লিভিং ইনসাইড

কন্টাক্ট লেন্স ব্যাবহারে ঝুঁকি ও সতর্কতা


প্রকাশ: 16/09/2022


Thumbnail

"কন্টাক্ট লেন্স" শব্দটি বর্তমান প্রজন্মের কাছে খুবই পরিচিত। এখনকার সময় অনেক ফ্যশন সচেতন ছেলে-মেয়েরাই চোখে লেন্স ব্যবহার করে। চোখের সমস্যা ছাড়াও বিশেষ করে মেয়েদের ক্ষেত্রে চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে লেন্সের ব্যবহার বেশি দেখা যায়। তবে এই লেন্স ব্যবহারে চোখের কতটা ক্ষতি হতে পারে বা চোখের জন্য কতটা ঝুকিপূর্ণ সে সম্পর্কে অনেকেরই সঠিক ধারণা নেই। লেন্স ব্যবহারে চোখের সমস্যা এবং এর বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে বাংলা ইনসাইডারের সাথে কথা হয় চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দ্বীন মোহাম্মদের।

এসময় তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের অনেক ছেলে-মেয়েরাই চশমা পরতে চায় না। কিন্তু কন্টাক্ট লেন্সের পক্ষে আমি নই। কারণ হল কন্টাক্ট লেন্স টা চোখের কর্নিয়ার উপর একটা ফরেন পার্টিকেলস। আজকাল দোকান থেকে কন্টাক্ট লেন্স নেয়, ডাক্তারের কাছে আসতে চায় না। কারণ ডাক্তারের কাছে আসলে ডাক্তারের ফি, ট্রায়ালের জন্য একটা ফি এগুলো একটা কণ্টাক্ট লেন্সের সাথে এড হয়। তাই অনেকে এ কারণে আসতে চায় না। এদিকে দোকান থেকে এসব ঝামেলা এড়িয়ে খুব সহজেই কন্টাক্ট লেন্স কিনতে পারে তাই বেশিরভাগ সময় দোকান থেকেই কিনে। কন্টাক্ট লেন্সের কয়েকটা ভালো ভালো কোম্পানি আছে যাদের মধ্যে বুশন লোম, সিভা ভিশন এবং জনসন এন্ড জনসন এই ধরনের কিছু কন্টাক্ট লেন্স আছে। এছাড়াও আরও অনেক বিদেশী ব্র্যান্ডের কন্টাক্ট লেন্স দেশে পাওয়া যায়। যেগুলোর কোয়ালিটির সম্পর্কে আমরা জানি না। আমাদের দেশের মার্কেট বা দোকানে যে কোন দেশের কন্টাক্ট লেন্স রাখা হয়েছে এগুলা আসলে ভালো কিনা এ সমন্ধে আমরা জানি না। দামে কম আর ঝামেলা ছাড়া কিনতে পারে তাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ব্যবহার করে। এসব লেন্স ব্যাবহার করে যখন কর্নিয়াতে সমস্যা হয় তখন আমাদের কাছে আসে। 

কন্টাক্ট লেন্সটা যদি বেশি টাইট হয় তাহলে চোখের উপরে পড়লে চোখের পাতার সাথে কন্টাক্ট লেন্স মুভ করতে পারে না, কন্টাক্ট লেন্সের নিচে দিয়ে অক্সিজেন যেতে না পারলে চোখের সমস্যা দেখা দিবে। ফলে চোখের কর্নিয়াতে তখন আলসার হবে, পেইনফুল হবে কর্নিয়া। এ জন্য খুব নির্দিষ্ট ক্ষেত্র  ছাড়া কন্টাক্ট লেন্স ব্যবহার না করাই ভালো বলে জানান তিনি। 

তিনি আরও বলেন, কন্টাক্ট লেন্সের জন্য দেশে কোনো আইনও নেই , তাই ডাক্তারের কাছে না এসে বেশিরভাগ দোকান থেকেই নেয়। যার ফলে প্রচুর ক্ষতি হচ্ছে। যে সকল কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে কন্টাক্ট লেন্স মার্কেট করে তাদেরকেও আমরা কয়েকবার বলেছি ডাক্তারি প্রেস্ক্রিপশন ছাড়া কন্টাক্ট লেন্স বিক্রি না করতে। কিন্তু অতিরিক্ত লাভের আশায় হোক বা ব্যবসা প্রসার করার জন্য হোক চশমার দোকানেই কন্টাক্ট লেন্স পাওয়া যায়। সেটা কারা দিচ্ছে , লেন্সের মাপ ঠিকাছে কিনা সেটা না বুঝেই তারা বিক্রি করছে। আমার মনে হয় এই দিকটাতে আরও সচেতনতা বৃদ্ধি করা উচিৎ। 

কন্টাক্ট লেন্স ছাড়া বিকল্প পদ্ধতি নিয়ে বিস্তর আলোচনা করেছেন এই চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডা. দ্বীন মোহাম্মদ।

বিকল্প পদ্ধতি থাকলেও যাদের পাওয়ার নাকি মাইনাস ২, মাইনাস ৫ থাকে তার জন্য তো কন্টাক্ট লেন্স পড়ার প্রয়োজন নেই। হয়তো দূরের জিনিস তারা একটু কম দেখবে। সে জন্য একটু চশমা ব্যাবহার করতে পারে । অন্তত ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কন্টাক্ট লেন্স পড়ে বিপদে পড়ার থেকে অনেক ভালো। তবে কাছের জিনিস ভালো দেখতে পাবে। 

যাদের পাওয়ার মাইনাস ৫, মাইনাস ৬, মাইনাস ৭ তাদের জন্য এক্সজাইমা লেজার করতে পারে। তবে এই লেজার পদ্ধতির মাধ্যমেও কর্নিয়াতে এক ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। কর্নিয়ার একটা অংশ যেটা নাকি কার্ভেচার বেশি। এই কার্ভেচারটা কমিয়ে দেওয়া হয়। সেই জায়গায় সেন্ট্রাল কর্নিয়াতে লেজার দিয়ে বার্ন করা হয়।  একেই বলে লেজার এব্লেশন। লেজার এব্লেশনের মাধ্যমে কর্নিয়ার কার্ভেচারতাকে ফ্ল্যাট করে দেওয়া হয়। ফলে চোখের মাইনাস পাওয়ারটা কারেকশন হয়। তবে এই পদ্ধতিতেও ১০০ থেকে ১ জনের মধ্য হলেও  কমপ্লিকেশন দেখা দিতে পারে। ফলে অনেকের গাড়ি ড্রাইভ করতে সমস্যা হয়, আলোর দিকে তাকাতে অসুবিধে হয়, কর্মক্ষেত্রে কাজ করতে অসুবিধে হয় বা কর্নিয়াতে অপাসিটি ডেভেলপ করতে পারে। তাই আমার কাছে মনে হয় চশমা দিয়ে থাকাই সেইফ। তাও যদি চশমা এড়িয়ে যেতে চায় তাহলে আরও দুইটা পদ্ধতি আছে।

প্রথমত, আইসিএল (Implantable Collamer Lens) পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে যেকোনো মাইনাস পাওয়ার সমাধান করা যায়  এবং তখন চশমা ছাড়াই কাছে ও দূরের সব কিছু ঠিকভাবে দেখা যায়। এই পদ্ধতির মাধ্যমে কর্নিয়াতে কোনো প্রকার সার্জারি করা হয় না। চোখের মাপ  অনুযায়ী, চোখের সাইজ, কর্নিয়ার সাইজ, চোখের চশমার পাওয়ার সব কিছু জেনে দেশের লোকাল কোম্পানির মাধ্যে আমেরিকান কোম্পানি 'স্টার' তাদের লেন্স অর্ডার দেই। এরপর ৩ সপ্তাহ সময় নিয়ে লেন্স তৈরি হয়ে চলে আসে। এটা দুই চোখেই করা হয়। এটা একটা পার্মানেন্ট পদ্ধতি। এর মাধ্যমে চোখের দূরের পাওয়ার এবং কাছের পাওয়ার সবই ঠিক থাকে। তবে এটা তাদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য যাদের মাইনাস  পাওয়ার অনেক বেশি, যাদের লেজার পদ্ধতিতেও কাজ হবে না তাদের জন্য। এর জন্য সবাইকে ২১ বছর বয়সী হতে হবে। আইসিএল করতে হলে ২-৩ বছরের চোখের মাইনাস পাওয়ার স্ট্যাবল রাখতে হবে। তার জন্য ২-৩ বছর তাদের চোখের পাওয়ারের রেকর্ড রাখতে হবে। পাওয়ার চেক করে যদি পাওয়ার স্ট্যাবল থাকে তাহলে আইসিএল করা যাবে। এটা খুবই ভালো একটা পদ্ধতি। 

আরেকটি পদ্ধতি হলো পার্মানেন্ট লেন্স। যদি ২৫-৩০ বা ৪০ বছরের বয়সী মানুষ  ইচ্ছা করে যে, তার পার্মানেন্ট একটা সিস্টেম চাই তাহলে পেশেন্টের সম্মতি নিয়ে চোখের লেন্সটা বের করে সেই স্থানে একটা আর্টিফিসিয়াল লেন্স লাগিয়ে দিতে পারি। এটাও একটা স্থায়ী পদ্ধতি। এটাকে বলা হয় ক্লিয়ার লেন্স এক্সট্রাকশন। এতে চোখে থাকা পরিষ্কার লেন্সটিকে ফেলে দিয়ে পাওয়ার এডজাস্ট করে আর্টিফিসিয়াল লেন্স লাগানো হয়।

তাই লেন্স ব্যাবহারে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে লেন্স ব্যাবহার করুন। লোকাল শপ বা মার্কেট থেকে লেন্স কেনা বন্ধ করুন এবং প্রয়োজন ছাড়া কন্টাক্ট লেন্স ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭