ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

দল না সুশীলদের সমর্থন করে যুক্তরাষ্ট্র?


প্রকাশ: 29/09/2022


Thumbnail

বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস অত্যন্ত ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। ঢাকায় দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে তিনি দম ফেলার সময় পাচ্ছেন না। কখনো যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনে, কখনো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করছেন, কখনো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন মধ্যহ্নভোজ কিংবা নৈশভোজে। আর এ সমস্ত আলাপ আলোচনায় তিনি বারবার বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলছেন। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে আমেরিকান চেম্বার অফ কমার্স বাংলাদেশ আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে পিটার ডি হাস বলেন, বাংলাদেশে কোন বিশেষ রাজনৈতিক দলকে তিনি সমর্থন করেন না। তিনি চান বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণ অবাধ সুষ্ঠু হোক। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশে আসার পর থেকেই আগামী নির্বাচন নিয়ে এ ধরনের বিভিন্ন রকম কথাবার্তা বলছেন। নির্বাচন হতে এখনো দেড় বছর বাকি। এত আগে থেকে রাষ্ট্রদূত কেন নির্বাচন চিন্তিত সেই প্রশ্ন অনেকের মধ্যেই দানা বেঁধে উঠছে। গতকাল তিনি সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন কোন রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করেন না। তাহলে তিনি কি করেন? বাংলাদেশের নির্বাচন করবে রাজনৈতিক দলগুলো, অন্য কেউ নয়। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে সুশীল সমাজের মধ্যে এক ধরনের আহাজারি এবং আর্তনাদ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুশীল সমাজ আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না, ইভিএম ব্যবহার করলে নির্বাচনে কারচুপি হবে ইত্যাদি নানা ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসছে। আর এই প্রেক্ষিতে কোনো কোনো মহল মনে করছে ২০০৭ সালের মতো একটি নীলনকশা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের সুশীল সমাজ কাজ করছে। আর এখন পিটার ডি হাসের বক্তব্যের পর অনেকে মনে করছে যে, সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যুক্ত কিনা?

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশ সেনাসমর্থিত একটি অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতা দখল করেছিল। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান করা হয়েছিল ড. ফখরুদ্দিন আহমেদকে। সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন প্রক্রিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি বড় ভূমিকা ছিল। বিরাজনীতিকরণকে বাস্তবায়ন করার জন্য এবং দুই নেত্রীকে মাইনাস করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয়েছিল। পরবর্তীতে তা স্পষ্ট হয়েছে। আর সে কারণেই বিভিন্ন মহল থেকে বলা হচ্ছে আবার সেই রকম একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাচ্ছে। বিএনপিকে রাজপথে নামিয়ে এবং আওয়ামী লীগের একটি মহলকে উস্কানি দিয়ে দেশে একটি সহিংস এবং উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি তৈরি নীরব চেষ্টা চলছে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে বেশ আলোচনা হচ্ছে। আর সেই আলোচনার থেকেই অনেকে মনে করছেন যে, বাংলাদেশে আবার একটি বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের নীরব খেলা চলছে। সেই খেলায় যুক্তরাষ্ট্র কোন অংশ কিনা সেটিও ভেবে দেখার বিষয়।

মার্কিন রাষ্ট্রদূত সাম্প্রতিক সময়ে যে বিভিন্ন আলাপ-আলোচনাগুলো করছেন তার একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে। আর সুশীল সমাজের শিরোমণি ড. ইউনূসের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের কথা সর্বজনবিদিত। মার্কিন রাষ্ট্রদূত কয়েকদিন আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের ছুটে গিয়েছিল। দুর্নীতি দমন কমিশন এখন ড. ইউনূস নিয়ন্ত্রিত গ্রামীণ টেলিকমের ৩ হাজার কোটি টাকা অর্থ পাচারের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। নির্বাচন শেষ পর্যন্ত যদি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় এবং রাজনৈতিক দলগুলোর যদি ক্ষমতায় আসে তাহলে বাংলাদেশে সুশীল কর্তৃত্ব তো আরও কোণঠাসা হয়ে করবে এবং সুশীল সমাজের ভূমিকাও একটা ক্ষীণ হয়ে যাবে। সেই বাস্তবতায় সুশীল সমাজকে পাদপ্রদীপে আনার জন্য আর আরেকটি অরাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আনার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র অংশীজন কিনা সেটি এখন বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন? কারণ যে কোন বিচারেই সুশীলদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ভালো এবং বাংলাদেশের সুশীল সমাজের একটি বড় অংশও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ওপর নানাভাবে নির্ভরশীল। এই কারণেই প্রশ্ন উঠেছে যে, শেষপর্যন্ত কি তাহলে সুশীলদের রাজত্ব কায়েম করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭