ইনসাইড থট

পাকিস্তানী হিজরতের অপেক্ষায় বুদ্ধিজীবীরা


প্রকাশ: 18/09/2022


Thumbnail

সম্প্রতিককালে মনে হচ্ছে যে, শুধু বিএনপির ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয় তার সাথে আমাদের সুশীল সমাজেরও অনেক প্রতিনিধিরা পাকিস্তানে হিজরত করার জন্য যা কিছু করার দরকার সে সমস্ত জোগাড়-যন্ত্র করে ফেলেছে। এখন পাকিস্তানি পাসপোর্ট পেতে হলে পাকিস্তান বোধ হয় কন্ডিশন দিয়েছিল যে, তাদের বলতে হবে যে পাকিস্তানের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়ে ভালো। সেজন্যই তিনি আর কোনো রাখঢাক না রেখে বলেছেন। পরবর্তীতে পাসপোর্ট পাওয়ার আগে আরেক একটা কন্ডিশন আছে, সেটা আমার মনে হয় আমরা কিছুদিনের মধ্যে সব দেখতে পাব। সেটি হচ্ছে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ করা ভুল হয়েছিল। এটা ফাইনালি বলার পরেই তারা খাঁটি পাকিস্তানি হিসেবে নিজেদেরকে খুব শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড় করাতে পারবে। আওয়ামী লীগের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা যে সকল কথা জনসম্মুখে বলেন তা অনেকেরই পছন্দ হয় না এবং পছন্দ না হলে যে কেউ সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পারে, লেখালেখি করতে পারে, এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেউ তাতে কিছু মনে করে না কারণ নিয়ম হচ্ছে বক্তব্যের বক্তব্য বক্তব্যে হয়, লেখার উত্তর লেখা দিয়া হয়। সেটা এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অনেক সময় টকশোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে, অনেক সময় আমরা চা খেতে বসে আলাপ করি তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে।  

কিছুদিন আগে সিপিডি এনালাইসিস করে দেখাচ্ছে, ওয়ার্ল্ড ব্যাংকসহ সবাই বলছে যে পাকিস্তানের সাথে বাংলাদেশের অর্থনীতি সমস্ত প্যারামিটারে আমরা ভালো আছি। যেখানে আমাদের টাকা পয়সা দিয়ে পাকিস্তান আমাদের শোষণ করেছিল।  আমরা স্বাধীন হয়ে গিয়েছি এবং আমাদের আর কলোনি হিসেবে পায় না। তখন থেকেই আগেও পাকিস্তানে আর্মিরা ছিল তারা পাকিস্তান চালাতো। এখন তো শ্রীলঙ্কার পর ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তান মোটামুটিভাবে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত। এ বিষয়ে কোনো সংশয় নাই। এইসময় ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে তাদের ভাড়া করতে হলো। আর আমাদের দেশের এই বুদ্ধিজীবী থেকে শুরু করে অনেক রাজনীতিবিদরাই এরা ভাড়া খাটা খুব পছন্দ করেন। যারা টাকা দেয় এবং যারা ভাড়া নেন তাদের কতগুলো কন্ডিশন থাকে যে আপনাদের এইভাবে চলতে হবে, না হলে দেখেন ফখরুল ইসলাম আলমগীর যখন এইভাবে বলল যে, আমরা পাকিস্তানে ভালো ছিলাম, জিয়াউর রহমান সাহেব মোটামুটিভাবে আইয়ুব খানকেই অনুসরণ করেছিল তাই তারা ঠিকই বলেছেন যে, তারা আইয়ুব খানের সময় ভাল ছিলেন। তারপর তারা জিয়াউর রহমানের সময় ভালো ছিলেন। কারণ তারা আর্মি শাসনে অভ্যস্ত, তারা গণতন্ত্র শাসনে অভ্যস্ত নয়। 

দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা তিনি গণতন্ত্রকে এ দেশে স্থায়ী রূপ দিতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছেন, মানুষের যে মৌলিক প্রয়োজন স্বাস্থ্য থেকে শুরু করে খাদ্য সমস্ত কিছুতেই করতে তিনি সক্ষম হয়েছেন। একটি বাড়ি একটি খামার করে কোনো লোক আর এখন ঠিকানাবিহীন নাই। একই সাথে তিনি বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা পরিচালনা করে সকলকেই মোটামুটিভাবে যেকোনো অবস্থায় জীবনধারণের নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আর যেখানে পাকিস্তানের গণতন্ত্র এখনো সেনাছাউনিতে আবদ্ধ সকলেই জানে। সেই সেনাছাউনি শুধুমাত্র ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নয়, আমাদের দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজেরও পছন্দ। না হলে কোনো একটি পত্র পত্রিকা বিশেষ করে যারা গণতন্ত্রের জন্য মায়াকান্না করে তাদের সামান্যতম কোথাও লেখা নাই। তারা এই ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এ বক্তব্য নিয়ে কোনো আলাপ-আলোচনা করছে না। কারণ হচ্ছে তারা তো একই পথের পথিক। ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং এরপর রুহুল কবির রিজভীদের পাসপোর্ট আগে হবে। আর বাকিদের পাসপোর্ট একটু পরে। তারা লাইনে একটু পরে আছেন। এর প্রধান কারণ হচ্ছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ভুল ছিল ওইটা বলতে একটু সময় নিচ্ছে। এরা অনেকেই আছেন যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বলেছেন এবং যখন বলতেন তখন আমি মনে করতাম এবং বিশ্বাস করতাম যে তারা মন থেকে বলছে। কারণ এরা অনেকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে এবং মুক্তিযুদ্ধের অনেক অবদান আছে। কিন্তু ওই যে একটা কথা আমাদের বিশ্বাস করতেই হবে যে, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ নিয়ে টিকে থাকার জন্য সর্বদা মুক্তিযুদ্ধের চর্চা করতে হয়। কিন্তু একজন রাজাকার আলবদর তারা চিরকাল রাজাকার আলবদরই থাকে। এ কারণেই একবার মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম অর্থাৎ আমার দাদা জমিদার ছিল, ঘি দিয়ে ভাত খেয়েছিল, সেই ঘি আমার হাতে থাকবে এইটা ঠিক না। সুতরাং আমি বিশ্বাস করি যে, ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং রিজভী থেকে শুরু করে আমি কখনো সাধারণত তাদের রাজনীতিবিদদের নিয়ে লিখি না। কারণ আমি কোন দলের সদস্য নয়। কিন্তু যখন দেশের প্রশ্ন উঠে, যখন আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে টানাটানি হয় তখন একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে যদি এখন মুখ বন্ধ করে থাকা আর মুক্তিযুদ্ধকে অস্বীকার করার ভিতরে কোন পার্থক্য নাই।পাকিস্তানের সাথে আমাদের কেন তুলনা করতে হবে। পাকিস্তানের এখন কোনো গণতন্ত্র নেই। পাকিস্তান এখন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। এতদিন বলা হতো যে, বিএনপি জামাতের উদ্দেশ্যই হচ্ছে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানো। আরও পরিষ্কারভাবে বললে বলতে হয় যে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার সাথে সাথে মানুষের সামনে থেকে চোখ নিয়ে পিছনের প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল এবং তারা পিছনের দিকে এগোতে শুরু করছিল। পিছনের দিকে যেতে যেতে তারা পাকিস্তানের মাত্র হিজরতের কাছাকাছি সময়ে দেখা গেল দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক দেশে আসলেন এবং তিনি রাজনীতির হাল ধরলেন। বিরোধী দলের হলেও এদেশে তিনি প্রথম আন্দোলনের মাধ্যমে রাতের বেলায় কারফিউ বন্ধ করতে সক্ষম হয়েছেন এবং সবকিছুতে দেখা গেল দেশে গণতন্ত্রের দিকে যাচ্ছে। ফলে এখন গণতন্ত্র সুসংহত হয়েছে। যার ভোট সেই দেয়। যাকে খুশি তাকে দেয়। ২০১৮ সালে নির্বাচন নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। নতুন করে বলার কোন দরকার নাই। যে কোন জিনিসের যদি কোন ভুলভ্রান্তি থাকে সেটা নিয়ে লেখালেখি হবে। এটিই স্বাভাবিক এবং রাজনীতি করেন তারা উত্তর দিবেন এবং সেটা তাদের ব্যাপার। 

ঢাকায় আমার ভোট আমি দিয়েছি এবং ঢাকায় তো আমি কোন পরিচিত কাউকে বলতে শুনি নাই যে তাদের ভোট আগে কোথায় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সমগ্র দেশের অবস্থা তো আমার জানার আগ্রহ নাই এবং এটা আমার এখতিয়ারও নাই। গত নির্বাচনে কঠিনভাবে প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল না। আর ২০১৪ তে যেহেতু ১৫১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। এই সকল  জিনিসগুলি কেন হল তা কারেকশন করার জন্য সকলেই চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু তার জন্য পাকিস্তানি হিজরত করার প্রয়োজন আছে আর পাকিস্তানি জেনারেলদের কাছে গণতন্ত্র শেখার জন্য যেতে হবে, এইটা তো আমরা কখনো ভাবি নাই। তাহলে এতদিন এই সকল বুদ্ধিজীবীরা তাদের বুদ্ধি কি ফ্রিজে রেখেছেন? অনেকদিন বুদ্ধি ফ্রিজে রাখলে বুদ্ধি জমে যায়। আমার মনে হয় তাদের বুদ্ধি জমে গেছে। সুতরাং তাদের অনুরোধ করব যে দেশের স্বাধীনতা নিয়ে, যাদের সাথে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি সেই দেশ সম্পর্কে এ ধরনের বক্তব্য আমরা সহ্য করবো না। 

দলীয় ভিত্তিতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি কি করবে সেটা আওয়ামী লীগের ব্যাপার, বিএনপির ব্যাপার। কিন্তু আমরা মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন কাউকে রাস্তায় বেরোতে দেব না। এটা একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই যে, রাজনীতি এক জিনিস আর পাকিস্তানি বাহিনী যারা আমার মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠন করেছে, ৩০ লাখ লোক জীবন দিয়েছে সেটা জিনিস নয়। সুতরাং এই সকল পাকিস্তানপন্থী রাজনীতিবিদ এবং বুদ্ধিজীবীদের জায়গা পাকিস্তান হবে। অবশ্যই বাংলাদেশ হবে না। যারা যুদ্ধ করেছেন তারা বলেন যে, আমরা অস্ত্র জমা দিছি কিন্তু ট্রেনিং জমা দেই নাই। সুতরাং আবার আমরা রাজপথে নামবো এবং রাজপথে নেমে এই পাকিস্তানিদের অবশ্যই প্রতিহত করব।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭