ইনসাইড থট

শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিকের দর্শন জনগণের ক্ষমতায়ন


প্রকাশ: 28/09/2022


Thumbnail

২৮ শে সেপ্টেম্বর বাঙালি জাতির জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কেননা এই দিনে জন্মগ্রহণ করেন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠ কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। এই কারণের জন্যই ২৮ সেপ্টেম্বরকে আমরা অন্য দৃষ্টিতে দেখি। আমি জানি এদিন বিভিন্ন লোক তাকে বিভিন্নভাবে মূল্যায়ন করবেন। কিন্তু আমার বক্তব্য শুধুমাত্র একদম ব্যক্তিগত পর্যায়ে। আমি সর্বপ্রথম তাকে দেখেছি হাজার ১৯৬২ সালে। হিসাব করলে প্রায় ৬৩ বছরে হয়। তখন তিনি আজিমপুর গার্লস স্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্রী ছিলেন।

১৯৬২ সালে শিক্ষা আন্দোলন হয়। সেই শিক্ষা আন্দোলনের প্রধান মিটিংগুলো হতো বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায়। তখন স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা খুব কম এই সভায় যোগদান করতেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ছিলেন অনন্য। তিনি ওই সভায় যোগদান করতেন। তখন আমি তাকে দূর থেকে দেখেছি এবং শুনেছি যে তিনি তখনকার মুজিব ভাইয়ের কন্যা। প্রথম দর্শনেই তাকে মনে হয়েছে একজন অসাধারণ কিশোরী হিসাবে। সাধারণ কিশোরীদের চপলতা থাকে। শেখ হাসিনার মধ্যেও সেটি নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু সেটা  আমার চোখে পড়েনি। আমার চোখে পড়েছে একজন জেদি কিশোরী হিসেবে। শিক্ষা আন্দোলনের সময় তিনি তার লেখাপড়ার ঝুঁকি নিয়ে সেদিন সেই বটতলা সভায় যোগদান করেন। শেখ হাসিনার সাথে পরিচয় হওয়ার আগে থেকেই বঙ্গবন্ধুর সাথে আমার পরিচয় ছিল। সে সময় মাঝে মাঝে কিশোরী শেখ হাসিনাকে দেখেছি এবং সবসময় তাকে অন্য কিশোরীদের থেকে একটু আলাদাই দেখেছি। একই সাথে তিনি কিশোরী এবং একজন ম্যাচিউর পারসন। এই ধরনের কম্বিনেশন সচরাচর চোখে পড়ে না। কিন্তু এতদিন পরেও আমার চোখে তিনি সেভাবেই বিরাজমান। সে সময়ে বঙ্গবন্ধু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মাঝে মাঝে  জেলে থাকতেন এবং কিশোরী শেখ হাসিনার মাধ্যমে বঙ্গমাতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ খবর আদান প্রদান করতেন।

একজন কিশোরী যদি অনন্য সাধারণ না হয়। একজন কিশোরী যদি তখন থেকেই ভবিষ্যতে একজন দার্শনিক হবেন এইটা না থাকে তাহলে তার ব্যবহার এরকম হতে পারে না। তার এত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব নেয়ার প্রশ্নই উঠে না। কিন্তু তিনি সেই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেছেন। যার ফলে আমাদের পরবর্তীতে শিক্ষা আন্দোলনের পরে অনেক আন্দোলন হয়েছে। এরপরে ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। তার আগের ছয় দফা আন্দোলন তা এদেশের ইতিহাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সে সময়ও এই কিশোরী তখনও তিনি মাত্র তরুণী হতে চলেছেন। সেই সময় তিনি একজন অনন্য সাধারণ। এটা আমাকে স্বীকার করতেই হবে যে, তখন ভাবিনি যে ভবিষ্যতে সেখানকার একজন মাত্র তরুণী ওটা শেখ হাসিনা ভবিষ্যতে একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা হবেন। এটা চিন্তা আসেনি। কিন্তু যদি ঘটনা পরস্পরায় মেলানো যায় বর্তমান শেখ হাসিনা আর সেই ১৯৬২ সাল থেকে দীর্ঘ পরিক্রমার শেখ হাসিনা তাহলে খুব সহজেই বোঝা যায় যে, তখন থেকেই তিনি যে ভবিষ্যতে দার্শনিক হবেন, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বে একটি স্থান করে নেবেন। তবে এটা বুঝতে পারিনি যে, বর্তমান বিশ্বে তিনিই একমাত্র রাষ্ট্রনায়ক যিনি নিদর্শন দিয়ে দেশের প্রতিটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এমনকি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থায় গিয়েও তিনি তার দর্শনের কথা বলেছেন।

আমি দেখেছি যখন তিনি ইডেন কলেজের ভিপি নির্বাচনে নির্বাচিত হওয়ার জন্য বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সিদ্ধান্ত নেন। আমরা তখন যারা ছাত্রলীগের মোটামুটি নেতৃত্ব এবং আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি। আমরা সকলে তাকে খুব ভালোভাবে বুঝালাম যে, নির্বাচনের জয় লাভের কোন সম্ভাবনা নাই। বরং বিপুল ভোটে হারতে হবে। তখন দুটো অসুবিধা ছিল। একটি হচ্ছে তখন মেয়েরা মোটামুটি সকলেই ছাত্র ইউনিয়নের সমর্থক। ছাত্রলীগ কেউ করত না। সাধারণভাবে আমার বলতে কোনো দ্বিধা নেই যে, ছাত্রলীগে আমাদের সময় বেশি কাটত লেখাপড়ার পাশাপাশি এনএসএফের সাথে যুদ্ধ করে মারামারি করে টিকে থাকা। তা না হলে ছাত্র আন্দোলন ওই খানে মুখ থুবরে পড়ে যেত ছাত্র। ইউনিয়নের কাজ ছিল গলায় একটা ব্যাগ ঝুলিয়ে দুই একটা কবিতার বই লেখা, কবিতা পড়া, আর প্রেম করা। সুতরাং মেয়েরা অধিকাংশই ছাত্র ইউনিয়নদের সমর্থন করতেন। তারা ভাবত এরা লেখাপড়া জানেন। আর ছাত্রলীগ মানে গুন্ডা। গুন্ডাদের সাথে কেউ প্রেম করতে চায় না। সুতরাং আমরা এই ক্ষেত্রে জিরোতে ছিলাম। আর আমাদের যারা অল্প কয়েকজন ছিল তার ভিতরে আমাদের বর্তমান দার্শনিক শেখ হাসিনা পড়েন। তার ব্যক্তিত্ব এমন ছিল যে, তার দিকে তাকালে, তার সাথে কথাবার্তা বললে বোঝা যেত যে, তাঁর সাথে অন্যান্য কিশোরী বা তরুণীদের থেকে একটি মৌলিক পার্থক্য ছিল। এই মৌলিক পার্থক্য ছিল আল্লাহ প্রদত্ত। তার দিকে তাকালে আমার মনে হয় না কোন ছেলে বা কোন লোক তাকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করা ছাড়া অন্য কোন হাসি-ঠাট্টা করা বা অন্য কিছু করার কথা স্বপ্নেও চিন্তা করত না। এটা হচ্ছে তাঁর ব্যক্তিত্ব। এই ব্যক্তিত্ব তিনি অর্জন করেছেন। তিনি সকলের মধ্যে এটা বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছিলেন। এই কারণের জন্য তখন থেকেই তিনি অনন্য। সে সময় তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে দাঁড়ালেন। উনি একজন জেদি তরুণী হিসাবে এবং আমাদেরকে শুধু বললেন যে, আপনারা আমাকে যেটুক সাহায্য করার করেন। নির্বাচনে আমি বিজয় লাভ করব। এই কথা শোনার পরে তখনকার তখন গভর্নর মোনায়েম খান বলে দিলেন যে, শেখ মুজিবের মেয়ে যদি ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় তাহলে এটা ছয় দফার জন্য ম্যান্ডেট হবে। সুতরাং আমরা এতদিন যেটুকু আশা ভরসা করেছিলাম, শেখ হাসিনা ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে কিছুটা হয়তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। কিন্তু জয়ী হতে পারবেন না। মোনায়েম খানের একটা গুণ ছিল। উনি যেটা বলছেন সেটা কাজে পরিণত করতেন। তার গুণ্ডা বাহিনীর থেকে শুরু করে কলেজের অথরিটিকে সবাইকে চাপ দিতে শুরু করলেন। আমরা ভাবলাম আশা ভরসা নাই। আমরা সামান্য পোস্টার লেখা, সিগারা খাওয়ানো এইসব কাজে তাকে সাহায্য করতাম। এই দার্শনিক শেখ হাসিনার মহত্বের কারণে উনি খুব বড় করে দেখেন এবং উনার বিভিন্ন বক্তব্যে আমাদেরকে যেভাবে বড় করেন তার নির্বাচনের সাহায্য করার জন্য যদি সত্যিকারে বলতে হয় তাহলে আমরা তাঁর দশভাগের একভাগ কাজও করিনি। উনি আমাদেরকে যে মূল্য দেন সেটা ওনার বদান্যতা। এই বদান্যতা বঙ্গবন্ধুর মধ্যে ছিল। তাঁর কন্যার মধ্যে আছে। নির্বাচনে শেখ হাসিনা প্রায় ৭৩ শতাংশ ভোট পেয়ে এখনকার দার্শনিক শেখ হাসিনা তখনকার তরুণী তিনি নির্বাচনে জয়ী হলেন অর্থাৎ ছয় দফার জন্য পাবলিকলি প্রথম ব্যক্তি যিনি নাকি ম্যান্ডেট গ্রহণ করলেন। এই ম্যান্ডেট গ্রহণকারী শেখ হাসিনা পরবর্তীতে একজন মধ্যবিত্ত মা-বাবা যা করে বঙ্গবন্ধু ওয়াজেদ মিয়ার সাথে বিয়ে দিলেন। অনেকে অনেক কিছু বলার পরও তিনি তাকে আবার স্বামীর সাথে সংসার করতে পাঠিয়ে দিলেন।

আরেকটি ঘটনা উল্লেখ না করলেই নয়, আগরতলা মামলার সময় তিনি বঙ্গমাতা নির্দেশে যে সকল খবর আনতেন এবং আমাদের আন্দোলনের সুবিধা হতো। তাঁর একটি বিষয় যদি আগে বাইরে চলে যেত তাহলে তখনকার তরুণী শেখ হাসিনা এবং বঙ্গমাতা সহ অনেককেই হত্যা করা হতো এবং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান কিছুই হতো না। আমাদের বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের কবর রচনা হতো। এইরকম গুরুদায়িত্ব একজন তরুণী নিতে পারে। ওই তরুণী যদি সত্যিকারে তখন থেকেই একজন দার্শনিক তাঁর ভিতর বসবাস না করত তা হলে কোন কিছুতেই সম্ভব হতো না। তখন তিনি এইভাবে দায়িত্ব পালন  করেছেন এবং আমরাও বাইরে আন্দোলন ঠিকমতো করতে পেরেছি সকলে মিলে বঙ্গমাতার নেতৃত্বে। পরবর্তীতে একটি ঐতিহাসিক প্রয়োজনে, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ঠিক রাখার জন্য, বাংলাদেশ যেন পাকিস্তান না হয়ে যায় সেইটা করার জন্যই তখনকার আওয়ামী লীগ নেতারা এই শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগ প্রধান করে দেশে আনেন। তিনি নিজের বাড়িতে ঢুকতে পারেননি কিন্তু আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যে আমরা যে কারফিউয়ের মধ্যে ছিলাম তা তুলে নিতে তিনি বাধ্য করেন।

পরবর্তীতে ২১ বছর পরে শেখ হাসিনা আবার আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনলেন। ক্ষমতায় এসেই তিনি দেশ চালানো দার্শনিক হিসেবে। তাঁর প্রতিটি কাজে তিনি তাঁর দর্শন প্রয়োগ করতেন। যেমন, আমি যেটা নিয়ে নিয়মিত কাজ করি সেটাই উদাহরণ দেই, এই কমিউনিটি ক্লিনিক তিনি দর্শন নিয়ে কাজ করলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন সংবিধান অনুযায়ী কেউ স্বাস্থ্যসেবার বাইরে থাকবে না। সেজন্য তিনি কমিউনিটি ক্লিনিক করলেন। তিনি জনগণকে ক্ষমতায়ন করলেন। আমাদের দেশে তো নারীদের ক্ষমতায়ন ছিল না। কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে, কমিউনিটি ক্লিনিকে চাকরি দিয়ে নারীদের ক্ষমতায়ন করলেন। একই সাথে তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকে লেখাপড়ার ব্যবস্থা করলেন। লেখাপড়া করলে চাকরি পাওয়া যাবে। সুতরাং বাল্যবিবাহ বন্ধ করা যাবে। স্কুলে মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণ করার হার বেড়ে গেল। সার্বিকভাবে শিক্ষার হার বেড়ে গেল। একটা দর্শনে তিনি কত কিছু করেছেন। একই সাথে একটি বাড়ি একটি খামার করেছেন। তিনি বলেছেন, এক ইঞ্চি জমিও ফাঁকা রাখা যাবে না। অর্থাৎ বিশ্বব্যাপী যে অর্থনৈতিক সমস্যা হচ্ছে সেটার জন্য তিনি আগে থেকেই আমাদেরকে প্রস্তুত করছেন।

তাঁর আরেকটি দর্শন হলো কেউ ঠিকানা বিহীন থাকবে না। প্রত্যেককে একটি ঘর পাবে এবং তিনি সেটা করেছেন এবং এখনো করছেন। তিনি বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতাও ব্যবস্থা করেছেন। দেশের ২১ টি জেলা মূল অর্থনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। দার্শনিক সে জেলাগুলো মূল অর্থনীতির সঙ্গে এক করলেন পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে। দার্শনিকের চিন্তা সফল দেশে আজ মেট্রোরেল হচ্ছে, কর্ণফুলী টানেল হচ্ছে। এগুলোর প্রতিটির পিছনে একটি করে দর্শন আছে। দার্শনিক শেখ হাসিনার একজন কর্মী হিসেবে আজ আমি দোয়া করি আল্লাহ যেন এই দার্শনিক শেখ হাসিনাকে দীর্ঘজীবী করেন এবং রাষ্ট্রীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত রাখেন। যাতে তিনি তার দর্শনকে বাস্তবে রূপ দিতে পারেন দেশে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে। তাহলে বাংলাদেশের চেহারাও পরিবর্তিত হবে। সাথে সাথে বিশ্বের চেহারাও পরিবর্তিত হবে। কেননা আগামী ১০০ বছর এরকম কোন দার্শনিককে বিশ্ব পাবে না।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭