ইনসাইড বাংলাদেশ

মিয়ানমারের সাথে কি যুদ্ধ বেঁধেই যাচ্ছে?


প্রকাশ: 22/09/2022


Thumbnail

বাংলাদেশ মিয়ানমার সীমান্তে উত্তেজনা যেন কোনভাবেই থামছে না। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে মিয়ানমারকে বার বার সতর্ক করার পরও থামছে না বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের এই অস্থিরতা৷ সাবেক কূটনীতিক ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মিয়ানমারকে থামাতে প্রয়োজনীয় যে শক্ত বার্তা দেওয়া প্রয়োজন তা দিতে পারছে না সরকার৷ আর এ কারণেই বাংলাদেশের বার্তা আমলে নিচ্ছে না মিয়ানমার।

মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ সহনশীল ভূমিকা পালন করছে। তবে বাংলাদেশের এই সহনশীলতাকে দুর্বলতা মনে করছে না তো মিয়ানমার? মিয়ানমারের এমন উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশ আর কতদিন সহনশীল ভূমিকা পালন করবে বাংলাদেশ সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই সহনশীল ভূমিকা থেকে সরে আসলে তার পরিণতি কি হবে এ নিয়েও চলছে নানা রকম আলোচনা সমালোচনা।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশ যুদ্ধ চায় না৷ শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে৷''

যদিও বাংলাদেশের শান্তিপূর্ণ ও কূটনৈতিকভাবে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা এখন পর্যন্ত সফলতার ছিটে ফোটাও দেখতে পারেনি। এবং এর পেছনে মূল যে কারণ তা হলো বাংলাদেশ এবং মিয়ানমার দুটি দেশ বর্তমানে পুরোপুরি দুটি ভিন্ন রাষ্ট্র ব্যবস্থায় পরিচালিত হচ্ছে। বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ এবং একটি গণতান্ত্রিক দেশের কাঠামো এবং নীতি অনুযায়ীই বাংলাদেশ এই পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করছে। অপরদিকে মিয়ানমারের বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা গণতান্ত্রিক হলেও, শাসন ব্যবস্থায় সবসময় সামরিক বাহিনীর হস্তক্ষেপের কারণে দেশটিতে গণতন্ত্রের চর্চা মুখ থুবড়ে পরেছে। যার কারণে মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে বার বার কঠোর ভাবে প্রতিবাদ করার পরও তার কোন সুফল পায়নি বাংলাদেশ।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘বাংলাদেশ সীমান্তে মিয়ানমার আর কোনো গোলা ফেলবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷’’ ঠিক তার একদিন পর ১৬ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেল বিস্ফোরণে ইকবাল নামে এক রোহিঙ্গা যুবক নিহত হয়৷ আহত হয় আরও ৫ জন। নিহত ইকবাল ও আহতরা তুমব্রু সীমান্তে নো ম্যানস ল্যান্ডের বাসিন্দা৷ রাতে জিরো লাইন থেকে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করলেও শনিবার সকালে তারা আবার জিরো লাইনের আশ্রয়কেন্দ্রে চলে গেছেন৷ এমন পরিস্থিতিতে চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপন করছেন তারা। 

নিরাপত্তার জন্য সীমান্ত এলাকার ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষাকেন্দ্রটি সরিয়ে ওই কেন্দ্রের ৪৯৯জন পরীক্ষার্থীকে শনিবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়ার কুতুপালং পরীক্ষাকেন্দ্রে নেয়া হয়৷

তার আগে গত ৯ সেপ্টেম্বর বান্দরবন জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম-তুমব্রু সীমান্তে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে মিয়ানমার থেকে ছোড়া একটি বুলেট এসে পড়ে৷ ৩ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় মিয়ানমারের যুদ্ধবিমান থেকে ছোড়া দুটি গোলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম এলাকায় পড়ে৷ ২৮ আগস্ট বিকাল ৩টার দিকে মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা একটি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তুমব্রুর উত্তর মসজিদের কাছে পড়ে। 

ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. দেলোয়ার হোসেন মনে করেন, ‘বাংলাদেশেকে মিয়ানমারের বিষয় নিয়ে কূটনৈতিকভাবেই কাজ করতে হবে৷ কিন্তু মিয়ানমারকে এটাও বোঝাতে হবে যে বাংলাদেশ জবাব দিতে সক্ষম৷ তারা আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে না সত্য কিন্তু তারা যা করছে তা একরকম যুদ্ধের উসকানি ছাড়া আর কিছু না।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, ‘যুদ্ধ করে স্বাধীন করা বাংলাদেশ মিয়ানমারের কোন তৎপরতাকেই পরোয়া করে না। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ প্রস্তুত বলেও হুশিয়ারি দেন তিনি। 

এমন স্পর্শকাতর পরিস্থিতিতে ছোট একটি কূটনৈতিক ভুলও বাংলাদেশ মিয়ানমারের মধ্যে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পরার কারণ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। তবে এখন পর্যন্ত মিয়ানমার ইস্যুতে বাংলাদেশ সঠিক পথে এগুচ্ছে বলেও জানিয়েছেন অনেকেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭