ইনসাইড আর্টিকেল

বাংলায় মহালয়া থেকে দুর্গাপূজা


প্রকাশ: 25/09/2022


Thumbnail

আসছে দুর্গাপূজা। আজ ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে সূচনা হবে এ বছরের দুর্গা উৎসব। তাই দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এতোদিন ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। তাদের সুনিপুণ হাতের কারূ কার্যে তৈরি হচ্ছে মা দুর্গার অপরূপ আকৃতি।

বলা হয় দুর্গাপূজা সর্বজনীন মহাউৎসব। শান্তির বার্তা নিয়ে যখন দেবী মত্যে আসেন, সবার জন্য নিয়ে আসেন আনন্দ, মহাউৎসব। বাংলাদেশ তথা ভারতীয় উপমহাদেশের এই বিরাট আয়োজনের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য।

ধারণা করা হয়, প্রাচীনকাল থেকেই দুর্গাপূজার প্রচলন শুরু হয়েছে। বৈদিক সাহিত্য মতে ১৫০০ শতকে দুর্গাপূজার সূচনা হয়।আবার অনেকে মনে করেন দেবী দুর্গার বিকাশ আনুমানিক চতুর্থ থেকে পঞ্চম খ্রিষ্টাব্দে। ইতিহাস মতে  ভারতীয় উপমহাদেশে দুর্গা পূজার সূচনা হয় মোঘল আমলে। কিন্তু সে সময় দুর্গাপূজা জনসাধারণ পালন না করলেও সম্ভবত ধনী পরিবারগুলি দুর্গাপূজা পালন করতেন ঘটা করে।



ভারতীয় বাংলার দুর্গাপূজার ইতিহাস নিয়ে অনেক বেশি জানা গেলেও বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে খুব একটা জানা যায় না।ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে প্রথম দুর্গাপূজার সূচনা করেন রাজা গণেশ। বর্তমানে সিলেট অঞ্চল তখন শ্রী হট্ট নামে পরিচিত ছিল।সেই হিসাব মতে বাংলার দুর্গাপূজার প্রচলন পঞ্চদশ শতকে।

আবার অনেক গবেষক মনে করেন ১৫৮৩ সালে এদেশের প্রথম দুর্গাপূজার প্রচলন করেন কংস নারায়ণ। তিনি রাজশাহী অঞ্চলে প্রায় এই সময়ের মূল্য অনুযায়ী আট লাখ টাকা ব্যয়ে এই আয়োজনটি করেছিলেন।সেই সময় রাজশাহীর ভাদুরিয়া অঞ্চলের রাজা ছিলেন জয় জগত নারায়ণ। তিনি কংস নারায়ণকে প্রতিবন্ধী মনে করে নয় লাখ টাকা ব্যয়ে  আয়োজন করেন আরেকটি দুর্গা পূজার আয়োজন।

ঢাকায় দুর্গাপূজার প্রচলন হয় বেশ খানিকটা পরেই। নবাব সলিমুল্লাহর আমলে। ধারণা করা হয়, ১৮৩০ সালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে দুর্গাপূজা শুরু হয়। সে সময় এই পূজাটির আয়োজন করেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নন্দ লাল বাবু।

১৮৫৭ সালের পর দুর্গাপূজার ইতিহাস ঘাটলে জানা যায় বিক্রমপুরের ভাগ্যকুল জমিদার বাড়িতে ছিল দুর্গাপূজার প্রচলন। জানা যায় সে সময় এই অঞ্চলটিতে দুর্গাপূজার আয়োজনটি ছিল ব্যাপকভাবে প্রসিদ্ধ।সে সময় সিদ্ধেশরী জমিদার বাড়ি এবং বিক্রমপুর হাউসে দুর্গা উৎসব পালিত হত দারুণ ঘটা করে।

সেই পুরনো আমল থেকেই ঢাকার সব থেকে বড় পূর্জা পালিত হয় ঢাকার লালবাগে অবস্থিত ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সে সময় ঢাকেশ্বরী মন্দিরের দেবীর আরেক রূপের নাম দেয়া হয়েছিল "দেবী ঢাকেশ্বরী"

ইতিহাসের শুরুতে দুর্গাপূজা কখনোই জনসাধারণের পূজা ছিল না। বিংশ শতকে রাজা, ধনী পরিবার, জমিদারের ভেতরেই এই পূজা পালিত হত ঘটা করে। ধারণা করা হয়, সে সময় পূজায় অনেক অথই খরচ করতেন তাঁরা। মূলত এর পেছনে কাজ করত ক্ষমতা বা প্রভাব প্রতিপত্তি দেখানোর মত বিষয়গুলো। দুর্গা পূজা সর্বজনীন পূজায় পরিণত হতে সময় নিয়েছে অনেকটা বছর। আর সর্বজনীন পূজায় পরিণত হওয়ার পরেই মূলত দুর্গা পূজা জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছে ধীরে ধীরে।

বাংলাদেশে দুর্গা পূজা এখন নানা ঢংয়ে, নানা আয়োজনে পালন করা হয়। বাহারি থিমের সাথে মিল রেখে বানানো হয় একেকটা দুর্গা মন্ডপ। এছাড়া অনেকেই এখন এই থিমগুলোকে কাজেলা গাচ্ছে সমাজের নানা অসংগতির চিত্র তুলে ধরার অস্ত্র হিসেবে। নারীর প্রতি সহিংসতা কিং বাস মাজের অবহেলিত মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছে এই থিম গুলো।

দুর্গা পূজার পুরনো ইতিহাসের সাথে মিশে আছে বাংলার হাজার বছরের ইতিহাস এবং ঐতিহ্য। ইতিহাসকে সঙ্গে নিয়ে এই উৎসব এখন সর্বসাধারণের উৎসবে পরিণত হয়েছে। আর দুর্গা পূজা এখন শুধুমাত্র দেবীর পূজাতেই সীমাবদ্ধ নেই বরং এই পূজা হয়ে উঠেছে বাংলার শিল্পের বিকাশ, সমাজের অসংগতির প্রতি নিঃশব্দময় বিপ্লব।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭