ইনসাইড পলিটিক্স

কি হবে খালেদার পরিণতি?


প্রকাশ: 18/09/2022


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার তার নির্বাহী আদেশবলে আরও ছয় মাসের জামিন দিয়েছে। জামিনে যথারীতি পূর্বের মতোই দুটি শর্ত আছে। তার মধ্যে একটি হলো তিনি বিদেশে যেতে পারবেন না। বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ। বিভিন্ন সময়ে তিনি হাসপাতালে যাচ্ছেন, আবার বাসায় ফিরছেন। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে তিনি অংশগ্রহণ করতে পারছেন না। বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে অনেক খারাপ। কিন্তু বেগম জিয়ার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ কি, তার পরিণতি কি এটি এখন রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় প্রশ্ন। বেগম খালেদা জিয়া যে দলের চেয়ারম্যান সেই দলে তার কোনো কর্তৃত্ব নেই। এমনকি দলের নেতারা কোনো বিষয়ে তার পরামর্শ নেয় না। দল এখন চালাচ্ছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বেগম জিয়ার পুত্র তারেক জিয়া। তিনি এখন মায়ের সঙ্গে দলের কোনো বিষয়েই পরামর্শ গ্রহণ করেন না।

বেগম খালেদা জিয়া রাজনীতিতে কি ঘটতে যাচ্ছে, বিএনপিতে কে নেতা হচ্ছেন ইত্যাদি সম্বন্ধে সম্পূর্ণ অন্ধকারে বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন। এমনকি তারেক জিয়াও তার সঙ্গে যে টেলিফোনে আলাপ করেন সেখানে রাজনৈতিক দল সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে খুব একটা কথা বলেন না। খালেদা জিয়ার মামলাগুলোকেও নিষ্পত্তি করার জন্য বিএনপি নেতাদের কোনো উদ্যোগ নেই। বরং এই মামলাগুলো থেকে উত্তরণের জন্য যে সমস্ত আইনি লড়াই করার কথা সেই সমস্ত লড়াইগুলো থেমে আছে। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি বা তাকে বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির তেমন আগ্রহ বা দেন-দরবার নেই। বরং খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরাই বিশেষ করে তার ভাই এবং বোন তাঁর জামিনের মেয়াদ বৃদ্ধি এবং বিদেশ যাওয়ার আবেদন ইত্যাদি নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছে। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপির রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়া প্রায় পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছেন।

জনগণের মধ্যেও বেগম খালেদা জিয়ার যে ইমেজ ছিল তা এখন তলানিতে। বেগম খালেদা জিয়া এখন রাজনীতির একটি অতীত অধ্যায়। ২০১৮ সালে গ্রেফতার এবং তাঁর মুক্তির দাবিতে বিএনপির পক্ষে আন্দোলন না করার ব্যর্থতা এবং সর্বশেষ সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে জামিন নেওয়া রাজনৈতিকভাবে বেগম খালেদা জিয়ার ভবিষ্যতকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে ফেলেছে। ফলে আগামীতে শারীরিক-মানসিক কোনোভাবেই তিনি দায়িত্ব গ্রহণে সক্ষম হবেন না বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন। এরকম পরিস্থিতিতে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতির ভবিষ্যৎ কি, এই প্রশ্নটি ক্রমশ বড় হয়ে উঠছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন যে, এখন বেগম খালেদা জিয়া নিষ্ক্রিয়, নিষ্প্রভ এবং পরিত্যক্ত হলেও নির্বাচনের আগে আগে তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারেনি। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে বেগম খালেদা জিয়া একটি বড় ফ্যাক্টর হবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, সরকারের তুরুপের তাস হলেন বেগম খালেদা জিয়া। যেহেতু সরকার তাকে বারবার জামিন দিয়ে তার বাসভবন ফিরোজা রাখছেন, সে কারণেই সরকার আগামী নির্বাচনে বেগম জিয়াকে টোপ হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে ইতোমধ্যে বলা হচ্ছে যে, তারা আগামী নির্বাচন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া অংশগ্রহণ করবে না। আর এই অবস্থায় যদি তারা অটুট থাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত বিএনপিকে ছাড়াই নির্বাচন করতে হতে পারে। কিন্তু সরকার সেটা চাচ্ছে না। বরং সরকার চাচ্ছে এবার নির্বাচন সকল দলের অংশগ্রহণে হোক। কারণ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে কাছে আগামী নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করতে গেলে বিএনপির অংশগ্রহণটা জরুরী। আর সে কারণেই খালেদা জিয়া আগামী নির্বাচনের আগে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার বিষয় হতে পারেন। কারণ, শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে বন্ধ করে তখন খালেদা জিয়ার সঙ্গে একটি আপস সমঝোতা করবে সরকার, এমনটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে। আর সে কারণেই সরকার তাকে জামিন দিয়ে দিয়ে রাখছে যেন নির্বাচনের আগে বেগম খালেদা জিয়াকে বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যায়। কারণ, তারেক জিয়ার চেয়ে বিএনপির নেতাকর্মীর কাছে বেগম খালেদা জিয়া অনেক বেশি জনপ্রিয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭