ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

এশিয়ায় আনাগোনা বাড়ছে ভিনদেশীদের


প্রকাশ: 27/09/2022


Thumbnail

বিশ্ব পর্যটন দিবস আজ। করোনা মহামারির ভয়াবহতা কাটিয়ে বিশ্বব্যাপী দেশে দেশে পর্যটকের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। উন্নয়ন ও সেবার সব খাত সচলসহ যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্মুক্ত হওয়ায় ভ্রমণ আর পর্যটনে গতি ফিরেছে। করোনার আগে বিশ্বজুড়ে পর্যটন খাতে যেখানে শত কোটির বেশি পর্যটকের অবদান ছিল, বর্তমানে সেই সংখ্যা বাড়ছে। দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকার পর দেশে দেশে মানুষ এখন সবচেয়ে বেশি বহির্মুখী ও ভ্রমণমুখী হয়েছে; যা পর্যটন খাতের অপার সম্ভাবনাকে প্রসারিত করছে প্রতিদিন।

বিশ্বের ট্যুর অপারেটরস অ্যাসোসিয়েশন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার ভয়াবহতার পর দেশে দেশে পর্যটকের সংখ্যা আগের তুলনায় বেশি বাড়ছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী দুয়েক বছরের মধ্যে তা আড়াইশ কোটি ছাড়িয়ে যেতে পারে। পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিপুলসংখ্যক পর্যটকের মধ্যে ৭৩ শতাংশের বেশি বেছে নেবেন এশিয়ার দেশগুলোকে। বিশ্বপর্যটনের বিশাল সেই বাজার ধরতে পারলে এই খাতের হাত ধরেই আরো দ্রুত বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি।

সূত্রমতে, করোনাকালের বড় আঘাতে বিশ্বপর্যটনে গভীর ক্ষত তৈরি হলেও বাংলাদেশ দ্রুত ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। যার প্রমাণ মিলেছে গত ২৪ মে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) সর্বশেষ প্রতিবেদনে। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি বলছে ভ্রমণ ও পর্যটনে বিশ্বের শীর্ষ দেশের তালিকায় তিন ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৯ সালের সূচকে ১০৩তম থেকে এবার উঠে এসেছে ১০০তম অবস্থানে। দক্ষিণ এশিয়ায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। যেখানে শীর্ষে ভারত। বিমান পরিবহন অবকাঠামো, নিরাপত্তা, সংস্কৃতি, বাসস্থান, টাকার মান ও স্থিতিশীল ভ্রমণের সুযোগসহ ৯০টি মানদণ্ড বিবেচনা করে পর্যটনের এ র‌্যাঙ্কিং করা হয়েছে।

ট্যুর অপারেটরস এসোসিয়েশনের তথ্যমতে, দেশে পর্যটন খাতের রাজস্ব আয় যেখানে বছরে ৭০-৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার; সেখানে সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলোর রাজস্ব বহুগুণ। নেপাল আয় করছে বাংলাদেশের প্রায় আড়াই গুণ, ২০০ মিলিয়ন ডলারের মতো। পাকিস্তানে পর্যটন খাতের আয় বাংলাদেশের চেয়ে সাড়ে তিন গুণ, টাকার অঙ্কে ২৭৬ মিলিয়ন ডলার; শ্রীলংকায় পাঁচ গুণ, যা টাকার অঙ্কে ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার (বর্তমান পরিস্থিতির আগে) এবং মালদ্বীপ আট গুণ, টাকায় ৬০২ মিলিয়ন ডলার। আর পর্যটন খাতে রাজস্ব আয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ থাকা প্রতিবেশী ভারত আয় করছে বাংলাদেশের চেয়ে ১৪১ গুণ, প্রায় ১১ হাজার মিলিয়ন ডলার।

অথচ খাত-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সার্কভুক্ত অন্য দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশের পর্যটন শিল্প বিকাশের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাদের মতে, বাংলাদেশের প্রকৃতি, পরিবেশ-প্রতিবেশ, মাটিই শুধু নয়, এখানকার বৈচিত্র্যভরা মানুষও পর্যটকের কৌতূহলের কেন্দ্রবিন্দু। সে কারণে পর্যটন শিল্পের সবটুকু সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পর্যটন খাতের মডেল। 

বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হবে। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডসহ বিভিন্ন সংস্থা দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।

এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য হলো- ‌‘পর্যটনে নতুন ভাবনা’। পর্যটনের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধিসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক উপযোগিতাকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া এই দিবসের লক্ষ্য।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সকাল সাড়ে ৭টায় আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের সামনের সড়কে শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

সকাল ৮টায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় আয়োজিত আলোচনা সভা আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবনের শৈলপ্রপাত মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।

পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটা, বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পূর্বাংশে অবস্থিত প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন ছাড়াও দেশে প্রচলিত কয়েকশ পর্যটন স্পটের বাইরে অপ্রচলিত স্পটের সংখ্যা আরো অনেক বেশি। যেসব স্পট পর্যটনবান্ধব করে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড। পাশাপাশি সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পুণ্ড্রনগর বা মহাস্থানগড়ের মতো বহু পুরাকীর্তি ও প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন স্পটগুলো নিয়েও চলছে পরিকল্পনা, যেসব জনপ্রিয় স্পট বাংলার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যকে প্রতিদিনই তুলে ধরছে পর্যটকদের সামনে।

উল্লেখ্য, জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) উদ্যোগে ১৯৮০ সাল থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর দিবসটি পালন করা হয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭