ইনসাইড পলিটিক্স

বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকারের প্যাকেজ পরিকল্পনা


প্রকাশ: 17/09/2022


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষিত হয়েছে। রোডম্যাপ ঘোষণার পরপরই বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। বিএনপি আগামী নির্বাচন বর্জনের পথেই হাঁটছে। বিএনপি নেতারা বলছে, ২০১৮ সালের নির্বাচনে যাওয়ার যে ভুল তারা করেছিলো সেই ভুল এবার আর করতে চায় না। বিএনপি নির্বাচন করবে কি করবে না এ নিয়ে যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে অনিশ্চয়তা তখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধারক বলছেন শেষ পর্যন্ত বিএনপি নির্বাচনে আসবে এবং নির্বাচনের আগে নানারকম আলাপ-আলোচনা হবে। এসব আলাপ-আলোচনার পর একটি সমঝোতায় অবশ্যই দেশ উপকৃত হবে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনতে সরকার বেশকিছু প্যাকেজ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে যেটি নিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারক মহলে আলোচনা হচ্ছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য কি কি ছাড় দেওয়া হবে তা নিয়েও আলোচনা হচ্ছে বলে সরকারের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে। যদিও প্রধানমন্ত্রী গত বুধবার সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন যে, কোন দল নির্বাচনে আসবে না আসবে সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার, তবে নির্বাচন হবে সংবিধান অনুযায়ী। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরও মনে করা হচ্ছে যে আলাপ-আলোচনার সুযোগ রয়ে গেছে এবং শেষ পর্যন্ত আলোচনা হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের রাজনৈতিক আলোচনার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের আগে এরকম রাজনৈতিক আলাপ-আলোচনা হতেই পারে। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগেও এরকম পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিলো। সেই সময় বিএনপি নেতারাও বলেছিলো যে তারা নির্বাচনে যাবে না কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো আলোচনায় অংশ নেয় এবং সেই আলোচনার মাধ্যমেই তারা নির্বাচনে যায়। এরকম আলোচনায় বিএনপিকে এবার খালি হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হবে না বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র বলছে। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্র বলছে যে, আলোচনার মাধ্যমে নিশ্চয়ই একটি রাজনৈতিক সমঝোতায় আসবে। বিএনপির জন্য আওয়ামী লীগ বিভিন্ন প্যাকেজ পরিকল্পনা ভেবে রেখেছে। তার মধ্যে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো-

১. খালেদা জিয়ার মুক্তি: রাজনৈতিক সমঝোতার অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে। তবে এটি হবে সমঝোতার শেষ ধাপ। এই সমঝোতার মধ্য দিয়ে হয়তো বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। এটাই আওয়ামী লীগের কাছে আগামী নির্বাচনের ট্রাম্পকার্ড।

২. নির্বাচনের সময় বিরোধী দলের সদস্যদেরকে মন্ত্রীসভায় অন্তর্ভুক্ত করা: ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ প্রস্তাব দিয়েছিলো যে বিরোধী দলের সদস্যদেরকে মন্ত্রিসভা দেয়া হবে এমনকি প্রধানমন্ত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেয়ারও প্রস্তাব করেছিলেন যে প্রস্তাব বেগম খালেদা জিয়া প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। এবারও আলোচনার টেবিলে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়টি ওঠে আসতে পারে। যেহেতু আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে এই প্রস্তাব দিয়েছিলো সেজন্য এবারও এরকম প্রস্তাবের বিষয়টি আওয়ামী লীগ ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করবে। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, আলোচনার টেবিলে এই বিষয়টি উঠলে আওয়ামী লীগ এ ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপই নিবে।

৩. নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং স্বাধীনতা প্রদান: আওয়ামী লীগ স্বাধীন স্বাতন্ত্র্য নির্বাচন কমিশনের পক্ষে এবং বিএনপি যে অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন দাবি করছে সেই দাবি পূরণের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে এটি আশ্বাস দেয়া হবে যে নির্বাচনকালীন সময় যে সরকার থাকবে সেই সরকারের রুটিন ওয়ার্কের মধ্যে দায়িত্ব পালন করবে, সমস্ত ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের হাতে অর্পণ করা হবে। নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা যদি কোনো সীমাবদ্ধ থাকে সেই সীমাবদ্ধতাও দূর করার উদ্যোগ নেয়া হবে।

৪. রাজনৈতিক কারণে মামলা প্রত্যাহার: এই আলোচনার টেবিলে গতবারও রাজনৈতিক কারণে মামলার প্রসঙ্গটি উঠেছিলো, এবারও আসবে। সরকার রাজনৈতিক কারণে যদি কোনো মামলা থেকে থেকে সে মামলাগুলোকে প্রত্যাহার করার ব্যাপারে ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

নির্বাচনের এখনো প্রায় ১৫ মাস বাকি আছে। এই সময়ের মধ্যে রাজনীতিতে অনেক রকমের ঘটনা ঘটবে, অনেক মেরুকরণ হবে। সেই সমস্ত মেরুকরণের প্রেক্ষাপটেই আগামী নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারিত হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭