ইনসাইড পলিটিক্স

ঢাকা নিয়ে আওয়ামী লীগের তিন দুশ্চিন্তা


প্রকাশ: 21/09/2022


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনৈতিক আন্দোলন ক্রমশ ঢাকা মুখী হয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সময় আন্দোলনে ব্যর্থ বিএনপি মনে করছে ঢাকা দখল না করতে পারার জন্যই অতীতের আন্দোলনে তারা সফল হয়নি। তাই এবারের আন্দোলনের সবকিছু কেন্দ্রীভূত করেছে ঢাকায়। বিএনপির নেতারা সরাসরি বলেছেন ঢাকা দখল করতে হবে। আর এ কারণেই বিএনপির আন্দোলনের সমস্ত চিন্তাভাবনা ঢাকা কেন্দ্রিক। ঢাকাকে ঘিরেই বিএনপি সরকার বিরোধী আন্দোলন এবং সরকার পতনের পরিকল্পনা করছে। আর এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই বিএনপি এখন ঢাকায় বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি করার ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। পাশাপাশি বিএনপি মনে করছে যে, ঢাকায় এবারের কর্মসূচিতে অন্যান্য বারের মতো তারা ব্যর্থ হবে না। এরকম একটি পরিস্থিতিতে বিএনপি প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ কি করবে এটাই এখন দেখার বিষয়। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিএনপির আন্দোলন মোকাবেলা করার জন্য দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি দলের সম্পাদক মণ্ডলীর সাথে বৈঠক করেছেন। এছাড়া ঢাকা মহানগরী নিয়ে প্রতিনিয়ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আর এইসব বৈঠকগুলোতে পাওয়া যাচ্ছে যে, ঢাকা নিয়ে আওয়ামী লীগ অতটা সন্তুষ্ট নয়। আওয়ামী লীগের বেশ কিছু দুশ্চিন্তা রয়েছে ঢাকাকে নিয়ে। এই দুশ্চিন্তা গুলোর মধ্যে রয়েছে-

১. দুর্বল কমিটি এবং দুর্বল জনপ্রতিনিধি: ঢাকায় আওয়ামী লীগের উত্তর এবং দক্ষিণ মহানগরের যে কমিটি রয়েছে সে কমিটিগুলোর দুর্বলতা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে ক্রমশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে এবং অতীতে ঢাকায় যেমন, মোহাম্মদ হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার মত নেতারা ছিলেন, এখন সেরকম পরিস্থিতি নেই। যে সমস্ত নেতারা আছেন তারা এখনও জনগণের কাছে জাতীয় নেতা হিসেবে প্রতিভাত হতে পারেননি। তাদের একটি শৃঙ্খল কর্মীবাহিনীও নেই। ঢাকায় এরকম খুব কম নেতাই আছেন যাদের এক ডাকে ৮/১০ হাজার লোক জড়ো হবে। এটি আওয়ামী লীগের জন্য বড় দুশ্চিন্তার কারণ বলে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন। পাশাপাশি বর্তমানে ঢাকায় যে সমস্ত এমপিরা রয়েছেন, তাদের মধ্যে দুই একজন ছাড়া কেউই জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পারেননি। ফলে এমপিরা যে তাদের এলাকাগুলোকে আগলে রাখবেন সে নিয়েও শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটিগুলোতে বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। অনুপ্রবেশকারী এবং হাইব্রিডদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে বলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করেন। এটি আওয়ামী লীগের প্রধান দুশ্চিন্তার কারণ।

২. অভ্যন্তরীণ কোন্দল: গতকালই লালবাগে আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে প্রকাশ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে এবং দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে এ ঘটনাটি আওয়ামী লীগের জন্য নতুন দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। লালবাগের ঘটনাটি প্রকাশ্য হয়েছে। কিন্তু ঢাকা শহরের প্রায় সব এলাকায় আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং এবং কোন্দলের কথা সকলেই জানে। সামনের আন্দোলনগুলোতে এই কোন্দলগুলো বড় ধরনের সংকট তৈরি করবে বলে অনেকে মনে করছে।

৩. অনুপ্রবেশকারীদের হঠকারিতা নাকি দুরভিসন্ধি: আওয়ামী লীগের মধ্যে বেশকিছু অনুপ্রবেশকারী ঢুকে গেছে এবং তাদেরকে জাহির করার জন্য কিংবা কোনো দুরভিসন্ধি মূলক কার্যক্রমের জন্য হঠকারী আচরণ করছে। মিরপুর এবং বনানীর ঘটনা বিশ্লেষণ করে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন যে, কর্মীদেরকে যতটুকু সংযত এবং দায়িত্বশীল আচরণ করা উচিত সেরকম তারা করতে পারেনি। বরং কোথাও কোথাও তারা বিএনপির ফাঁদে তারা পা দিয়েছে।

আওয়ামী লীগের লক্ষ্য সুনির্দিষ্ট বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য। তিনি বলেছেন, আমরা মাঠে থাকব, রাজপথ আমাদের থাকবে। কিন্তু আমরা কারো কর্মসূচিতে বাধা দেব না কিংবা কাউকে সহিংসতায় আক্রমণ করবো না। আর এইভাবে রাজপথে নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করার ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের বর্তমান ঢাকা মহানগরীর নেতৃত্ব, কর্মী এবং পরিস্থিতি কতটা সহায়তা দেবে সেটাই হলো এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭