ইনসাইড বাংলাদেশ

প্রণয় মিশন শুরু: নির্বাচন নিয়ে মাঠে নামবে ভারত?


প্রকাশ: 22/09/2022


Thumbnail

প্রণয় কুমার ভার্মা, বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের নতুন রাষ্ট্রদূত। আজ দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। ১৯৯৪ ব্যাচের এই কর্মকর্তা সর্বশেষ ভিয়েতনামে ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। সেখান থেকে তাকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। বিক্রম দোরাইস্বামী যুক্তরাজ্যে চলে যাওয়ার প্রেক্ষিতে প্রণয় কুমার ভার্মাকে বাংলাদেশের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রণয় কুমার ভার্মা এমন এক সময়ে বাংলাদেশে এলেন যখন বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে নানারকম মেরুকরণ চলছে। বিশেষ করে আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে, সেই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কিনা, বিএনপি অংশগ্রহণ না করলে সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে গ্রহণযোগ্য হবে কিনা ইত্যাদি প্রশ্ন এখন চায়ের আড্ডায় জমজমাট বিষয় হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এরকম বাস্তবতায় ভারতের ভূমিকা কি, তা একটি বড় প্রশ্ন।

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী চারদিনের সফরে ভারতে গিয়েছিলেন এবং সেখানে নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে একান্ত বৈঠক করে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এই বৈঠক নানা কারণেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পরপরই প্রণয় বাংলাদেশে এলেন। এখন আগামী নির্বাচনে ভারতের অবস্থান এবং ভূমিকা বাস্তবায়ন করাই তার মিশনের প্রধান লক্ষ্য বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। বাংলাদেশের প্রতিটি নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সবচেয়ে বৃহৎ প্রতিবেশী হিসেবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে ভারতের সব সময় একটা আগ্রহ থাকে। ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের ওপর ভারত অনেকখানি নির্ভরশীল। গত এক যুগে দু'দেশের সম্পর্ক অনেকখানি এগিয়ে গেছে। এরকম বাস্তবতায় প্রণয় ভার্মা আগামী নির্বাচনের কি ব্লুপ্রিন্ট নিয়ে নিয়ে এলেন, এটি একটি বড় ইস্যু বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

ইতিমধ্যে পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, তারা আগামী নির্বাচন চায় অংশগ্রহণমূলক, অবাধ সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ। মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস ইতিমধ্যে তিন দফা প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তিনি বলেছেন আগামী নির্বাচনে যেন জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটে এটিই যুক্তরাষ্ট্র চায়। বসে নেই যুক্তরাজ্যও। যুক্তরাজ্যের রাষ্ট্রদূত ডিকসনও নির্বাচন কমিশনে গেছেন, বিরোধী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বলছেন, সরকারের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গেও প্রকাশ্য এবং গোপন বৈঠক করছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দৃশ্যমান দেখতে চায়। তারা আগামী নির্বাচনে জনমতের প্রতিফলন দেখতে চায়। এ নিয়ে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বিভিন্ন ক্রিয়াশীল ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করে যাচ্ছে। কোয়াডভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ভারত ছাড়া অন্য সকলেই নির্বাচন নিয়ে তাদের স্ব স্ব অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে।

ভারতের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত বিক্রম দোরাইস্বামী অবশ্য যাওয়ার আগে বলে গেছেন, বাংলাদেশের নির্বাচন তাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়, এই নির্বাচনে ভারতের কোনো ভূমিকা নেই। কিন্তু বিক্রম দোরাইস্বামী মুখে যাই বলুন না কেন, বাংলাদেশের নির্বাচনে ভারতের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ একটা ভূমিকা থাকে। সেই ভূমিকাটি বাস্তবায়ন করে স্থানীয় দূতাবাস। আর স্থানীয় দূতাবাসের নেতৃত্ব দেন হাইকমিশনার, যে নেতৃত্ব দেবেন প্রণয় কুমার ভার্মা। এ কারণেই একটি স্পর্শকাতর এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি ঢাকায় এসেছেন বলে কূটনৈতিক মহল মনে করছেন। প্রণয় ঢাকায় আসার পর যতটা না দুই দেশের অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য বিষয়ে মনোযোগ দিবেন তার চেয়ে বেশি মনোযোগ দিবেন রাজনৈতিক বিষয়ে। তবে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, ভারত বাংলাদেশের নির্বাচন বা রাজনৈতিক বিষয়ে প্রকাশ্যে জড়ায় খুব কম। যা কিছু করে তারা সবই গোপনে। ইতিমধ্যে বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর নিয়ে যে সমালোচনামূলক বক্তব্য গুলো বিএনপি মহাসচিব এবং অন্যরা দিয়েছেন তাতে দেখা যাচ্ছে যে ভারতের দিকে তারা তাকিয়ে আছেন। এরকম পরিস্থিতিতে প্রণয় আগামী নির্বাচনে কি বার্তা নিয়ে এলেন এবং কি বাস্তবায়ন করবেন সেটাই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭