই বিনিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। ভারত বুঝতে পারে, বিএনপি বন্ধু নয়, লোভী ও অবিশ্বস্থ। সেই থেকে বিএনপির সাথে সম্পর্কের ঘাটতি দেখা দেয়। কূটনৈতিক সম্পর্কে টানাপোড়েন চলতে থাকে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সৃষ্টি হয়, উন্নয়ন ব্যাহত হয়।

১৯৮৬ সালের জুলাই মাসে হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ সাহেবের একমাত্র রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজিব গান্ধীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে গঙ্গার পানি বন্টন ও স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে কোন আলোচনাই হয়নি।  অথচ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতিকালের ভারত সফর প্রসঙ্গে বলেন, বর্তমান মহাজোট সরকারের শরীক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বিএনপির সাথে সুর মিলিয়ে কথা বলেন।

বিএনপি এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো ভারত থেকে কিছুই আনতে পারেনি তাদের নিজেদের স্বার্থ উদ্ধার ছাড়া। তারা বাংলাদেশের স্বার্থের কথা ভুলেই গিয়েছিল। ষড়ঋতুর দেশ,  বাংলাদেশের মানুষ বিএনপি ও এরশাদ সরকারের প্রতিবেশী দেশ ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের কথা ভুলে যায়নি। শেখ হাসিনার দেশপ্রেম, দূরদর্শী ও ক্যরিশম্যটিক নেতৃত্বের কারণেই ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক ও বানিজ্য সম্পর্ক বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭