ইনসাইড পলিটিক্স

ভাগ্য ফিরবে ৫ নেতার?


প্রকাশ: 19/09/2022


Thumbnail

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ৫ নেতার ভাগ্য ফিরবে কিনা, এ নিয়ে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে। এর মধ্যে অন্তত দুজন নেতার ভাগ্য ফিরতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাকি তিনজনও আশা ছাড়েননি। ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এই পাঁচ নেতা মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছিলেন। মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও এদের অন্তত চারজন নেতা ক্রমশ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন, অনেক ক্ষেত্রে দলের চালিকাশক্তিতে পরিণত হয়েছেন। এই ৪ জন নেতা শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন কিনা এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানামুখী আলাপ-আলোচনা চলছে। তবে এদের মধ্যে একজন নেতার পরবর্তী নির্বাচনের মনোনয়ন না পাওয়ার শঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের সবচেয়ে বড় চমক ছিল গুরুত্বপূর্ণ পাঁচজন নেতাকে মনোনয়ন থেকে বাদ দেওয়া।

জাহাঙ্গীর কবির নানক: যারা সেই সময় মনোনয়ন পাননি তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি ঢাকা-১৩ আসন থেকে ২০০৮ এবং ২০১৪ সালে নির্বাচন করেছিলেন। ২০০৯ সালে গঠিত মন্ত্রিসভায় তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১৮ সালে যখন তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি তখন তিনি আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এই সময়ে তার মনোনয়ন না পাওয়াটা ছিল বিস্ময়কর। তবে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি হতোদ্যম হননি, রাজনীতি থেকেও সরে দাঁড়াননি। বরং এই মনোনয়ন না পাওয়াটিকে তিনি তার শক্তিতে পরিণত করেছিলেন এবং দলের জন্য নিরবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করেছেন। এই কাজের পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ কাউন্সিলে তিনি প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। এবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য অন্যতম দাবিদার জাহাঙ্গীর কবির নানক। আর ঢাকা-১৩ আসনে এখন পর্যন্ত যে নির্বাচনের জরিপ আওয়ামী লীগ সংগ্রহ করেছে তাতে বর্তমান এমপি সাদেক খানের অবস্থান খুব একটা ভাল না। সে বিবেচনা থেকে জাহাঙ্গীর কবির নানক ঢাকা-১৩ থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন। শুধু ঢাকা-১৩ নয়, জাহাঙ্গীর কবির নানক আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে পারেন যেকোনো আসন থেকেই। একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা বলছেন যে, ধানমন্ডি আসনটিও এখন টলটলায়মান। জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত এই আসনটি আওয়ামী লীগের জন্য স্পর্শকাতর আসন এবং এখানে আওয়ামী লীগ জাহাঙ্গীর কবির নানককে মনোনয়ন দিতে পারে।

আব্দুর রহমান: আব্দুর রহমান জাহাঙ্গীর কবির নানকের মতো উজ্জ্বল রাজনৈতিক ক্যারিয়ার এবং ক্যারিশমাটিক নেতা না হলেও আব্দুর রহমানও তৃণমূল থেকে উঠে আসা ধাপে ধাপে নেতৃত্ব পাওয়া একজন নেতা। তিনিও ২০১৮ সালের নির্বাচনে ফরিদপুরের আসন থেকে মনোনয়ন পাননি। তার বদলে সাবেক সচিব মনজুর আহমেদকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল। আব্দুর রহমানও জাহাঙ্গীর কবির নানকের পথ অনুসরণ করে মনোনয়ন না পাওয়ার পর হতোদ্যম হননি। বরং  মনোনয়ন না পাওয়াটাকে তিনি শক্তিতে পরিণত করে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা মনোনিবেশ করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার আস্থাভাজন এবং বিশ্বস্ত নেতায় পরিণত হয়েছেন। এর পুরস্কার হিসেবে তিনি গত কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মনোনীত হন। এবার ফরিদপুরে এক ধরনের রাজনৈতিক শূন্যতা বিরাজ করছে। এজন্য তার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অন্যতম এবং অন্যতম জনপ্রিয় জনবান্ধব নেতা হিসেবে পরিচিত। আওয়ামী লীগের ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি মাদারীপুর-৩ আসন থেকে মনোনয়ন পাননি। তার বদলে ওই আসনে মনোনয়ন দেয়া হয়েছিল আবদুস সোবহান গোলাপকে। বাহাউদ্দিন নাছিম যে সময় মনোনয়ন পাননি তখন তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনিও মনোনয়ন না পাওয়ার পর রাজনীতির উপর আস্থা হারাননি, দলের নেতার প্রতি আস্থা হারাননি যার পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। দলের কাউন্সিলে তিনি যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে যাদেরকে প্রাণভোমরা বলা হয় তাদের মধ্যে নাছিম নিঃসন্দেহে একজন। এ কারণেই আগামী নির্বাচনে তাঁর মনোনয়নের সম্ভাবনা ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। দলের মধ্যে তার বিপুল জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই জনপ্রিয়তার কারণেও তিনি শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পেতে পারেন বলে অনেকেই মনে করেন।

বি এম মোজাম্মেল হোসেন: শরীয়তপুরে আসন থেকে বি এম মোজাম্মেল হোসেন ২০০৮ এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৮ সালে তার বদলে ইকবাল হোসেন অপুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ইকবাল হোসেন অপু এলাকায় ভালো কাজ করছেন। বি এম মোজাম্মেল হোসেন নাকি ইকবাল হোসেন অপুকে আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন দেবে এটি নির্ধারিত হবে আরও পরে এবং এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া: মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া চাঁদপুরের আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন, মন্ত্রী হয়েছিলেন। গত নির্বাচনে তাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়নি। এবার নির্বাচনেও তাঁর মনোনয়ন নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কারণ তার নির্বাচনী এলাকায় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী নিবিড়ভাবে কাজ করছেন। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়াকে প্রেসিডিয়াম সদস্য করা হয়নি। এ কারণে অনেকে মনে করছেন যে, শেষ পর্যন্ত তার মনোনয়নটা শঙ্কার মধ্যেই রয়ে গেল।

এই পাঁচ হেভিওয়েট নেতা আগামী নির্বাচনে কোন অবস্থানে থাকবে সেটা বোঝা যাবে সামনে ডিসেম্বরে যে কাউন্সিল অধিবেশন সেই কাউন্সিলে কার কী অবস্থান হয় তার উপর।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭