ইনসাইড পলিটিক্স

‘রিজার্ভ কি বোঝ?’ রিজভীকে মঈন খানের ভর্ৎসনা


প্রকাশ: 29/09/2022


Thumbnail

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। তিনি মাঝে মাঝেই কূটনৈতিকদের তার বাসায় আমন্ত্রণ জানান, সেখানে আড্ডা হয়, নানা বিষয়ে কথাবার্তা হয়, নৈশভোজ এবং পানীয়তে আপ্যায়িত করেন কূটনৈতিকদের। এরকমই একটি আড্ডায় বিশ্বব্যাংকের একজন প্রতিনিধি ড. মঈন খানের কাছে জানতে চাইলেন, হু ইজ রিজভী? মঈন খান একটু বিস্মিত হলেন। তিনি বললেন কি হয়েছে? জবাবে বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি বললেন যে, বিএনপির এই নেতার বক্তব্যে বিশ্বব্যাংক হতবাক হয়ে গেছে। মঈন খান কি বক্তব্য দিয়েছেন তা জানতে চাইলে দাতা সংস্থার ওই প্রতিনিধি বলেন, রুহুল কবির রিজভী বলেছেন যে বাংলাদেশের রিজার্ভ এখন সর্বকালের সবচেয়ে তলানিতে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন যে, একটি বিরোধী দল যে ক্ষমতায় আসতে চায় তার বক্তব্য অবশ্যই দায়িত্বশীল হওয়া উচিৎ। রিজার্ভ নিয়ে জ্ঞান না থাকলে  তার এই সব বিষয় নিয়ে কথা বলা উচিৎ না। দাতা সংস্থার ওই প্রতিনিধি ড. মঈন খানকে বলেন, অর্থনৈতিক এসব বিষয় নিয়ে যেকোনো ব্যক্তি কথা বলার চেয়ে ড. খানই যেন কথা বলন। ড. খান এই ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন এবং পরদিন তিনি রুহুল কবির রিজভীকে ফোন করেন। তিনি রুহুল কবির রিজভীর কাছে জানতে চান, রিজার্ভ নিয়ে তিনি কি বলেছেন? যথারীতি রিজভী তাকে জানান যে, এখন বর্তমানে রিজার্ভ সর্বকালের সবচেয়ে নিম্ন। এসময় স্বল্পভাষী মঈন খান ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তিনি রিজভীকে বলেন রিজার্ভের তুমি কি বোঝ, অর্থনীতির কিছু বোঝ? এরপর তিনি রিজার্ভ সম্পর্কে রুহুল কবির রিজভীকে কিছু জ্ঞান দেন।

বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, ১৯৮১-৮২ অর্থবছরের আগে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভের মজুদের কোন ব্যবস্থাই ছিল না। প্রথম ওই অর্থবছরের শেষে অর্থের পরিমাণ ১২ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার ছিল। এর ৫ বছর পর ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরের শেষে রিজার্ভ বেড়ে দাঁড়ায় ৭১ কোটি  ৫০ লাখ মার্কিন ডলার। ১৯৯১-৯২ অর্থবছর শেষে  রিজার্ভ ১ বিলিয়ন দলার অতিক্রম করে। ১ দশমিক ৬০ বিলিয়ন ডলার সে সময় রিজার্ভ হয়েছিল। ১৯৯২-৯৩ অর্থবছর শেষে রিজার্ভ ২ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ২ দশমিক ২১ বিলিয়ন ডলার দাঁড়ায়। ১৯৯৪-৯৫ অর্থবছরের শেষে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ৯৫-৯৬ অর্থবছর শেষে তা কমে ২ বিলিয়ন ডলারে কমে আসে। ৯৭-৯৮ অর্থবছরে তা আরও কমে ১দশমিক  ৭১ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। এরপর ১৯৯৭-১৯৯৮ থেকে ১৯৯৯-২০০০ পর্যন্ত রিজার্ভ দেড় থেকে ২ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে ওঠানামা করে। ২০০০-২০০১ সালে রিজার্ভ কমে ১ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি নেমে এসেছিল। জামাত-বিএনপির শাসনামলের শেষ দিকে বাংলাদেশের রিজার্ভ ৫ বিলিয়ন ডলার ছিল। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১০ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায় এবং ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১৫ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করায়। ২০১৪ সালের ১০ই এপ্রিল রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করে। পরের বছর ১৫ সালের  ২৫ জানুয়ারি রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়। আর ২০১৬ সালের জুনে রিজার্ভ ৩০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করে। ২০২০ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়ায় ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।  ১ বছর পর ২০২১ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রিজার্ভ দাঁড়ায়  ৪৮ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অর্থাৎ বাংলাদেশের রিজার্ভ আওয়ামী লীগ সরকারের আগে কখনই ১০ বিলিয়ন ডলার অতিক্রম করেনি। তারপরেও রিজভী যে এই বক্তব্য দিয়েছেন তা অজ্ঞতাপ্রসূত। কিন্তু এই বক্তব্য জনগণকে বিভ্রান্ত করলেও আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা এবং কূটনৈতিকদের বিস্মিত করেছে। এ কারণেই মঈন খান খেপেছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭