ইনসাইড পলিটিক্স

জাপাকে নিয়ে ত্রিমুখী লড়াই


প্রকাশ: 21/09/2022


Thumbnail

নির্বাচনের আগে ক্রমশ জাতীয় পার্টি রাজনীতির পাদপ্রদীপের চলে এসেছে। জাতীয় পার্টিকে নিয়ে চলছে নানা রকম মেরুকরণ। আর এই রাজনৈতিক মেরুকরণের ফলে জাতীয় পার্টির ভেতরের অবস্থাও টালমাটাল। বাইরের চাপে জাতীয় পার্টি ভাঙ্গনের মুখোমুখি হলেও বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। জাতীয় পার্টিকে চাইছে এখন তিন পক্ষ এবং তিন পক্ষের কোনো পক্ষে জাতীয় পার্টি যাবে, নাকি জাতীয় পার্টির ভেঙে যাবে এটি এখন নির্বাচনের আগে সবচেয়ে বড় দেখার বিষয় বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক মহল মনে করছেন। জাতীয় পার্টি গত কিছুদিন ধরে সরকার বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। জিএম কাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হওয়ার পর থেকেই তিনি সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টিকে প্রস্তুত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন এবং সেই হিসেবে সংসদে এবং সংসদের বাইরে সরকারের সমালোচনা শুরু করেন। কিন্তু সেই সমালোচনা এখন সর্বব্যাপী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমালোচনা জিএম কাদের স্বইচ্ছায় করেছেন না অন্য কারো প্ররোচনায় করেছেন সে নিয়েও বিভিন্ন অঙ্গনে প্রশ্ন উঠেছে। আর একারণেই জাতীয় পার্টিকে এখন কাছে টানতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জিএম কাদের জানিয়ে দিয়েছে যে, মহাজোট এখন আর নেই। আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের সঙ্গে নাও নির্বাচন করতে পারে। আর এ কারণেই সরকারের বিভিন্ন মহল জাতীয় পার্টির আওয়ামীপন্থী নেতাদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছে এবং তাদের মধ্যে একাধিক বৈঠক হচ্ছে। 

সরকার চাইছে জাতীয় পার্টি অভিন্ন থাকুক। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য করুক। সেটি যদি সম্ভব না হয় তাহলে পরে আওয়ামী লীগের হাতে জাতীয় পার্টির ট্রাম্পকার্ড আছে। তিনি হলেন রওশন এরশাদ। ইতোমধ্যে রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির নতুন কাউন্সিলের দিন তারিখ ঘোষণা করেছেন। এটি নিয়ে জাতীয় পার্টির মধ্যে টানাপড়েন চলছে। ইতোমধ্যে জাতীয় পার্টির রওশনপন্থী হিসেবে দুইজনকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এই সবকিছু নিয়ে শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে তার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি কিনা সেটা দেখার বিষয়। বিএনপিও এখন জাতীয় পার্টির সাথে গোপন সম্পর্ক তৈরি করেছে বলে বিভিন্ন সূত্র নিশ্চিত করেছে। বিএনপির একাধিক নেতা জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জাতীয় পার্টির কয়েকজন নেতা আছেন যারা একসময় বিএনপির রাজনীতি করতেন। পরবর্তীতে বিএনপি থেকে তারা সরে এসেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে জাতীয় পার্টি থেকে বেরিয়ে আসা বিএনপির নেতা শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের মৃত্যুর পর জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা বিএনপি নেতাদের কাছে শাহ মোয়াজ্জেমের ব্যাপারে শোক প্রকাশ করেন। এখন বিএনপি কৌশলগত কারণে জাতীয় পার্টিকে কাছে চাইছে। সম্প্রতি বিএনপির যুগপৎ আন্দোলন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আর এই পরিকল্পনায় তারা জাতীয় চায়। যদি জাতীয় পার্টি বলছে যে, তারা প্রকাশ্যে বিএনপির সাথে যুৎপথ আন্দোলন করবে না। কিন্তু নির্বাচনের আগে জাতীয় পার্টির সাথে একটি কৌশলগত ঐক্য করা, যেন জাতীয় পার্টি বিএনপির অবস্থানের সাথে সহমত থাকে সেজন্য বিএনপি নেতারা কাজ করে যাচ্ছেন। বিএনপি মনে করছে যে, জাতীয় পার্টিকে যদি নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায় তাহলে পরে তাদের সরকারকে চাপ অনেকটাই সফল হবে। আর শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচনে যায় তাহলেও জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ থেকে তারা বিছিন্ন করতে চায়। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, জামায়াতকে যেমন আওয়ামী লীগ বিএনপি থেকে আলাদা করতে চায় তেমনি আমরা এখন জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা করতে চাইচ্ছি এবং যদি জাতীয় পার্টির আওয়ামী লীগ থেকে আলাদা হয়ে যায় তাহলে বিএনপির জন্য এটি একটি প্লাস পয়েন্ট হিসেবে বিবেচিত হবে। 

এছাড়া মৌলবাদী চরম ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলো এখন জাতীয় পার্টির দিকে ঝুঁকেছে। তারা মনে করছে জাতীয় পার্টিকে সামনে রেখে যদি তারা একটা বৃহত্তর জোট করতে পারে সেই জোটটি তাদের জন্য নির্বাচনী ইতিবাচক ফলাফল আনবে। এর আগের নির্বাচনেও হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ শতাধিক ইসলামী দলকে নিয়ে এক জোট করেছিলেন। যদিও শেষ পর্যন্ত ঐ জোট আর টেকেনি। কিন্তু এবার জাতীয় পার্টির কোনো কোনো মহল সেই চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, জাতীয় পার্টি যদি বিএনপিকে বাদ দিয়ে একটি পৃথক বৃহত্তর জোট করে তাহলে সেই জোটের ব্যাপারে সরকারের আপত্তি থাকবে না। শেষ পর্যন্ত বারবার রং বদল করা ক্ষমতার গর্ভে জন্ম নেওয়া এই দলটি কি ভূমিকায় সামনে আসে সেটি বুঝা যাবে খুব তাড়াতাড়ি বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭