ইনসাইড পলিটিক্স

জাপায় আওয়ামী লীগ-বিএনপির লড়াই


প্রকাশ: 15/09/2022


Thumbnail

জাতীয় পার্টি এখন ভাঙ্গনের দ্বারপ্রান্তে। জাতীয় পার্টির নেতা মশিউর রহমান রাঙ্গাকে দল থেকে বহিষ্কারের পর এখন জাতীয় পার্টির কার্য বিভক্ত হয়ে পড়েছে। এক পাশে রয়েছে রওশন এরশাদ পন্থীরা। অন্যদিকে জিএম কাদের পন্থীরা। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হোসেন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর থেকেই জাতীয় পার্টিতে অনেকের চেহারা ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছিল। কিন্তু এখন জাতীয় পার্টি ভাঙ্গনের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আর এ ভাঙ্গনের নেপথ্যে রয়েছে জাতীয় পার্টির ভেতর আওয়ামীপন্থী এবং বিএনপিপন্থীদের লড়াই। রওশন এরশাদকে মনে করা হচ্ছে আওয়ামী পন্থী নেতা হিসেবে। আর অন্যদিকে জিএম কাদেরকে মনে করা হচ্ছে বিএনপিপন্থী নেতা হিসেবে। অবশ্য জাতীয় পার্টির কোনো কোনো নেতা বলছেন, জিএম কাদের বিএনপিপন্থী নন তিনি আসলে সুশীল সমাজের প্রতিনিধি। জাতীয় পার্টিতে এই বিভক্তির শুরু হয়েছিল এরশাদের সময়ে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেন। কিন্তু সেই সময় রওশন এরশাদ নির্বাচনে থাকার জন্য নির্দেশনা জারি করেন। শেষ পর্যন্ত এরশাদ সিএমএইচে ভর্তি হন এবং জাতীয় পার্টি খন্ডিতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার পর হোসেন মুহাম্মদ এরশাদ শপথ নেন এবং সংসদেও বসেছিলেন। কিন্তু সেই সময় থেকেই রওশন এরশাদের সাথে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠতা বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

২০১৪ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টির একাধিক ব্যক্তি আওয়ামী লীগের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলেন। মন্ত্রিসভা অধিভুক্তির চেয়েও বড় কথা হলো ২০০৯ সাল থেকে জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ হয়। যারা আগে আওয়ামী লীগ করতেন বা আওয়ামী লীগের সঙ্গে নানা রকম ভাবে যুক্ত। এদের মধ্যে  অন্যতম  ছিলেন মশিউর রহমান রাঙ্গা। এছাড়াও আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, প্রয়াত জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, কাজী ফিরোজ রশীদ সহ বিভিন্ন নেতাই আওয়ামী লীগের সমর্থক এবং তারা জাতীয় পার্টিতে আওয়ামী লীগের স্বার্থ সংরক্ষণ করে বলে অনেকেই মনে করেন। অন্যদিকে এই সময়ের মধ্যে জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপি পন্থী ধারা ক্রমশ শক্তিশালী হতে থাকে। এই বিএনপিপন্থী ধারার নেতৃত্বে আসেন জি এম কাদের। ২০১৪ নির্বাচন জিএম কাদের এরশাদের কথা অনুসরণ করে নির্বাচন বর্জন করেন এবং তিনি ২০১৪’র সংসদে অধিষ্ঠিত হতে পারেননি। ২০১৪’র পর থেকেই জিএম কাদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানারকম সন্দেহ এবং আর সংশয় রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে জিএম কাদেরের ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। 

আওয়ামী লীগের অনেকেই মনে করেন জিএম কাদের আসলে বিএনপিপন্থী নন। তার সাথে সুশীলদের আলাদা যোগাযোগ রয়েছে। বিশেষ করে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. ইউনূসের সঙ্গে তার একাধিক যোগাযোগের তথ্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছে আছে বলেও জানা গেছে। জি এম কাদেরের সঙ্গে জাতীয় পার্টির অনেক নেতাই যুক্ত যারা মনে করেন যে জাতীয় পার্টিকে একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের অবস্থানে থাকা দরকার। আর এ কারণেই জাতীয় পার্টি সরকারে বিরোধীতা করছে বলে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন নেতারা মনে করছেন। এখন যখন নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসছে তখন জিএম কাদেরকে নিয়ে আওয়ামী লীগের সন্দেহ বেড়েই চলছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা মনে করেন যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের ব্যাপারে যে সুশীলদের একটি নীলনকশা রয়েছে সেই নীলনকশা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জিএম কাদের একটি বড় অনুষঙ্গ। আর এ কারণেই জাতীয় পার্টিতে এখন বিভক্তির প্রকাশ্য রূপ দেখা দিচ্ছে বলে বিভিন্ন মহল মনে করছেন। জাতীয় পার্টি শেষ পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থাকবে না বিভক্ত হবে সেটা নির্ভর করবে জিএম কাদের কতটুকু ছাড় দিবেন এবং জাতীয় পার্টি নির্বাচনের ব্যাপারে কি অবস্থান নিবে তার উপর বলেই অনেকে মনে করছেন। এরশাদের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টিতে এখন কোন ইমেজ সম্পন্ন নেতৃত্ব নেই। সবারই নিজেদেরকে এরশাদের উত্তরাধিকার বলে মনে করছেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হল যে জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে এখন এককাট্টা হয়েছেন প্রয়াত এশরাদের দুই স্ত্রী বিদিশা এবং রওশন এরশাদ। আর সে কারণেই শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টির সরকার বিরোধী অবস্থান কতদিন টেকসই হবে সেটা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭