ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

পুতিন-শি জিনপিং: ক্রমবর্ধমান অসম একটি সম্পর্ক


প্রকাশ: 16/09/2022


Thumbnail

একটি বিশালাকার পেন্ডুলামের কথা চিন্তা করুন যা ধীরে ধীরে এদিক-ওদিক দুলছে, শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে।

রাশিয়া হচ্ছে সেই পেন্ডূলাম। এদিকে একবার রাশিয়া পশ্চিমে ইউরোপের দিকে তাকায় এবংনিজেকে ইউরোপীয় সভ্যতার একটি অনস্বীকার্য অংশ হিসাবে দেখে।

অন্য সময়, পেন্ডুলাম বিপরীত দিকে দোলে এবং রাশিয়া পূর্ব দিকে তাকায়। এর শাসকরা পশ্চিমা সভ্যতা, পশ্চিমা মূল্যবোধের নিন্দা করে এবং ঘোষণা করে যে রাশিয়ার ভবিষ্যত এশিয়ার সাথে নিহিত।

কাউকে মনে করিয়ে দেয়?

আশ্চর্যজনক ভাবেই অবশেষে ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে রাশিয়ান সেই পেন্ডুলামটি পূর্ব দিকে এসেছে।

ইউক্রেনে আক্রমণ করার তার সিদ্ধান্ত পশ্চিমের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এমনকি পশ্চিমা বিশ্বের নানা নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়ে অর্থনৈতিক ভাবের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রাশিয়া। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পুতিনকে "হত্যাকারী একনায়ক" বলেছেন; যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী লিজ ট্রাস এর আগে তাকে "একজন মরিয়া দুর্বৃত্ত " বলে অভিহিত করেছিলেন।

চীনের প্রেসিডেন্ট অবশ্য ভিন্ন ভাবে দেখেন পুতিনকে। উজবেকিস্তানের সমরকন্দে এসসিও শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে দুই নেতার সাক্ষাৎ হয় পুতিনকে "আমার প্রিয় পুরানো বন্ধু!" বলে সম্বোধন করেন শি।

অন্যদিকে পুতিন "চীন ও রাশিয়ার মধ্যে বন্ধুত্ব" এবং তাদের "কৌশলগত ক্রমবর্ধমান  অংশীদারিত্ব" এর প্রশংসা করেছেন।

দুই নেতার বিশ্ব দৃষ্টিভঙ্গি একই রকম। উভয়ই একটি বিকল্প বিশ্বব্যবস্থার ধারণা প্রচার করেন: একটি "মাল্টি-পোলার ওয়ার্ল্ড" যেখানে তাদের দেশগুলি পশ্চিমের, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিপক্ষ হিসাবে কাজ করে।

সুতরাং, এটি কি পুতিন এবং শি এর "চিরকালের সেরা বন্ধুত্ব" গল্পের সূচনা?

পুরোপুরি না। প্রথমত, বিশ্ব রাজনীতিতে এই ‘সেরা বন্ধু’ খুব কমই বিদ্যমান। এবং দ্বিতীয়ত, এটি একটি ক্রমবর্ধমান অসম সম্পর্ক।

পুতিনের ইউক্রেনে আক্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী না হওয়ায় এর ফলে রাশিয়া দুর্বল হয়ে পড়েছে। ক্রেমলিন স্বীকার করেছে যে রাশিয়ান সেনাবাহিনী "উল্লেখযোগ্য ক্ষতি" সম্মুখীন। এদিকে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে অর্থনীতিকে তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে মস্কো। রাশিয়া-চীন সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাশিয়াই জুনিয়র পার্টনার।

তাদের বৈঠকে পুতিন স্বীকার করেছেন যে ইউক্রেনের পরিস্থিতি নিয়ে চীনের "প্রশ্ন ও উদ্বেগ" রয়েছে। ক্রেমলিনের দ্বারা এটি একটি অপ্রত্যাশিত স্বীকারোক্তি ছিল যে রাশিয়ার তথাকথিত বিশেষ সামরিক অভিযান বেইজিংয়ে কিছুটা উদ্বেগ সৃষ্টি করছে।

পশ্চিমের সাথে সেতু জ্বালিয়ে এবং ইউরোপের সাথে একটি শক্তি যুদ্ধের জন্ম দেওয়ার পরে, জনাব পুতিন পূর্ব দিকে একটি ভট গড়ার চেষ্টা করছেন। ক্যাননা তার কাছে এর বিকল্প বলতে কিছুই নেই। তিনি রাশিয়ান অর্থনীতির পুনর্গঠন এবং রাশিয়ান তেল ও গ্যাসের জন্য নতুন বাজার খুঁজে পাওয়ার আশা করছেন যা বেশ চ্যালেঞ্জিং।

জনস হপকিন্স স্কুল অফ অ্যাডভান্সড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের অধ্যাপক সের্গেই র‌্যাডচেঙ্কো বিশ্বাস করেন, "আশা করা যায় যে এই পিভট কাজ করবে এবং রাশিয়ার জন্য লাভ হবে। কিন্তু আমি মনে করি না এমন টা হবে। তার মতে রাশিয়ার যা প্রয়োজন তা শেষ পর্যন্ত পশ্চিমে: এর প্রযুক্তি, এর বাজার।

"রাশিয়ার উপকূলে তেল এবং গ্যাস ক্ষেত্রগুলি বিকাশের জন্য পশ্চিমা প্রযুক্তির প্রয়োজন এবং পশ্চিমা সমর্থন ছাড়া রাশিয়া এটি করতে সক্ষম হবে কিনা তা নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন রয়েছে।‘’

"গ্যাস প্রবাহের দিক পরিবর্তন করা খুবই কঠিন। সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং রাশিয়া ইউরোপে পাইপলাইনের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে কয়েক দশক ব্যয় করেছে এবং সেখানেই ভৌত অবকাঠামো। এশিয়ার দিকে রাশিয়ান শক্তির বাজারগুলিকে পুনর্নির্মাণ করা খুবই কঠিন।"

পুতিন এবং শি যে শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিচ্ছেন তা সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশান বা এসসিওর একটি বৈঠক। রাশিয়া ও চীনের পাশাপাশি এই জোটে কাজাখস্তান, উজবেকিস্তান, কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তান, ভারত ও পাকিস্তান সমন্বয়ে গঠিত।

পুতিনের জন্য সম্মেলন এটা দেখানোর সুযোগ যে, আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এবং ইউক্রেন আক্রমণের জন্য পশ্চিম থেকে রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, মস্কোর এখনও শক্তিশালী বন্ধু রয়েছে।

"রাশিয়া উল্লেখ করতে পছন্দ করে যে পশ্চিমাদের দ্বারা তার বিচ্ছিন্নতা শুধুমাত্র পশ্চিমেই রয়েছে এবং বিশ্বটি অত্যন্ত বহু-মেরু," প্রফেসর রাদচেঙ্কো নোট করেছেন। "কিন্তু মজার বিষয় হল যে এসসিও এবং মধ্য এশিয়ায় ক্ষমতার পুরো ভারসাম্য বদলে যাচ্ছে এবং ক্রমেই রাশিয়া থেকে দূরে সরে যাচ্ছে।

"পুতিন এমন সময়ে সমরকন্দে এসেছেন যখন তিনি এমন এক যুদ্ধের মাঝখানে আছেন যেটা তিনি হেরে যাচ্ছেন।‘’

"এদিকে, প্রথমবারের মতো মধ্য এশিয়ার দেশগুলি তাদের নিজস্ব নীতি অনুসরণ করছে। এটি কাজাখস্তানের সাথে সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয়, যেটি রাশিয়ার সাথে তার সম্পর্কের ক্ষেত্রে অত্যন্ত দৃঢ় ছিল। কাজাখস্তান আশানুরূ সমর্থন পাননি পুতিন। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করেছে। ক্ষমতার ভারসাম্যে আকর্ষণীয় ভাবে পরিবর্তন হচ্ছে।"

যেহেতু ক্রেমলিন পূর্বের দিকে ঝুঁকছে, সেহেতু রাশিয়া সম্পর্কে একটি মূল বিষয় মনে রাখা মূল্যবান। এই দেশটি বিশ্বের বৃহত্তম দুটি মহাদেশ, ইউরোপ এবং এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত।

সেক্ষেত্রে পেন্ডুলামকে দুলতে দেওয়ার পরিবর্তে, সম্ভবত রাশিয়ার পক্ষে উভয় দিকে তাকানো আরও বোধগম্য বলে মনে হতে পারে



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭