ইনসাইড আর্টিকেল

নদী, মৃত্যু এবং আমরা সাধারণ


প্রকাশ: 29/09/2022


Thumbnail

নৌকাডুবি, ট্রলার ডুবি কিংবা লঞ্চ ডুবি দেশের এখন নিত্যদিনের ঘটনা। কয়েক দিন আগে পঞ্চগড়ের বোদায় নৌকাডুবে নিহত হয়েছে অনেক। এ ঘটনায় এখনো লাশের সংখ্যা বাড়ছে হু হু করে। কিন্তু মনে প্রশ্ন জাগতে পারে এই নৌকাডুবি কিংবা ট্রলার ডুবির সংখ্যা এত বাড়ছে কেন?

শুধুমাত্র সরকারের ওপর দোষ চাপালেই হয়না বরং দেশে ঘটা অনেক দুর্ঘটনা এবং প্রাণহাণীর জন্য  দায়ী  থাকি আমরা নিজেরাই। নিজেদের সচেতনতার অভাব এবং দায়িত্বহীনতা আমাদের দেশের ঘটা অনেক অঘটনের জন্যে দায়ী। সদ্য পঞ্চগড়ে নৌকাডুবিও তারই ইঙ্গিত দেয়।

দেশে নৌ দুর্ঘটনা কমছেই না। দেশে থাকা অগণিত হাওর বাওরে প্রতিনিয়ত চলছে ট্রলার, নৌকা, লঞ্চ, জাহাজ, স্প্রিডবোর্ড। শুধুমাত্র বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটলেই পত্রিকায় তা ফলাও করে ছাপানো হয় কিন্তু ছোটখাট দুর্ঘটনাগুলো চাপা পরেই থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে বাংলাদেশে যে হারে নৌ দুর্ঘটনা ঘটেছে তা রীতিমত চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এইসব দুর্ঘটনা ঘটছে যত টানা নদীর স্রোত কিংবা বৈরি আবহাওয়ার জন্য, ততটাই আমাদের নিজেদের অসচেতনতা আর অব্যবস্থাপনার জন্যেই ঘটছে।

পঞ্চগড়ের বোদায় ঘটা দুর্ঘটনার দিকে তাকালে শুরুতেই বলা যায় অসচেতনতাই এই নৌকাডুবির কারণ। নৌকায় যাত্রী ওঠানোর আগ মুহুর্তের একটা ছোট ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই। এই ভিডিওটিতে দেখলেই বোঝা যায় এই ছোট নৌকাটি কতজন লোক উঠেছিল। আপাত দৃষ্টিতে দেখা যায় নিজেদের বিপদ নিজেরাই যেন ডেকে নিয়ে এসেছিল সবাই। তিল ঠাই দেয়ার জায়গা ছিল না নৌকাটিতে।ঘাট থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি বড়শশী ইউনিয়নের বোদেশ্বরী মন্দিরের দিকে যাচ্ছিল। নদীর মাঝে গিয়ে স্রােতে দুলতে শুরু করে নৌকা। কিছুক্ষণের মধ্যেই উল্টে যায় নৌকাটি। যেখানে নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে করতোয়া নদীর এই জায়গাটি এমনিতে খুব খরস্রােতা নয়; গভীরতাও খুব বেশি নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক টানা বর্ষণের পর উজানের ঢলে নদীতে পানি বেড়েছে অনেকটা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, নৌকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি মানুষ যাচ্ছিল। দুর্ঘটনায় পড়া নৌকায় ধারণক্ষমতার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী ওঠায় এবং মাঝনদীতে নৌকাডুবির কারণে মৃত্যু এত বেশি হয়েছে বলে মনে করছে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

এত গেল পঞ্চগড়ের বোদার ঘটনা। বাংলাদেশে ভূরি ভূরি লঞ্চ বা স্টিমার দুর্ঘটনা ঘটে অসম প্রতিযোগিতা করে লঞ্চ চালানোর কারণে। আর এসকল লঞ্চে কখনো থাকে অভিজ্ঞ আবার কখনো অনভিজ্ঞ চালকগণ। যাদের কাছে লঞ্চ, নৌকা কিংবা স্টিমারে থাকা মানুষের জানমালের চেয়ে প্রতিযোগিতাটাই বড় হয়ে দাঁড়ায়। এছাড়া যেখানে নদী বন্দরের এইসব চালক থেকে শুরু করে মালিক পক্ষের আবহাওয়া বার্তা পড়া বা শোনা বাধ্যতামূলক, তার তোয়াক্কা তো তারা করেই না। আর এসবের খেসারত দিতে হয় অনেকগুলো মৃত্যু দিয়ে, অনেক গুলো পরিবারের দুঃস্বপ্ন দিয়ে।

এখন তো নৌকাডুবি কিংবা ট্রলার লঞ্চ ডুবি খুব স্বাভাবিক ব্যপার হয়ে দাঁড়িয়েছে । মাসে  একটা দুটো  এমন দুর্ঘটনা ঘটে, মাঠ গরম হয়, তদন্ত কমিটি গঠন হয়, লাশ নিয়ে ছোটাছুটি শুরু হয়। কেউবা আবার ক্ষতিপূরনের টাকা নিয়ে দৌড়ায়। কিন্তু কিছুদিন যেতে না যেতেই পরিস্থিতি ঠান্ডা 
 হয় এবং একই ঘটনার পূনরাবৃত্তি। কিন্তু এইসব দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়া, সচেতনতা তৈরি হওয়ার কোন লক্ষন কোথাও দেখা যায় না। ক্ষতিপূরণের টাকা সরকার থেকে দেয়া হলেও সেগুলো কার পকেটে যায় তারও আর কোন খবর থাকে না।

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ, এদেশের পণ্য ও যাত্রী পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম নদীপথ। কিন্তু আমাদের অসেচতনতার অভাবে প্রতিনিয়ত প্রাণ হারাচ্ছে অনেক মানুষ। নদীপথ নিরাপদ করতে যেমন সরকারি ভাবেও উদ্যোগ নিতে হবে, তেমনি আমাদেরকেও সচেতন হতে হবে। আমরা সচেতন হলেই বাঁচবে দেশ, কমবে দুর্ঘটনা, বাঁচবে প্রাণ।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭