ইনসাইড গ্রাউন্ড

নারী ফুটবলের প্রতিটি নিঃশ্বাসে শেখ হাসিনা


প্রকাশ: 20/09/2022


Thumbnail

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। গতকাল নেপালের কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়েছে ফাইনাল ম্যাচটি। চারবারের ফাইনালিস্ট স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে স্রেফ উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মত সাফের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ বাংলাদেশের মেয়েরা। তবে এ জয়ের পথটা খুব একটা সহজ ছিলো না। নানা সংগ্রাম এবং প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে দেশের মেয়েদের মুখে আজকের এই চির অমলিন হাসি। সাবিনার দলের প্রত্যেকেই উঠে এসেছেন দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে, যেখানে মেয়েরা ঘরের বাইরে বের হলেই নানা কটূক্তির শিকার হতো। মেয়েরা ছেলেদের মত ফুটবল খেলবে, এটা গ্রামের মানুষের কাছে মেনে নেওয়াটা ছিলো খুব কঠিন। শুধু সমাজের প্রতিবন্ধকতাই নয়, ছিলো পারিবারিক প্রতিবন্ধকতাও। দলের অনেক মেয়েরাই আজ এ পর্যন্ত এসেছে বাবাকে হারিয়ে, মায়ের শেষ সম্বলটুকু নিয়ে কেউবা বোনের অলংকার বিক্রি করে। এদের অনেকেই পরিবারের একমাত্র আয়ের অবলম্বনও!

মেয়েদের আজকের এই বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাসে উচ্ছ্বসিত পুরো দেশবাসী। কিন্তু এই উচ্ছ্বাসের পিছনে রয়েছে ভয়ঙ্কর ইতিহাস। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মেয়েদের ফুটবল খেলা বন্ধ করে দিয়েছিলো। ওই সময় ধর্মীয় মৌলবাদীরা নারীদের ফুটবল খেলার বিপক্ষে আন্দোলন ও বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে হুমকি দিচ্ছিলো। এভাবে নারী ফুটবলে শত শত বাঁধা আসতে থাকে। সেই বাঁধা ডিঙ্গিয়ে আজকের যে মেয়েদের উচ্ছ্বাস, বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে এই পর্যন্ত আসার যে নেপথ্যের কারিগর, তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজকের নারী ফুটবলের সবটুকুই তাঁর অবদান। তিনিই একমাত্র নারীদেরকে ফুটবল খেলায় উৎসাহিত করেন এবং মায়ের মত আঁকড়ে ধরেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন ক্ষমতা আসেন তখন ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতিহারে নারীর ফুটবলকে বিকাশ করার জন্য অঙ্গিকার করেন। ওই সময় মৌলবাদী গোষ্ঠীরা বিক্ষোভ মিছিল করেছিলো, নারীদের ফুটবল খেলা বন্ধ করতে চেয়েছিলো। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যক্তিগত উদ্যোগে শেখ আব্দুল্লাহকে দিয়ে মৌলবাদীদের সাথে বৈঠক করিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত এই উদ্যোগের পরেই আমাদের দেশে নারীদের ফুটবল খেলা স্বাভাবিক হতে শুরু করে। নারীদের ফুটবল খেলাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে মেয়েদের বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব গোল্ডকাপ প্রাথমিক বিদ্যালয় ফুটবল টুর্নামেন্ট। মেয়েদের বিভাগে ৬৪ হাজার ১৯৬টি প্রাথমিক স্কুলের প্রায় ২২ লাখ ছাত্র-ছাত্রী নিয়ে সেই টুর্নামেন্ট শুরু হয়েছিলো।

পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষা সীমান্ত উপজেলা ধোবাউড়ার শত বছরের সুবিধাবঞ্চিত গ্রাম কলসিন্দুর। একটা সময় এ গ্রামের মেয়েরা ফুটবল খেলার সুযোগ পেতো না। এমনকি কলসিন্দু উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ফুটবলারদের বহিষ্কারও করেছিলেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজের মায়ের নামে প্রাইমারি স্কুল ফুটবল শুরু করেন। এরপর থেকে শুরু হয় সে গ্রামের মেয়েদের ফুটবল খেলার যাত্রা।

কলসিন্দুর গ্রামে মেয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি জয়ী মারিয়া মান্দা বলেছিলেন, ‘আমরা আনন্দ করার জন্য ফুটবল খেলতাম। প্রধানমন্ত্রী যদি তার মায়ের নামে প্রাইমারি স্কুল ফুটবল শুরু না করতেন তাহলে আমরা এ পর্যন্ত আসতে পারতাম না। তখন জানতাম না ফুটবলে খেললে টাকা পাওয়া যায়, বিদেশে যাওয়া যায়। এখন বুঝি ফুটবলের মূল্য। অনেকের টাকা আছে কিন্তু বিদেশে সবার যাওয়া হয় না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ কয়জনের হয়? আমরা তার সাথে কয়েকবার দেখা করেছি। আমাদের টাকা দিয়েছেন। আদর করেছেন। আমরা অনেকবার বিদেশে গিয়েছি। একসময় আমাদের পরিবার অনেক কষ্ট করে চলতো। বাবা মারা যাওয়ার মা অন্যের জমিতে কাজ করে আমাদের খাওয়াতেন। এখন ফুটবল খেলে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে যে টাকা পেয়েছি তা দিয়ে জমি কিনেছি। অসুস্থ নানাকে চিকিৎসা করিয়েছি, ঘরবাড়ি ঠিক করেছি। এখন আর আমাদের অভাব নেই। এসব কিছুই হয়েছে ফুটবলের জন্য।’

এএফসি অনূর্ধ্ব-১৪, সাফ অনূর্ধ্ব-১৫, এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬, সাফ অনূর্ধ্ব-১৮ এবং বঙ্গমাতা আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপ জেতা মেয়েদের সংবর্ধনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবর্ধনার পাশাপাশি তাদের পুরস্কার হিসেবে দিয়েছেন লাখ লাখ টাকা। এছাড়াও বেশ কয়েকজন মেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পেয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে কেউ ১০, কেউ ৩, কেউ ১ লাখ। এভাবে ১ লাখ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত পাওয়া মেয়ের সংখ্যা ৪৫ জন বলে জানিয়েছেন নারী ফুটবলের প্রধান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। এর বাইরেও মেয়েরা বাফুফে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক পুরস্কার পেয়েছেন। মেয়েদের কেউ জমি কিনেছেন, কেউ বাড়িতে পাকা ঘর দিয়েছেন, কেউ টাকা ব্যাংকে স্থায়ী আমানত হিসেবে রেখেছেন, কেউ বাজারে দোকান ঘর কিনে ভাড়া দিয়েছেন। এভাবে এ মেয়েরা বদলে দিয়েছেন তাদের পরিবার, যার নেপথ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

আর এভাবেই প্রধানমন্ত্রীর উপহার ও অনুপ্রেরণার জন্যই মনিকা চাকমা, রিতুপর্ণা চাকমা, মাহমুদা, নাজমা, সাবিনাসহ প্রায় অর্ধশত নারী ফুটবলার তাদের পরিবার পাল্টে দিয়েছেন। একমাত্র প্রধানমন্ত্রীই প্রাথমিক স্কুলপর্যায়ে মেয়েদের খেলা শুরু করেই প্রতিভা বাছাইয়ের সুযোগ করে দিয়েছেন। এর পরেই মেয়েরা যখনই সাফল্য অর্জন করেছে তখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন এবং তাদের ডেকে পুরস্কার দিয়েছেন। নারী ফুটবলাররা ভুটানে যখন চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তখনও প্রধানমন্ত্রী ঢাকা থেকে ফোন করে তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। এছাড়াও নারী ফুটবলাররা যখন নেপালে ভূমিকম্পের কারণে আটকা পড়ে তখনো প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টার পাঠিয়ে মেয়েদের উদ্ধার করে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। এভাবেই নারী ফুটবলারদের আজকের এই অবস্থানের পিছনে একমাত্র আলোকবর্তিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭