ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কি চমক দেবেন?


প্রকাশ: 29/09/2022


Thumbnail

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী এখন ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। সেখানে তিনি ভয়েস অব আমেরিকার কাছে গতকাল একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। ভয়েজ অব আমেরিকার বাংলা বিভাগের প্রধান শতরূপা বড়ুয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আগামী নির্বাচন হবে অবাধ নিরপেক্ষ। সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা নেবে নির্বাচন কমিশন। প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে দৃঢ়তা ছিল এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে যে জটিলতা শঙ্কাগুলো বিভিন্ন মহল থেকে উচ্চারিত হচ্ছে তা তিনি নাকচ করে দিয়েছেন। টানা তিন মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। প্রতিটি নির্বাচনের আগেই দেখা গেছে প্রধানমন্ত্রী বেশকিছু চমক দেখিয়েছেন এবং এই চমকগুলো রাজনীতির অঙ্গনে তার দূরদর্শিতা এবং বিচক্ষনতার প্রমাণ বহন করে। আগামী নির্বাচন নিয়ে যে অচল অবস্থা এবং সংকট তৈরি হয়েছে, অনেকেই মনে করেন যে প্রধানমন্ত্রী সে সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবেন। আর তারই একটি ইঙ্গিত তিনি ভয়েজ অব আমেরিকার সাক্ষাৎকারে দিয়েছেন।

প্রশ্ন হলো, আগামী নির্বাচনে তিনি কি চমক আনবেন? ২০০৮ সালের নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতির একটা বড় ভূমিকা ছিল। এজন্য তিনি জেল, জুলুম, নির্যাতন ভোগ করেছিলেন। এক-এগারোর নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর একটি বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিলেন। এই বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের জন্যই নির্বাচনকে দূরে ঠেলে রাখা হয়েছিলো, রাজনৈতিক নেতাদের চরিত্র হনন, তাদেরকে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য করে দীর্ঘদিন ধরে সুশীলদের একটি রাজত্ব কায়েম করার প্রক্রিয়ার বাস্তবায়নের চেষ্টা হয়েছিল সেই সময়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার জন্য সেই প্রক্রিয়া বাস্তবায়িত হতে পারেনি। বরং তিনি প্রথম থেকেই দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি করে জনগণকে সংগঠিত করে শেষ পর্যন্ত জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপে মইন উ আহমেদ এবং ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে একটি নির্বাচন দিতে বাধ্য করেছেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুলের বিজয় হয় এবং এক ধরনের গণজোয়ার সৃষ্টি হয়।

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বন্ধ করে দেয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ের প্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ সংবিধান সংশোধন করে। ২০১৩ সাল থেকেই বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয় যে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেই সময়ে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন করার ব্যাপারে অনড় ছিলেন। তবে নির্বাচনের আগে তিনি বেশকিছু চমক দেখান। তিনি সরকার এবং বিরোধী দলের সমন্বয়ে একটি নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন। সেই সময় তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ আরও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় বিএনপিকে দেয়ার প্রস্তাব করেছিলেন। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে তিনি চায়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর এই একের পর এক উদ্যোগ বিএনপি প্রত্যাখ্যান করে। এর ফলে যেটি লাভ হয়, ২০১৪ সালে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও ওই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি পায় এবং প্রায় অর্ধেক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার পরও ওই সংসদ পূর্ণ মেয়াদ অতিক্রম করে।

২০১৮ সালে প্রধানমন্ত্রী আরেকটি চমক দেখান। ওই নির্বাচনে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি ফেলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। এসময় বিএনপির পক্ষ থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। তখন জাতীয় নেতা ড. কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করতে চান বলে ঘোষণা করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ড. কামালের এই প্রস্তাবকে লুফে নেন। অনেকে মনে করেছিলেন, শেখ হাসিনা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করবেন, এমনকি আওয়ামী লীগের নেতারাও বলেছিলেন যে কিসের আলোচনা। কিন্তু শেখ হাসিনা এই সংলাপের সম্মতি জানিয়ে রাজনীতিতে একটি নতুন চমক সৃষ্টি করেন। সবগুলো বিরোধী দলের সাথে লাগাতার বৈঠকের পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুলভাবে বিজয়ী হয়। কিন্তু ওই নির্বাচন নিয়ে অনেক রকম সমালোচনা এবং বিএনপির পক্ষ থেকে ওই নির্বাচনের পর থেকে বলা হয় যে, বর্তমান সরকারের অধীনে তারা আর কোনো নির্বাচনে যাবে না। এবার নির্বাচন নিয়েও বিএনপি একই অবস্থানে আছে। এরকম পরিস্থিতিতে আগামী নির্বাচন কিভাবে হবে? সব দল কি অংশগ্রহণ করবে? বিএনপি নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত যাবে কি যাবে না ইত্যাদি নানা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে, এমনটি মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর বা নির্বাচনের আগে আগে নির্বাচন নিয়ে হয়তো বড় ধরনের চমক দেবেন। প্রশ্ন হলো, কি চমক তিনি দেবেন?


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭