ইনসাইড টক

‘মানবাধিকার ইস্যুকে পশ্চিমারা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে’


প্রকাশ: 19/09/2022


Thumbnail

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান বলেছেন, মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ বাংলাদেশের জন্য নতুন কিছু নয়। মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বরাবর থেক অভিযোগ করা হয়েছে। তবে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনার বাংলাদেশে সফরে এসে যে ধরনের কথা বলে গেছেন এবং পরে তিনি ফিরে যাওয়ার পর আমরা যা জানতে পেরেছি সেটার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। সেখানে দেখা গেছে যে, রোহিঙ্গা সমস্যাটিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমাদের অভ্যন্তরীণ যে বিষয়াবলী রয়েছে সেগুলোকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কিন্তু পরবর্তী জাতিসংঘ আবার তাদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে এবং বাংলাদেশের ‍গুমের ব্যাপারে তারা বেশি আগ্রহ প্রকাশ করছে। সুতরাং আগামীকাল জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে হয়তো গুমের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আর এতে বাংলাদেশের জন্য নতুন কোনো চিন্তার কারণ নেই বলে আমি মনে করি।

জাতিসংঘের ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন এনফোর্সড অর ইনভলান্টারি ডিজঅ্যাপিয়ারেন্স’ নামে পরিচিতি গুমবিষয়ক বিশেষজ্ঞ কমিটি গত শুক্রবার বাংলাদেশে গুমের অভিযোগ বেড়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায়  অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এসব কথা বলেছেন। পাঠকদের জন্য  অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান এর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা ইনসাইডার এর নিজস্ব শান্ত সিংহ।

ড. মিজানুর রহমান বলেন, জাতিসংঘ বলছে, বাংলাদেশ আটজনের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তথ্য দিয়েছে। বাংলাদেশ এটা দিয়েছে সেটা একটা ভালো দিক। অন্যজনদের ব্যাপারে বাংলাদেশকে আরও তদন্ত করতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতোমধ্যে জানিয়েছেন যে, দেশের বেশকিছু গুমের ঘটনার ক্ষেত্রে অনেকে ফিরে এসেছে, অনেকের খোঁজ পাওয়া গেছে এবং এদের ব্যাপারে সরকারের কাছে তথ্য রয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এখনো কিছু জানা যায়নি। সেগুলো ব্যাপারে সরকার কাজ করছে বলে আমরা জানি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বেলায় গুমের ব্যাপারে একটি বড় সমস্যা হলো বহুমাত্রিক গুমের সমস্যা। অর্থাৎ ‍একেক গুমের ঘটনা বা কারণ একেক ধরনের। কিছু কিছু গুমের অভিযোগ উঠেছে রাষ্ট্রীয় কোনো সংস্থা বিরুদ্ধে। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এমনও হয়েছে যে,  কেউ হয়তো নিজেই তার মামলার থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য গুম হয়েছেন বা পালিয়ে গেছেন কিংবা সে নিজেই হয়তো উধাও হয়ে গেছেন। এ ধরনের অনেক ঘটনাই বাংলাদেশে ঘটেছে। অনেকে আছে যারা হয়তো রাজনীতি করে সেটা বিরোধী দলের রাজনীতিও হতে পারে আবার জঙ্গিবাদী রাজনীতিও হতে পারে কিংবা ধ্বংসাত্মক রাজনীতিও হতে পারে। ফলে নানা কারণে তারা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরা ছোঁয়া থেকে রক্ষা পেতে নিজেকে আড়াল করছে এবং অনেকে এগুলোকে গুম হিসেবে চালিয়ে দেওয়া প্রচেষ্টা করছে। সুতরাং বাংলাদেশে গুমের ব্যাপারটা বহুমাত্রিক।

তিনি আরও বলেন, মানবাধিকার বিষয়ে আমরা বলি, কোনো নাগরিককে বিনা কারণে হয়রানি করা যাবে না এবং তার বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। সবকিছু হতে হবে দেশের প্রচলিত আইন মোতাবেক। বাংলাদেশে যে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে না এমন নয়। কারণ আমাদের আইনের শাসন দুর্বল। সে জায়গায় আমাদের আর বেশি নজর দিতে হবে। জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিকভাবে যারা মানবাধিকার নিয়ে কাজ করে তারা আমাদের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করতে পারে। তবে সে অভিযোগগুলোকে সুনির্দিষ্ট হতে হবে। সুনির্দিষ্ট হলে নিশ্চিত রাষ্ট্র সে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখবে। 

সাবেক এই চেয়ারম্যান বলেন, মানবাধিকার ইস্যুকে পশ্চিমা দেশগুলো রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশেরগুলোর বিরুদ্ধে সব সময় তারা এ ধরনের কাজ করে থাকে। এখন ইউক্রেনের সংকটের কারণে লাখ লাখ মানুষ পশ্চিমা দেশগুলোকে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। আজকে ফ্রান্সে, জামানিতে, অস্ট্রিয়াতে, ইতালিতে এবং ইংল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি যৌনকর্মী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে ইউক্রেন থেকে আশ্রয় নেয়া তরুণীদের। শুধু তাই নয় সোশ্যাল মিডিয়াতে তারা এটাকে উৎসাহিত করছে। তাহলে এটা কি মানবাধিকার প্রশ্নের সঙ্গে জড়িত নয়? রাশিয়া থেকে পশ্চিমা দেশগুলো স্যার রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। আর আমাদের কৃষকরা স্যারের জন্য আন্দোলন করছে কারণ স্যারের সংকট তৈরি হয়েছে। আমরা রাশিয়া থেকে স্যার আমদানি করতে পারছি না। কিন্তু কিছুদিন আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি করলো তারা শুধুমাত্র ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে। অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য দেশগুলো রাশিয়া থেকে স্যার আমদানি করতে পারবে। কিন্তু বিশ্বের আর বাকি দেশগুলো সেটা করতে পারবে না। বাংলাদেশ পারবে, ভারত পারবে না, আফ্রিকা পারবে না। আমরা গরীব বলে আমাদের জন্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর আর তারা ধনী রাষ্ট্র বলে তাদের জন্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর নয় এটা কোনো ধরনের মানবাধিকার? মানবাধিকার নামে পশ্চিমাদের তামাশা আমরা অনেক দেখেছি আর কত দেখতে হবে জানি না। আমাদের দেশে গুম হলে সেটা তো আমাদের জন্য মাথা ব্যথা, পশ্চিমাদের মাথা ব্যথা হবে কেন?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭