ইনসাইড পলিটিক্স

আন্দোলন থেকে জনগণ দূরে: চিন্তিত বিএনপির নেতারা


প্রকাশ: 28/09/2022


Thumbnail

বিএনপি নেতারা টানা আন্দোলন শুরু করেছে। বিভিন্ন জায়গায় সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ ইত্যাদি কর্মসূচি পালন করছে। কিন্তু  এসব কর্মসূচিতে বিএনপির কর্মীদের সহিংস রূপে দেখা যাচ্ছে। এখন কর্মসূচিগুলোতে লাঠিসোটা নিয়ে আসছেন বিএনপি কর্মীরা। আর এতে কর্মীদের মধ্যে একটা চাঙ্গা ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু বিএনপি এরকম সভা সমাবেশগুলো নিয়ে কর্মীরা ব্যস্ত থাকলেও নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। নেতারা উদ্বিগ্ন, তারা সন্দিহান। এভাবে কর্মসূচি কতদিন এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যাবে। উদ্বেগ এবং প্রধান চিন্তার কারণ হলো জনসম্পৃক্ততার অভার। বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন যে, একথা ঠিক যে, আমরা যে কর্মসূচিগুলো করছি সেই কর্মসূচিগুলোতে কর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করছেন এবং কর্মীদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ উদ্দীপনা তৈরী হচ্ছে। তবে কোনো কর্মসূচিতে এখন পর্যন্ত সাধারণ জনগণকে আমরা সম্পৃক্ত করতে পারেনি। সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত না করতে পারলে কোন আন্দোলনে সফল হবে না। 

বিএনপির একজন ভাইস-চেয়ারম্যান বাংলা ইনসাইডারকে বলেছেন যে, আমরা অতীতের কর্মসূচিগুলো করেছিলাম দল এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক। যেমন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি, তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে অপপ্রচারের দাবিতে। এই সমস্ত কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত হয়নি। এটা বুঝাই যায় যে, সাধারণ মানুষের এসব বিষয় নিয়ে কোনো আগ্রহ নেই। এ ধরনের বিষয়ে সাধারণ মানুষ রাজপথেও নামবে না। এ কারণেই বিএনপি স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল যে, এমন কিছু কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে যে কর্মসূচি জনসম্পৃক্ত এবং জনগণ এই কর্মসূচি গুলোকে নিজেদের দাবি বলে মনে করে। এ কারণেই আমরা দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং ইত্যাদি নিয়ে  কর্মসূচির ঘোষণা করেছি। কিন্তু সেই সব কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করতে পারছে না। সাধারণ মানুষ কেন অংশগ্রহণ করতে পারছে না- এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের মধ্যে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। বিএনপির কোনো কোনো নেতা মনে করছেন যে, মানুষ এখন তাদের জীবন জীবিকা নিয়ে এত বেশি ব্যস্ত যে এ ধরনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করার মতো উৎসাহ-উদ্দীপনা তাদের নেই। জনগণ তাদের মতামত এখন রাজপথে দেওয়ার চেয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পছন্দ করে। বিএনপির ওই নেতা বলছেন যে, আপনারা যদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে দেখেন তাহলে দেখবেন যে, বিএনপির পক্ষে সাধারণ মানুষের এক ধরনের সহানুভূতি এবং সমর্থন রয়েছে। কিন্তু এই সহানুভূতি এবং সমর্থন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গণ্ডি পেরিয়ে রাস্তায় আসছে না। অন্য একজন নেতা অবশ্য বলেছেন ভিন্ন কারণ। তার মতে কর্মসূচিগুলো পুলিশের বাধা এবং বিএনপি নেতাদেরও লাঠিসোটা নিয়ে সম্মেলন স্থলে যোগ্দান একটি উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ এই ধরনের সংঘাত সহিংসতা থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে চায়। আর এ কারণেই এ সমস্ত সমাবেশগুলোতে সাধারণ মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। এটি সরকারের একটি কৌশল বলে জানা গেছে। 

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা মনে করছেন যে, বিএনপির এই সমস্ত কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ না থাকার কারণ হলো জনগণের চিন্তা-চেতনা, মানসিকতা ইত্যাদি পাল্টে গেছে। গত এক যুগে এদেশের মানুষের  ভাবনার নতুন নতুন ক্ষেত্র উন্মোচিত হয়েছে। একটা সময় যেমন ছিল হরতালের মতো কর্মসূচি গুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে পালিত হতো বা মানুষ হয়ে হরতালে যেত না। কিন্ত এখন হরতাল অকার্যকর হয়ে পড়েছে। শুধু হরতাল না, একইভাবে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মসূচিগুলো এখন আস্তে আস্তে বিবর্ণ হয়ে পড়েছে। আর এ কারণেই বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যে চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন দরকার সেই পরিবর্তন আসছে না। বিএনপি এখনো সনাতন পদ্ধতিতে যে আন্দোলনের চেষ্টা করছে সেই আন্দোলনে জনগণকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। আর জনগণকে আকৃষ্ট না করতে পারলে এসব আন্দোলন কখনোই সফল হবে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭