ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীদের মুখোশ উন্মোচিত হচ্ছে


প্রকাশ: 22/09/2022


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে বাধা দেওয়া হবে না। বিএনপির শান্তিপূর্ণ ও নিয়মতান্ত্রিক প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিকে স্বাগত জানিয়ে আন্দোলনকারীদের গণভবনে চা খাওয়ার দাওয়াত দিয়েছেন তিনি। কিন্তু রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং মন্ত্রী বিএনপি নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে, বাহাস করে মৃতপ্রায় বিএনপিকে নতুন জীবন দিচ্ছে। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠকে নেতাকর্মীদের কোনো ধরনের সংঘর্ষে না জড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, নেত্রীর নির্দেশের বাইরে গিয়ে কেউ হামলায় জড়িয়ে পড়লে ছাড় দেওয়া হবে না।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি নেতাকর্মীদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। ফলে নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বাইরে একচুল অতিক্রম করে না। তারপরও কিছু কিছু অতি উৎসাহী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দ্বারা বিচ্ছিন্নভাবে কিছু কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাচ্ছে। আর সেই সুযোগে রাজপথে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা মাঠ উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে। প্রশ্ন উঠেছে, এই অতি উৎসাহীরা কারা?

সম্প্রতি ঢাকা মহানগরে আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশকারী ও বিএনপির সন্ত্রাসীদের আক্রমণে আহত হয়েছেন কয়েকজন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক। তাদের মধ্যে একজন চালকের হাতের হাড় ভেঙ্গে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার কোন সরকারী নিবন্ধন নেই। ফলে এটি সরকারীভাবে অবৈধ। কিন্তু সারাদেশে এই অটোরিকশাগুলো চলছে। অটোরিকশাগুলোর প্রয়োজনীয়তা থাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিষয়টি এড়িয়ে যায়। কিন্তু গত ২৪ আগস্ট (বুধবার) সড়ক দুর্ঘটনায় একটি অটোরিকশায় ধাক্কায় তৃতীয় শ্রেণীর একজন ছাত্রী আহত হয়। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছাত্রীটি মারা যায়। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ওই অটোরিকশা চালককে গ্রেফতার করে। এই দুর্ঘটনার কারণে ওই এলাকায় জন-অসন্তোষ দেখা দেয়, ফলে পুলিশ প্রশাসন ওই গলিতে অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশনা দেয়। দীর্ঘ প্রায় এক মাস ধরে দুই শতাধিক অটোরিকশা বন্ধ রয়েছে। ফলে প্রায় পাঁচ শতাধিক অটোরিকশা চালক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে।

ঢাকা শহরে ইঞ্জিনবিহীন রিকশা চলাচলের ফলে ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের গতি মন্থর হয়ে যায়। ফলে মানুষের অনেক কর্ম ঘণ্টা নষ্ট হয়। তারপরও সরকার সদয় হয়ে রিকশা চালকদের জীবিকার কথা বিবেচনা করে রিকশা চলাচল বন্ধ করে দেয় না। শহরের বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় যেমন- গুলিস্তানে হকাররা রাস্তার উল্লেখযোগ্য অংশ দখল করে, ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। কিন্তু এই হকারদের বিকল্প ব্যবস্থা না করে সরকার হকারদের সরিয়ে দেয় না। ঠিক একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অটোরিকশা চালকদের বিকল্প উপার্জনের ব্যবস্থা না করে একটি দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ সময় ধরে অটোরিকশা বন্ধ রাখা একটি আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর ফলে শ্রমিকদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে।

এমন অবস্থায় বিষয়টি নিয়ে অটোরিকশা চালকরা স্থানীয় সংসদ সদস্যের কাছে যান। কিন্তু তিনি এটির কোনো সমাধান না দিলে অটোরিকশা চালকরা বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে যান। ওই সময় অটোরিকশা চালকদের পাশে এসে দাঁড়ান আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাংসদ শাহজাহান খান। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং শাহজাহান খান আলোচনা করে অটোরিকশা শ্রমিকদের জীবিকার কথা বিবেচনা করে মানবিক কারণে অটোরিকশা আবার চালু করারা জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিলেও স্থানীয় কাউন্সিলর যিনি মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় অনুপ্রবেশকারীরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশকে অমান্য করে। তারা রাস্তায় অটোরিকশা ভাংচুর করা সহ কয়েকজন শ্রমিককেও আহত করেন। এরমধ্যে একজন শ্রমিকের অবস্থা বেশ গুরুতর। শুধু তাই নয়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশ প্রতিহত করতে ২৪ আগস্ট সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রী হত্যার বিচারের দাবিতে বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে আন্দোলন এবং মানবন্ধনেরও হুমকি দেয়। ফলে স্থানীয় বিএনপি এই ইস্যুতে রাজপথ উত্তপ্ত করার উপলক্ষ পায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন করাই স্থানীয় নেতাকর্মীদের দায়িত্ব। কিন্তু সেটি না করে তারা উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের এই নেতাকর্মীরা দলে অনুপ্রবেশকারী, যাদের অনেকেই কলেজ জীবনে ছাত্রদলের নেতা ছিলেন, স্থানীয়ভাবে বিএনপির নেতা ছিলেন।

এই অনুপ্রবেশকারীর মধ্যে কেউই বঙ্গবন্ধুর আদর্শে আওয়ামী লীগে যোগদান করেনি। এরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্বার্থ এবং উদ্দেশ্য নিয়ে আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে। বিভিন্ন কৌশলে এরা সংগঠন ও সরকারে অবস্থান করে নিয়েছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিভিন্ন স্থানেও অনুপ্রবেশকারীদের অবস্থান বেশ সুদৃঢ়। শুধু তাই নয়, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আইনের চোখকে ফাঁকি দিতে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির পতাকার তলে আশ্রয় নিয়েছে। আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টিতে যোগ দিয়ে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য প্রতিনিয়ত তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে যে, বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা জাতীয় পার্টিতে যোগদান করে মহাজোটের সদস্য হিসেবে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মারধর করেছে এবং মামলা করতে গেলে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যদের চাপে মামলা করা যায়নি। অতি উৎসাহী এই অনুপ্রবেশকারীরা আওয়ামী লীগে প্রবেশ করে বিএনপি সঙ্গে পরিবেশ উত্তপ্ত করে সরকার এবং দলের ক্ষতি করছে। ঠিক এইভাবেই জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের গুপ্তচর হয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগের এইসব অনুপ্রবেশকারীদের স্বরূপ এখন উন্মোচিত হচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭