ইনসাইড বাংলাদেশ

১০ দেশের কূটনীতিকদের সাথে ইউনূসের বৈঠক: কি আলোচনা হলো?


প্রকাশ: 30/09/2022


Thumbnail

গতকাল বৃহস্পতিবার মার্কিন দূতাবাসে দশটি দেশের কূটনীতিকদের সাথে চা চক্রে মিলিত হয়েছিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে ড. ইউনূস মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে এসেছিলেন। অন্যান্য দেশের কূটনীতিকরাও সেখানে আমন্ত্রিত ছিলেন। মূলত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সামাজিক ব্যবসা এবং বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে তিনি ব্রিফ করেছেন। কিন্তু বৈঠকের একাধিক সূত্র জানিয়েছে যে, সামাজিক ব্যবসা নয় বরং ড. মুহাম্মদ ইউনুস তার ওপর সরকার যে ধরনের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করছে এবং সরকারের বিভিন্ন সমালোচনা মূলক বক্তব্যের ঢালি নিয়েই উপস্থিত হয়েছিলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী এই অর্থনীতিবিদ।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে একটি তদন্ত চলছে, দুর্নীতি দমন কমিশন এই তদন্তটি করছে। আর এর প্রেক্ষাপটে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসও ছুটে গিয়েছিলেন দুর্নীতি দমন কমিশনে ইউনূসের এই মামলার খোঁজখবর নিতে। এরকম প্রেক্ষাপটেই গতকাল মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বাসভবনে কূটনীতিকদের সাথে চা চক্রে মিলিত হন ড. মুহাম্মদ ইউনুস। এই চা চক্রে যে সমস্ত দেশের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে আছে- যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি এবং আরও কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা। তবে এটি ছিল একেবারেই অনানুষ্ঠানিক বৈঠক বলে জানা গেছে। একাধিক কূটনৈতিকরা বলছেন, এটি ছিল একটি নিছক একটি গেট টুগেদার, যেখানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা ভাবে আলোচনা হয়েছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন তার সামাজিক ব্যবসা উদ্যোগকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে দিচ্ছেন। বিশ্বে যে অর্থনৈতিক সংকট সেই অর্থনৈতিক সংকটে সামাজিক ব্যবসা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে কূটনৈতিকরা মনে করেন। এ জন্যই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছ থেকে কিছু ধারনা নিয়েছেন এবং ভবিষ্যতে তিনি কি ধরনের উদ্যোগ নেবেন সে সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

এরকম বক্তব্যের বিপরীতে বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কূটনীতিকের সাথে আলাপ-আলোচনা করে জানা গেছে যে, বৈঠকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংক, গ্রামীণ ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা এবং সরকার তার ভাষায় তার ওপর যে অন্যায় করছে সে ব্যাপারে তিনি কূটনীতিকদের কাছে বিশদ ব্যাখ্যা করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গ্রামীণ টেলিকমের কার্যক্রম নিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস দীর্ঘ ব্যাখ্যা দিয়েছেন, গ্রামীণ ব্যাংক নিয়ে তার পরিকল্পনা কিভাবে নষ্ট সে সম্পর্কে তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন এবং বর্তমান সরকার তার বিরুদ্ধে যে অপপ্রচার করছেন সে সম্পর্কেও তিনি ব্যাখ্যা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। অন্য একটি সূত্র বলেছে, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কেও আলোচনা হয়েছে। তবে অন্তত দু'জন কূটনীতিক এই রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা অস্বীকার করেছেন। তারা বলেছেন যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস কখনোই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী নয়। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন কোয়ার্ডের সকল সদস্যের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই আলাপচারিতা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন গুঞ্জন শুরু হয়েছে।

সাম্প্রতিক সময়ে সুশীল সমাজ সরকারের প্রতি সোচ্চার হয়েছে এবং রাজনীতিতে আবারও বিরাজনীতিকরণ প্রক্রিয়া চালু করার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিএনপিকে মাঠে নামে রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থির করার যে নীলনকশা, সেই নীলনকশা বাস্তবায়নের জন্যই ড. মুহাম্মদ ইউনূস কূটনীতিকদের সাথে চা চক্রে মিলিত হলেন কিনা, সে নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। অনেকেই মনে করছেন যে, বর্তমান সময়ে বাংলাদেশে যা কিছু ঘটছে তার নেপথ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এখন এই বৈঠকের ফলে কোয়াডভূক্ত দেশগুলো নতুন কি ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, সেটি নিয়েও কেউ কেউ প্রশ্ন করেছেন। তবে একাধিক সূত্র বলছে যে, এই বৈঠকে ভারতের কূটনীতিক উপস্থিত ছিলেন না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭