ইনসাইড পলিটিক্স

জামায়াত নিয়ে দুই অবস্থানে বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 29/09/2022


Thumbnail

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত একটি রহস্যময় অধ্যায় হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জামায়াতের ভূমিকা কি, জামায়াত কি বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করেছে, জামায়াতকে কি সরকার এখন ব্যবহার করছে বা জামায়াত আগামী নির্বাচনে কি করবে ইত্যাদি প্রশ্ন এখন রাজনীতির অঙ্গনে ঘুরপাক করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, জামায়াত যতই নেতৃত্বশূন্য থাক না কেন জামায়াতের একটি নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক রয়েছেন। ৩ থেকে ৫ শতাংশ জামায়াতের ভোট পড়েছে বলে নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন। আর এই ভোট যেকোনো দলের পক্ষে-বিপক্ষে বড় ধরনের ভূমিকা রাখতে পারে। ১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে, জামায়াত এবং জাতীয় পার্টি প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল জামায়াতের সমর্থন নিয়ে। ২০০১ সালেও জামায়াত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় এসেছিল। অন্যদিকে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জামায়াত আলাদা হয়ে নির্বাচন করার কারণেই বিএনপি পরাজিত হয়েছিল বলে কোন কোন নির্বাচন বিশ্লেষক মনে করেন। অবশ্য ২০০৮ সালের নির্বাচন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে। সেই সময় আওয়ামী লীগের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছিল।

এবার ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াত আর বিএনপি'র সখ্যতা ছিল। ওই নির্বাচনে বিএনপি জামায়াতকে ২০টি আসন ছেড়ে দিয়ে সকলকে বিস্মিত করেছিলো। কিন্তু ওই নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপি এবং জামায়াতের সম্পর্কের টানাপোড়েনের খবর শোনা যায়। অবশ্য কোনো কোনো মহল মনে করে, বিএনপি ও জামায়াতের সম্পর্ক আগের মতই আছে তবে তা গোপনে। যেহেতু জামায়াতের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক চাপে রয়েছে এবং দেশের জনগণের মধ্যেও এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে সেই জন্য জামায়াতের সঙ্গে প্রকাশ্য সম্পর্ক করতে বিএনপি এখন ভয় পায়। আর এ কারণেই ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে এখন পর্যন্ত ২০ দল বিলুপ্ত হয়নি এবং বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের সম্পর্ক কি, এনিয়ে বিএনপির কোনো নেতাও বক্তব্য রাখেনি। যদিও জামায়াতের নেতা সাম্প্রতিক সময়ে বক্তব্যে বলেছেন যে, বিএনপির সঙ্গে তাদের এখন সম্পর্ক নেই। কিন্তু এ সমস্ত নানামুখী কথাবার্তার পরও বিএনপি এবং জামায়াতের যে একটি গোপন সম্পর্ক রয়েছে এটা অনেকেই বিশ্বাস করেন। আর বিএনপির নেতৃত্বে একটি বড় অংশই মনে করেন যে, রাজনৈতিক মেরুকরণে জামায়াতকে বাদ দিলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই জামায়াতের ব্যাপারটিকে বিএনপি নেতারা স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে মনে করে। শেষ পর্যন্ত আগামী নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করে তাহলে সেখানে জামায়াতকে তাদের লাগবে। আর এই বিবেচনা থেকে জামায়াতকে কাছে টানার জন্য এখন নতুন করে নানা কলা-কৌশল গ্রহণ করছে বিএনপি। বিশেষ করে লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া জামায়াতের সঙ্গে নিজেই যোগাযোগ করছেন বলে জানা গেছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য জামায়াতকে নিয়ে এক ধরনের বক্তব্য দেওয়ার পর এটি জামায়াতের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। এরপর তারেক জিয়া নিজেই এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেন এবং জামায়াতের নেতৃবৃন্দকে আশ্বস্ত করেন যে, বিএনপি এবং জামায়াত এক সঙ্গে আছে, থাকবে।

বিএনপি যাই বলুক না কেন জামায়াতের মধ্যে বিএনপিকে নিয়ে এখন নানা রকম অস্বস্তি, আপত্তি রয়েছে। জামায়াত এখন স্বতন্ত্র অবস্থান থেকে ইসলামী দলগুলোকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি চায় জামায়াতকে কাছে টানতে। জামায়াতকে নিয়ে আওয়ামী লীগের ভূমিকা কি? আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা বলেছেন, জামায়াত নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। জামায়াত স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি এবং যুদ্ধাপরাধীদের দল। জামায়াত রাজনীতি করুক এটিই আওয়ামী লীগ চায়না। স্বাধীন দেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির রাজনীতি করার অধিকার নেই বলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা মনে করেন। কিন্তু কৌশলগত কারণে জামায়াতকে রাজনীতির মাঠে রাখতে চায়। বিশেষ করে বিএনপি এবং জামায়াতের বিভক্তি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে শক্তি যোগাবে বলেই আওয়ামী লীগ মনে করে। সেজন্য বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের দূরত্ব হোক এটি আওয়ামী লীগ চায়। তবে আওয়ামী লীগ জামায়াত ইস্যুতে কোনভাবেই ক্রিয়াশীল হতে চায় না এবং এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপও গ্রহণ করতে চায় না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭